মা আমার শাশুড়ি
বিয়ের দিন আমার শাশুড়ি আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলেছিল -- "আমি কিন্তু তোকে তুই করে ডাকবো।"কথাটি শুনে আমার মেজাজ তিড়িক করে জ্বলে উঠেছিল। তু করে ডাকবো মানে? আমি কি কোহিনূর? আমাদের বাসায় যে মেয়ে কাজ করে তাকে আমরা তুই করে ডাকি। এই বুড়ী কি আমাকে পুত্রবধূর আড়ালে কামের ছেড়ি মনে করছে!! ইচ্ছে করছিল বলি -- তাহলে আমিও আপনাকে খালাম্মা বলে ডাকবো। কোহিনূর বাসায় মা'কে খালাম্মা ডাকে।
খুব বিরক্ত লাগছিল। ভালোমতো মহিলার দিকে তাকিয়েছি দেখলাম রংচঙে কাতান পড়েছে। ঠোঁটে গাড় লাল লিপস্টিক। ম্যাকের লিপস্টিক নাকি? যতদুর জানি শ্বশুর মশাই বিয়ের বছর দুয়েক আগেই রিটায়ারমেন্টে গিয়েছে, তাহলে ম্যাক লিপস্টিক কে কিনে দিল? নিশ্চয়ই ছেলে। ছেলের টাকায় পোদ্দারি!! এ তো ডেঞ্জেরাস মহিলা!!
.
আমার অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। আমার সম্মতি ছিল। বিয়ের আগে এই মহিলা আসেননি। উনার নাকি শরীর খারাপ ছিল। আগে যদি বিন্দুমাত্র টের পেতাম এমন মালিকা হামিরা টাইপ মহিলা আমার শাশুড়ি হতে যাচ্ছে , আমি রাজি হতাম না।
.
মনে মনে একটু সান্ত্বনা পাচ্ছিলাম আমার জামাইয়ের জন্য। বিয়ের আগে ক্যাফেতে একদিন আমাদের দেখা হয়েছে। দেখেই বুঝেছিলাম এই ছেলে আমার উপর দিওয়ানা। কালো ছেলেরা রূপবতী বউদের নেওটা হয়। কবুলের সাথে সাথে আমি আমার ভবিষ্যৎ কর্তব্য ঠিক করে ফেলেছিলাম। যেভাবেই হোক, আমাদের আলাদা হতে হবে। এই মহিলার সাথে এক ছাদের নিচে কোহিনূর হয়ে আমার থাকা সম্ভব না।
.
(২)
.
আমার বাসর ঘর খুব সুন্দর ছিল। সম্পূর্ণ ঘর বেলী ফুলে সাজানো । কিন্তু আমার মন বিক্ষিপ্ত। তুই তোকারি ইস্যুটা ভুলতে পারছিলাম না। আমি সোফায় বসে ছিলাম , এমন সময় মহিলার প্রবেশ।
.
--কিরে, বাসর ঘর সাজানো ঠিক আছে? আমি নিজ হাসতে সাজিয়েছি রে।
.
আহা , কি আহ্লাদ। সাজিয়েছি রে। কি টান। কামের ছেড়ির প্রতি এতো দরদ কেন বুড়ী?
(৩)
.
অনেক রাতে আমার কালো জামাই আমার সামনে এসে বসে। সে কাচুমুচু করছিল। মা এতো অশ্লীল ছেলে এতো লজ্জা পাচ্ছে কেন? অভিনয় নাকি ? মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। ভণিতা আমার সহ্য হয় না।
-- লুনা , তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।
- হুম
-- আমার মাকে তোমার কেমন লাগলো।
.
আমি অদৃশ্য হাতে কপাল চাপড়েছিলাম। বাসর রাতে যে ছেলে প্রথম কথা তার মা'কে নিয়ে বলতে পারে - তাকে মায়ের আঁচল থেকে খসিয়ে আনা আমার পক্ষে সম্ভব না, আমি বুঝে গিয়েছিলাম।
.
--লুনা, আমার মায়ের ক্যান্সার। ডাক্তার বলে দিয়েছে খুব বেশী হলে আর দেড় মাস। বিয়েটা তাই এতো জলদি। তোমাকে মায়ের খুব পছন্দ জানো। যেদিন প্রথম তোমার ছবি দেখলো আমাকে বলেছিল - নান্টু, আমার কিন্তু এই পরীর মত মেয়েকেই চাই রে।
.
কথাগুলো বলছিল , আর নান্টু নামের মায়ের আঁচলের সেই ছেলেটি অঝোরে কাঁদছিল। আমি স্তব্দ হয়ে বসে ছিলাম।
.
(৪)
.
ষোল বছর। অনেকটা সময়। মায়ের কবরের শিমুল গাছে এখন অনেক ফুল। কি টকটকে লাল রঙ ৷
.
- মা, তোমার পরীর মত মেয়ে তোমাকে খুব মিস করে। ওপাড়ে আমাকে এখনো তুই বলেই ডাকো তো?
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment