Header Ads

লাইলী আর মজনু

লাইলী আর মজনু ছিলো ক্লাসমেট। একই পাঠশালায় তারা পড়তো। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তাদের প্রেম। বেশ সঙ্গোপন প্রেম। কিন্তু প্রেম কি লুকিয়ে রাখা যায়?
প্রেম, বেনসন সিগারেটের গন্ধ আর সার্ফ এক্সেলে ধোয়া সাদা শার্টে লিপস্টিকের দাগ; কোনটাই লুকিয়ে রাখা যায় না। লাইলী মজনুর প্রেমও এক সময় তাদের বাবা মায়ের কাছে ধরা পড়ে গেল।
সব জেনে লাইলীর মা খুবই আতংকিত হয়ে পড়লেন। তিনি মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। বাড়ির চারিদিকে কড়া পাহাড়া বসালেন, যাতে মজনু কোনোভাবেই লাইলীর ত্রিসীমানায় আসতে না পারে। এভিটেক কোম্পানির সিসি ক্যামেরা বসালেন বাড়ির দেয়ালে। যাতে মজনু আসলেই কট খায়।
ওইদিকে, লাইলীর বিরহে মজনুর প্রায় অটিস্টিক হয়ে যাবার দশা। মনের দুঃখে সে মেন্টস খাওয়া শুরু করলো। অতিরিক্ত মেন্টস খাবার ফলে তার বুদ্ধির বাত্তি জ্বলে উঠলো। একটা উপায় বের করে ফেললো। দাঁড়ি গোফ লাগিয়ে অন্ধ ভিখারী সেজে লাইলীর বাড়িতে ভিক্ষা করতে গেলো। লাইলীকে এক পলক দেখে তার হৃদয় জুড়ালো। ঠিক যেভাবে স্যামসংয়ের এসিতে শরীর জুড়ায়।
কয়েকদিন পর মজনু আবারো অন্ধ ভিক্ষুক সাজলো। লাইলীর বাড়িতে গেলো। কিন্তু দিন তো সবসময় এক রকম যায় না। এবার সে ধরা পড়ে গেলো। লাইলী থাকে ডমইনো এপার্টমেন্টে। এখানকার সিকিউরিটি খুবই কড়া। দারোয়ান ইচ্ছেমতো মজুনকে পিটিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিলো।
আহত সিংহের মতো মজনু ফিরে এলো নিজ ডেরায়। শরীরের যন্ত্রণার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট দিচ্ছে মনের বেদনা। সে লাইলীকে ভুলে যাবার চেষ্টা করলো। কিন্তু প্রেম যে ফেভিকলের আঠা। চাইলেই কি ছোটানো যায়?
অন্তহীন বিরহে এক সময় মজনু পুরো পাগল হয়ে গেলো। সে বাড়ি ছেড়ে পালালো। অনেক দূরে। অচেনা শহরে, নাম না জানা বন্দরে ভ্যাগাবন্ডের মতো ঘুরে বেড়াতে লাগলো। বেশ কয়েক মাস পর, মজনুর বাবা ছেলেকে বরিশালের এক নির্জন চরে খুঁজে পেলেন। নির্জন চর হলেও এখানে গ্রামীন ফোনের নেটওয়ার্ক আছে। পুরো পাঁচ দাগ। যাই হোক, দীর্ঘদিন পর একমাত্র সন্তানকে দেখে মজনুর পিতা আবেগে অধীর হলেন। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, বাবা বাড়ি চল।
মজনু কিছুতেই বাড়ি ফিরবে না। যে বাড়িতে লাইলী নেই, সেখানে গিয়ে কি লাভ?
শেষমেষ মজনুর বাবা ছলনার আশ্রয় নিলেন। বললেন, বাড়িতে লাইলী এসেছে। তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
তখন মজনু উতলা হয়ে উঠলো। বাবা, এখনই আমি ঢাকা যাবো। চলো , ইউ বাংলা এয়ারলাইন্সের টিকেট কাটো।
বাবা বলল, ওরে পাগল। এত টাকা তো আমার নেই। তার চেয়ে গ্রীন লাইনের লঞ্চে ঢাকা ফিরি। এসি লঞ্চ। মাত্র ৫ ঘন্টায় বরিশাল থেকে ঢাকায় যাওয়া যায়।
বাড়িতে ঢোকার পর মজনু দেখলো, পুরোটাই ফাঁকি। লাইলী নেই। মজনু হাউমাউ করে কাঁদা শুরু করলো।
দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মজনু কাঁদছে তো কাঁদছেই। তার কান্না আর থামে না। অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখানো হলো। কান্না কিছুতেই থামে না। এপোলো হাসপাতালের ডাক্তাররা পর্যন্ত হার মানলেন। বললেন , সমস্যাটা মানসিক। কিছুই করার নেই।
মজনুর বাবা নিরুপায় হয়ে সেন্টারফ্রেশ খেলেন। আর তখনই তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।
তিনি তার ছেলেকে গিয়ে বললেন, বাবা, লাইলী তোর জন্য পায়ের ধুলা পাঠিয়েছে। হাত খুলে দেখালেন। সেখানে একমুঠো ধুলো। সেই ধুলো তিনি মাখিয়ে দিলেন মজনুর মুখে।
এরপর মজনু কান্না বন্ধ করে দিলো। কারণ কাঁদলে ধুলো মুছে যাবে। এই ধুলোটুকুই যে লাইলীর শেষ স্মৃতি। এ ধুলো কি মোছা যায়?

No comments