হারিয়ে যাওয়া সেই তনিকা

তনিকা বড় হয়েছে কনজারভেটিভ ফ্যামিলিতে। কনজারভেটিভ ফ্যামিলিতে অনেক কিছু করা জায়েজ থাকলেও প্রেম করা জায়েজ নেই। অমি নামক ছেলেটির প্রেমে পড়তে চায় নি সে। ফ্যামিলি কি বলবে, বান্ধুবীরা কি মনে করবে, কেউ দেখে ফেললে কি হবে, এমন কত শত চিন্তা মাথায় কাজ করত। তারপর ও কিভাবে না কিভাবে যেন কি হয়ে যায়।

পদ্মার কাছা কাছি অসাধারণ একটা বাড়িতে থাকে তারা।বাড়ির সামনে একটি ফুলের বাগান। মাঝখান দিয়ে রাস্তা, তারপর গেট। গেটের পরই রাস্তা। এরপর পদ্মার পাড় বা বাঁধ। শীত কালে একটু ঠান্ডা বেশি হলেও গরম কালে এই পদ্মার পাড়ে একটু হাঁটলেই মনটা জুড়িয়ে যায়। কোন এক দিন এই পদ্মার পাড়েই অমির সাথে দেখা হয়। এরপর পরিচয়।

প্রথম প্রথম শুধু হাই হ্যালো কথা হত। কথা বলতে ভালোই লাগত। আর কথা না বলতে পারলে খারাপ লাগত, অনেক বেশি। বিকেলে প্রায় সময়ই পদ্মার পাড়ে হাঁটত তারা। এক সময় বাসায় জানা জানি হয়। তনিকাকে সবাই বকা বকি করতে লাগে।তার কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তাকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয় না। সব ধরনের "না" তার উপর প্রয়োগ করা হয়।

মাঝে মাঝে অনেক চেষ্টা করে কোন না কোন ভাবে অমির সাথে দেখা করতে বের হয়ে যেতো। অমিকে বিশ্বাস করত। অমির জন্য তার ফ্যামিলি ছাড়তেও রাজি ছিল। এক সময় অমি তনিকার সাথে প্রতারণা করে। তনিকা বুঝতে পারে তাদের প্রেম ছিল না, ছিল অমির স্বার্থ।

নিজেকে অনেক অপবিত্র মনে হতে লাগল।চিৎকার দিয়ে কানতে ইচ্ছে করতে লাগল। সব কিছু ধংশ করে ফেলতে ইচ্ছে করতে লাগল। কিন্তু কিছু করতে পারে নি। তনিকা নিজেকে বন্ধী করে ফেলে। চার দেয়ালের মধ্যে। আগে যেখানে তাকে ঘরে বন্ধী করে রাখা হত, এখন সে নিজেকেই নিজে বন্ধী করে ফেলে।

চঞ্চল মেয়েটিকে আর কিছুই আকর্ষন করে না।পৃথিবীটা তার কাছে বিশ্রি লাগে। ভয়ঙ্কর লাগে।ভালো লাগে না বিকেলের পদ্মার পাড়, সূর্যাস্ত, বক পাখি গুলোর উড়ে যাওয়া। না না, পাখি গুলোর উড়ে যাওয়া এখনো ভালো লাগে। কারণ সে এখন পাখি হয়ে উড়ে যেতে চায়। দূরে, অনেক অনেক দূরে।



সানরাইজ আবাসিক প্রকল্পের পাশে আমিন সাহেবের একটি জমি রয়েছে। আশে পাশের সবার জমিই কোন না কোন ভাবে সানরাইজ আবাসিক প্রকল্প কিনে ফেলছে। শুধু মাত্র আমিন সাহেবে তার জমি বিক্রি করতে চাচ্ছে না। ছোট খাটো একটা চাকরি করে, তাদের চলে যায়। বাবার আমলের জমি, তাই বিক্রি করতে চাচ্ছে না। সানরাইজ আবাসিক প্রকল্প অনেক শক্তিশালী একটা গ্রুপ জেনেও তাদের কোন প্রেসারই আমলে নেয় নি। তাদের নামে অনেক ভয়ঙ্কর গল্প শুনেও আমিন সাহেব ভয় পায় নি।

অফিশিয়াল কাজে চট্রগ্রাম আসতে হয়েছে তাকে। উঠেছে প্যারাডাইজ নামক একটি হোটেলে। রাতটি কাটিয়েই সকালে অফিসের কাজে বের হয়ে পড়বে।


তনিকার বাবার অফিশিয়াল কাজে চট্রগ্রাম যেতে হবে। মেয়ের খারাপ অবস্থা তার কাছে ভালো লাগছে না। কোথাও থেকে ঘুরে আসলে ভালো লাগবে চিন্তা করে চট্রগ্রাম আসতে তনিকাকেও নিয়ে আসল। অফিশের কাজ শেষে সুযোগ হলে কক্সবাজার ও নিয়ে যাবে বলছে। তনিকা রাজি হয় নি আসতে, তারপর ও জোর করে নিয়ে আসল। উঠল প্যারাডাইজ নামক হোটেলে। কো-ইন্সিডেন্টলি আমিন সাহেবের পাশের রুমেই।

সানরাইজ গ্রুপ একটি সুযোগ পেয়েছে। সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে।

দুপুর রাতের দিকে প্যারাডাইজ হোটেলে একটি বোমা বিস্ফোরন হয়। যেখানে আমিন সাহেব সাথে সাথেই মারা যায়। তনিকা আর তনিকার বাবা প্রচন্ড আহত হয়। হাসপাতাল নিয়ে গেলে তনিকার বাবার জ্ঞান ফেরে। তনিকাকে অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায় না। সে উড়ে যায়, কোন একটা পাখি হয়ে। এই বিশ্রি পৃথিবী ছেড়ে।
রেসিপি দেখুন