রায়হান সাহেব বাড়ি যাচ্ছে।

রায়হান সাহেব বাড়ি যাচ্ছে। সাথে তার দুই ছেলে ইভান, অয়ন এবং তাদের মা তানিশা। ইভান চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। অয়ন পঞ্চম শ্রেণীতে। ইভান তাদের স্কুলের ফটোগ্রাফি ক্লাবে যোগ দিয়েছে। আর যোগ দেওয়ার পর বাসায় এসে বাবার কাছে বলল ক্যামেরা কিনে দিতে হবে। রায়হান সাহেব ইভানকে একটা পয়েন্ট & স্যুট ক্যামেরা কিনে দিল।

ইভানের বয়সের ছেলেরা যা দেখে, তাতেই অবাক হয়। সব কিছুতে আগ্রহ, কৌতূহল। ফটোগ্রাফি ক্লাবে যুক্ত হওয়ার পর মনে হচ্ছে তার আগ্রহের পরিমাণ বেড়ে গেলো। যা কিছু দেখে, তাকেই অবজেক্ট ভেবে ছবি তোলে। বাড়ি যাওয়ার পুরো পথ হচ্ছে তার জন্য অবজেক্ট। ইভান এর আগে গ্রামে যায় নি। অয়ন ও না। কিন্তু অয়ন বয়স একটু বাড়ার সাথে সাথে গম্ভীর হয়ে গেলো। বড় ছেলে হলে হয়তো গম্ভীর হয়ে যেতে হয়। ইভান যেখানে দুষ্টু, অয়ন সেখানে শান্ত।

রাস্তায় নতুন যেটাই দেখে, সেটাই চিৎকার দিয়ে বলে। বাবা দেখো কি পাখিটা কি অদ্ভুত। বাবা দেখো কত গুলো মানুষ ট্রাকে করে যাচ্ছে। বাবা, এদিকের গাছ গুলো কত বিশাল বিশাল। বাবা দেখো, মাঠটা কত বিশাল। বাবা … বাবা… শহর ছেড়ে গ্রামের পথে ঢুকার পথে ইভানের চোখে পড়ল কত গুলো ছোট ছেলে মেয়ে পানিতে সাঁতার কাটছে। পানি বুক সমান, ঘোলা পানি। তারপর ও ঐ ছেলে মেয়েরা খুব আনন্দ নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে। ইভান রায়হনা সাহেব কে বলল, বাবা বাবা, এখানে একটু ঘাড়িটা থামাও না। এদের কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে আসি। তানিশা একটু না করলেও রায়হান সাহেব গাড়ি থামাল।

ইভান গিয়ে কয়েকটা ছবি তুলল। তারপর আরেকটা আবদার, বাবা, এদের সাথে পানিতে নামতে ইচ্ছে করছে। নামি?

রায়হান সাহেব বলল, তুমি সাঁতার পারো না, ডুবে যাবে। ইভান বলল, পানি অনেক কম, কিচ্ছু হবে না। রায়হান সাহেব আরেকটা অজুহাত দেখালো, বলল পানি গুলো অনেক ময়লা। অসুখ হবে। ইভান বলল ওদের তো কিচ্ছু হয় না, আমার ও হবে না। আর অল্প একটুর জন্য নামব। রায়হান সাহেব নিম রাজি হলো। তানিশা একটুও রাজি না। ছেলের আবদার রাখার জন্য রায়হান সাহেব তানিশাকে রাজি করালো। বলল একদিনের জন্যই তো।

গাড়িতে এসে জামা পরিবর্তন করে পানিতে নেমে ইভান ঐ ছেলে গুলোর সাথে মিশে গেলো। রায়হান সাহেব কয়েকটা ছবি তুলল ছেলের, সাথে গ্রামের ছেলে গুলো। কি মনে করে রায়হান সাহেব গাড়ির কাছে ফিরে এলো। নিজেও জামা কাপড় খুলে হালকা কিছু পরল। তানিশা বলল, এই তুমি কি করছ?

রায়হান সাহেব বলল, তেমন কিছু না। একটু পানিতে নামতে ইচ্ছে করছে। রায়হান সাহেব ও গিয়ে ঐ ছেলে গুলোর সাথে মিশে গেলো। তার উপর ছোট বেলার বাচ্ছামি এসে ভর করল। গিয়ে ইভানকে সাঁতার শেখানো শুরু করল। এভাবে সাঁতার কাটে। ঐভাবে না, এভাবে… অয়ন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। তারপর তানিশার কাছে এসে বলল আমিও একটু নামি? তানিশা বলল, না… অয়ন বলল একটু নামব, কিচ্ছু হবে না। তানিশা একটু রাগ দেখালো। যা ইচ্ছে কর। আমি জানি না।

অয়ন ও গাড়িতে ফিরে ব্যাক প্যাক থেকে জামা নিয়ে পরিবর্তন করে নেমে পড়ল। তানিশা কিছুক্ষণ গাড়িতে বসে বসে দেখল। এরপর নিজেও গাড়ি থেকে নামল। তারপর ক্যামেরাটা নিয়ে ছেলেদের ছবি তুলতে লাগল। আর ওদের উদ্দ্যেশ্যে বলে, এই এবার উঠে আসো। বাবা ছেলেরা তিনজনই এক সাথে বলে উঠে, আর একটু পরই উঠছি। ঐ একটু পর আর আসে না।

গ্রামের ছেলেরা মজা পেলো এতে। হাসা হাসি করতে লাগল। ওরা যে রায়হান সাহেব, ইভান আর অয়নকে নিয়ে হাসে, তা তারা গায়ে না মেখে তারাও হাসিতে যোগ দিল। রাস্তার দ্বারে একটি গাড়ি পার্ক করা। পাশে থাকা একটি ছোট কুয়াতে একটি বয়স্ক লোক আর কত গুলো ছেলে মজা করছে। পাড়ে দাঁড়িয়ে একটি মেয়ে ছবি তুলছে। সুন্দর একটা দৃশ্য। যে দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না।

Writer: Jakir Hossain
রেসিপি দেখুন