ব্যর্থ মানুষের গল্প-৫
ঠাডা পরা কাকে বলে জানেন? শাহেদের মাথায় যেন বিদ্যুৎ চমক ছাড়াই ঠাডা পড়েছে। ঠাডা মানে বজ্রপাত। প্রথমে মনে হল সানজিদা দুষ্টামি করছে। কিন্তু সানজিদার সাথে শাহেদের দুষ্টামির সম্পর্ক নেই। এছাড়া সানজিদা সিরিয়াসলি কথা বলছে। শাহেদের মাথায় কিছু ঢুকছে না। শাহেদ কোন দিক দিয়ে অযোগ্য? অনেক কষ্টে বাবা মাকে রাজী করানো হয়েছে, এই মুহূর্তে এসে সানজিদা যদি ‘না’ করে তাহলে কী রকম হবে?শাহেদ জিজ্ঞেস করল “আমাকে কি জানানো যাবে কী কারণে এ বিয়েতে রাজী হচ্ছ না।”
সানজিদা উত্তর দিল “এই মুহূর্তে বিয়ে করলে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আমার ইচ্ছা ডাক্তার হওয়া।” সানজিদার উত্তরটা শাহেদের কাছে দুর্বল মনে হল।
“বিয়ে করেও তো লেখাপড়া করা যায়। অনেকেই তো করছে।”
শাহেদ সানজিদাকে অনেক বোঝাল কিন্তু সানজিদাকে কোন ভাবেই মানানো যাচ্ছিল না। শাহেদ বুঝল এই মেয়ে এক রোখা। ওকে বোঝানো যাবে না। ও নিজে যা বোঝে তাই করে ছাড়বে।
সানজিদা বলল “টিউশনির সময় হয়ে গেছে, আজ উঠি। আমি আপনার মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করবেন।” বলেই সানজিদা হাঁটা ধরল।
শাহেদ অসহায়ের মত সানজিদার পথের দিকে চেয়ে রইল, একবারও পেছন ফিরে তাকাল না। একবার যদি পেছন ফিরে শাহেদকে দেখত তাহলে শাহেদের মনে একটা ক্ষীণ আশা থাকত। বনানীর এই রেস্টুরেন্টে বসে শাহেদ অনেক ক্ষন ধরে কামাল আতাতুরক এভিনিউর দিকে তাকিয়ে রইল। মানুষের আসা যাওয়া লক্ষ্য করছে, বিশেষ করে মেয়েদের। এই এলাকায় কিছু অভিজাত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যার একটাতে শাহেদ শিক্ষকতা করে। এসব মেয়েদের উগ্র পোষাক দেখে কাম ভাব জাগে কিন্তু প্রেম ভাব জাগেনা। মন থেকে চায়না ওদের কাউকে বিয়ে করতে। দামী দামী পোষাকের আড়ালে অনেক নোংরা মনের মেয়ে এখানে পড়াশোনা করছে যাদের অনেকেরই গোপন ভিডিও ইন্টারনেট সার্চ করলে পাওয়া যাবে। এই মেয়েগুলোও সুন্দরী তবে তাদের তুলনায় সানজিদা অনেক অনেক গুণ সুন্দরী। এরকম একটা মেয়ে হাত ছাড়া হয়ে যাবে শাহেদ এটা ভাবতে পারছিল না।
চলো চলো শাহবাগ চলো! বাংলাদেশ স্বাধীন কর!!
শাহেদের কাছে এ এক নতুন আন্দোলন মনে হল-বাংলাদেশ থেকে রাজাকার মুক্ত করা। দু এক দিন আগে থেকেই শাহেদ ব্লগে ফেইসবুকে দেখছিল শাহবাগে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার যাবজ্জীবনের রায় নিয়ে কিছু তরুণের প্রতিবাদের ঝড়। তারা শাহবাগে এক এক করে জড়ো হতে শুরু করেছে। পুলিশ তাদের বাঁধা দিচ্ছে না। শাহেদদের ইউনিভার্সিটির কিছু ছাত্রও এতে যোগ দিবে। শাহেদ এসব কাজের মধ্যে নেই। রেস্টুরেন্টে বসে শাহেদ দেখল একদল ছাত্র যুদ্ধাপরাধ বিরোধী ব্যনার ফেস্টুন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, লক্ষ্য শাহবাগ। শাহেদ রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে ওদের দলে যোগ দিল। ও এখন যেকোন একটা কাজে মনযোগ দিতে চায়। মন থেকে সানজিদার চিন্তা ভাবনা দূরে রাখতে হবে। মিছিল কাকলী মোড়ে থামল। একটা ট্রাকের পিঠে মিছিলকারীরা চড়ল। ট্রাক এসে শাহবাগে পৌঁছুল। হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রীর ভীড়ে শাহবাগ প্রকম্পিত। শাহেদ ভাবতে পারেনি এখানে এত মানুষের ঢল। সেও সবার সাথে গলা মিলিয়ে শ্লোগান দিল ‘ক তে কাদের মোল্লা………………
শাহবাগ আন্দোলন আর যাই দিক না কেন শাহেদের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে দিচ্ছিল। সেটা হল শাহেদের মন থেকে সানজিদার চিন্তা দূরে রাখা। ক্লাস শেষ করে শাহেদ প্রতিদিন শাহবাগে যায়, অনেক রাতে ফিরে। সমস্যা হয় রাতের বেলায়। ছেলে মেয়েরা শাহবাগে এক সাথে রাত কাটায়, এটা শাহেদ কোন ভাবে মেনে নিতে পারছিল না। ছেলে মেয়েদের জন্য আলাদা তাবু আছে। তাবুগুলো কাছাকাছি। ছেলে মেয়েরা গভীর রাত পর্যন্ত দল বেঁধে গান গায়। এক জন আরেকজনের সাথে গায়ে গা মিলিয়ে গান গাইছে, হাসি ঠাট্টা করছে। একই প্লেটে ছেলে মেয়ে বিরানী খাচ্ছে। একজন আরেকজনকে খাইয়ে দিচ্ছে। এ যেন বাংলাদেশ না। মনে হয় ভারতের উন্নত কোন প্রদেশের দৃশ্য! হিন্দী সিনেমায় যা হরহামেশা দেখা যায়। প্রখর রোদের মধ্যে কিছু ছেলে মেয়ে একত্রে শ্লোগান দিচ্ছিল। রোদের তাপ থেকে বাঁচার জন্য এক মেয়ে তার ওড়না খুলে ছেলেগুলোর মাথায় ধরল, বুকটা পুরো খোলা। এসব দৃশ্য দেখলে শাহেদের সানজিদার কথা মনে পড়ে যেত।
চলবে.......