তুমি আসবে বলে তাই


ভালোবাসা অনেক উঁচু মানের একটা অনুভুতি । আসলে কাউকে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসা অনেক কঠিন কাজে । একটা ছেলে যখন একটা মেয়েকে ভালোবাসে বা একটা মেয়ে যখন একটা ছেলেকে ভালোবাসে ,
সে কখনোই তার ভালোবাসার মানুষটিকে আরেক জনের সাথে ভাগাভাগি করতে চাইবে না । সে চাইবে না যে তাদের মাঝে আর কেউ আসুক । যত নিরীহ ভাবেই হোক , অন্য কারো উপস্থিতি তাকে ঈর্ষাকাতর করে তোলে ।


অথচ ভালোবাসা তো এটা নয় । ভালোবাসা হল পবিত্র এক স্বর্গীয় অনুভূতি । ভালোবাসা যত বিলিয়ে দেয়া হয় তার পরিমান তত বাড়ে । যাকে ভালোবাসা হয় , তাকে ভালোবাসার মর্যাদাটুকু দেয়া উচিত্‍ । রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছিলেন , এ আমার সম্পত্তি নয় সম্পদ । তেমনি ভালোবাসার মানুষটিকে যদি নিজের সম্পত্তি মনে করা হয় তবে ভালোবাসার মূল্য কিছুমাত্র থাকে না ।

কিন্তু ব্যাক্তিজীবনে এমনটা হয় না । কারন প্রেমাসক্ত মানব মানবী মাত্রই একে অপরকে একান্তই নিজের করে পেতে চায় । তাই ভালোবাসার মাঝেই প্রতিনিয়ত ভালোবাসার অবমূল্যায়ন হয় ।


মানুষের জীবনে যে কয়টি সুখকর অনুভূতি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে আনন্দদায়ক হল ভালোবাসা । আর নিঃস্বার্থ ভাবে কেবল দেশকে ভালোবাসা সম্ভব । এখানে মানুষের মাঝে ক্ষুদ্র মনোভাব কাজ করে না । দেশকে আরেকজনের সাথে একসাথে ভালোবাসতে তার কখনো দ্বিধা বা সংকোচ কাজ করে না । দেশের প্রতি আরেকজনের ভালোবাসা দেখে সে কখনো ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠে না । কারণ দেশ কেবল এলোমেলো কিছু বক্ররেখায় আঁকা মানচিত্র নয় , একজন মানুষের কাছে তার দেশ হল তার সত্ত্বা । সে যে ধর্মের , বর্ণের , জাতের হোক না কেনো , স্বদেশের প্রতি তার আজন্ম লালিত ভালোবাসায় কখনো কমতি পরে না ।

দেশের প্রতি এই ভালোবাসাটা অনেক বেশি সুপ্ত । যখন কেউ বিদেশে যায় , দেশের জন্যে তার আকুতি সে ছাড়া আর কেউ বুঝে না । দেশের প্রতি ভালোবাসাটা বোঝা যায় খেলার সময় । দুই রানে হোক বা দুইশত রানে হোক , যে অশ্রুর ধারা তার তুই চোখ বেয়ে পরে এটা কেবল খেলায় হেরে যাওয়ার দুঃখ নয় । এটা যেনো নিজেকে হারিয়ে ফেলার বেদনা ।

একজন মানুষের শয়নে স্বপনে নিদ্রায় জাগরনে দেশের সাথে যে ভালোবাসার জাল একটু একটু করে গড়ে ওঠে , কোনো মরনশীল মানুষ সে বন্ধন ছিন্ন করতে পারে না । দেশকে ভালোবাসার তীব্র অনুভূতিটুকু যে কখনো অনুভব করতে পারে নি , তার মত দুর্ভাগা পৃথিবীতে নাই ।

আসলে স্বদেশ হল সকল যুগের সকল মানুষের ভালোবাসার উত্‍স । নবী মুহাম্মদ তার জন্মভূমিতে ফিরে আসার জন্যে যে প্রবল আবেগ আর আকুতি দেখিয়েছেন , তার জীবনের আর কোনো ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না । রামায়নের রাবন বা মহাভারতের দুর্যোধন , জার্মানীর হিটলার অথবা রাশিয়ার স্তালিন । মানুষ হিসেবে তারা যতটা ঘৃণিতই হোন না কেনো , দেশের প্রতি ভালোবাসার যে শুভ্র অনুভূতি তা তাদের সকলেরই ছিলো । দেশের প্রতি , দেশের মানুষের প্রতি যে স্বভাবজাত ভালোবাসা তা আজন্ম অস্বীকার করতে পারেনা মানুষ ।
রেসিপি দেখুন