মরুর ফুল ৯
মদীনা থেকে বেরিয়ে গিয়ে বনু নযীর গোত্রের লোকেরা ইসলামের বিরুদ্ধে এক বিরাট ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো। তারা আশপাশের গোত্রগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তুললো। মক্কায় গিয়ে কুরাইশদেরকে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করলো এবং এই মর্মে প্রস্তাব দিলো যে, সবাই মিলে এক সংগে হামলা করলে এই নয়া আন্দোলনকে খুব সহজে ধ্বংস করে দেয়া যাবে। কুরাইশরা এরূপ প্রস্তাবের জন্যে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো। অবশেষে ইহুদী ও কুরাইশদের সমবায়ে প্রায় দশ হাজার লোকের এক বিরাট বাহিনী গঠিত হলো।হযরত (স) মদীনা আক্রমণের এই বিপুল আয়োজন সম্পর্কে সাহাবীদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। হযরত সালমান ফারেসীর (রা) পরামর্শ দিলেন যে, এতো বড়ো বাহিনীর সঙ্গে খোলা ময়দানে মুকাবিলা করা সমীচীন হবে না। আমাদের সৈন্যদেরকে মদীনার নিরাপদ স্থানেই থাকতে হবে এবং দুশমনরা যাতে সরাসরি হামলা করতে না পারে, সেজন্যে নগরীর চারদিকে পরিখা (খন্দক) খনন করতে হবে। এই অভিমতটি সবার মনোপুত হলো এবং পরিখা খননের প্রস্তুতি চলতে লাগলো।
মদীনার তিন দিক ঘর-বাড়ি ও খেজুর বাগান দ্বারা পরিবেষ্টিত আর একদিক মাত্র উন্মুক্ত ছিলো। হযরত (স) তিন হাজার সাহাবী নিয়ে সে উন্মুক্ত দিকেই পরিখা খননের আদেশ দিলেন। পঞ্চম হিজরীর ৮ জিলকদ এই খনন কার্য শুরু হলো। হযরত (স) নিজে পরিখার খনন কাজ উদ্বোধন করলেন এবং প্রতি দশজন লোকের মধ্যে দশ গজ ভূমি বন্টন করে দিলেন। পরিখার প্রস্ত পাঁচ গজ এবং গভীরতা পাঁচ গজ। বিশ দিনে তিন হাজার মুসলমান এ বিরাট পরিখা খনন করে ফেললেন। পরিখা খননকালে হযরত (স) সকল লোকের সঙ্গে কাজে ব্যস্ত রইলেন। ঘটনাক্রমে এক জায়গায় একটি বিরাটাকার পাথর সামনে পড়লে। সেটাকে কোনো প্রকারেই ভাঙা যাচ্ছিলো না। হযরত (স) সেখানে গিয়ে এরূপ জোরে কোদাল মারলেন যে, পাথরটি ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।
কাফিরদের সৈন্য বাহিনী তিন দলে বিভক্ত হয়ে তিন দিক থেকে মদীনার ওপর হামলা করলো। এই হামলা ছিলো অত্যন্ত প্রচণ্ড ও ভয়াবহ। এটা ছিলো বাস্তবিকই অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার সময়। একদিকে প্রচণ্ড শীতকাল, খাদ্য-দ্রব্যের অভাব, উপর্যুপরি কয়েক বেলা অনশন, রাতের নিদ্রা আর দিনের বিশ্রাম উধাও, প্রতিটি মুহূর্ত জীবনের ভয়, মালমাত্তা ও সন্তানাদি দুশমনের আঘাতের মুখে আর অন্যদিকে বেশুমার শত্রু সৈন্য । এমনিতরো সংকটাবস্থায় যাদের ঈমান ছিলো সাচ্চা ও সুদৃঢ়, কেবল তারাই সত্যের পথে অবিচল থাকতে পারছিলো। দুর্বল ঈমানদার ও মুনাফিকগণ এ পরিস্থিতির আদৌ মুকাবিলা করতে পারছিলো না; বরং মুসলমানদের সমাজ-সংগঠনে যে সব মুনাফিক অনুপ্রবেশ করেছিলো, তারা এ সময় খোলাখুলিভাবে আত্নপ্রকাশ করলো।
দুশমনরা প্রায় এক মাসকাল মদীনা অবরোধ করে রইলো। এই অবরোধ এতো কঠিন ছিল যে, মুসলমানদেরকে একাধিক্রমে তিন-চার বেলা পর্যন্ত অনশনে কাটাতে হলো। এভাবে অবরোধ অত্যন্ত কঠিন ও বিপজ্জনক রূপ পরিগ্রহ করলো। কিন্তু তা সত্ত্বেও অবরোধকারীরা কিছুতেই পরিখা পার হতে পারলো না। এ কারণে তারা অপর পারেই অবস্থান করতে লাগলো। হযরত (স) তাঁর সৈন্যদেরকে পরিখার বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করলেন। কাফিররা বাহির থেকে পাথর ও তীর ছুঁড়তে লাগলো। এদিক থেকেও তার প্রত্যুত্তর দেয়া হলো। এরই ভেতর বিক্ষিপ্তভাবে দু-একটি হামলাও চলতে লাগলো। কখনো কখনো কাফিরদের আক্রমণ এতো তীব্রতর রূপ ধারণ করতে লাগলো যে, তাদেরকে পরিখার এপার থেকে প্রতিহত করার জন্যে পূর্ণ দৃঢ়তর সাথে মুকাবিলা করতে হলো।
অবরোধ যতো দীর্ঘায়িত হলো, হানাদাদের উৎসাহও ততোটা হ্রাস পেতে লাগলো। দশ-বারো হাজার লোকের খানাপিনার ব্যবস্থা করা মোটেই সহজ কাজ ছিলো না। তদুপরি ছিলো প্রচণ্ড শীত। এরই মধ্যে একদিন এমনি প্রচণ্ড বেগে ঝড় বইলো যে, কাফিরদে সমস্ত ছাউনি উড়ে গেলো। তাদের সৈন্য-সামন্ত ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেলো। তাদের ওপর মূর্তিমান আযাব নেমে এলো।
তাই শত্রুরা এ পরিস্থিতির মুকাবিলা করতে পারলো না। তাদের মেরুদণ্ড অচিরেই ভেঙে পড়লো। অবস্থা বেগতিক দেখে ইহুদীরা আগেই কেটে পড়েছিলো। এখন বাকী রইলো শুধু কুরাইশরা। তাই তাদেরও ফিরে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর রইলো না।
বিকালে জায়েদ খালেকদুনের শশুরবাড়ী পৌঁছায়। রাতের খাবার খেতে খেতে ঐ বাড়ীর লোকজনের কাছ থেকে তারা মুসলমানদের বিভিন্ন যুদ্ধের গল্প শোনে। ইসলামের নবী মদীনায় এসেছেন পাঁচ বছর হল। এই পাঁচ বছরের এটা কুরাইশদের ৩য় বড় আক্রমণ। শেষবার যখন এ এলাকায় এসেছিল তখন মাত্র বদর যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। সেই গল্প জায়েদ বাজারে গিয়ে শুনেছে। জায়েদ গল্প শুনছে আর রোম-ইরান যুদ্ধের সাথে মিলিয়ে দেখছে। কোথায় রোম-ইরানের যুদ্ধ আর কোথায় মক্কা-মদীনা যুদ্ধ। রোম ইরানের একটা ছোট খাট সেনা ছাউনিতে বিশ হাজার সৈন্য থাকে আর এরা লাঠি দিয়ে যুদ্ধ করছে! তবুও জায়েদের একটা জিনিস বুঝে আসছে না- এত কম সংখ্যক সৈন্য নিয়ে মুসলমানরা কোন সাহসে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে? রোমান ও ইরানী সৈন্যরা যুদ্ধের সময় আগে দেখে বিপক্ষের সৈন্য সংখ্যা কত। সৈন্য সংখ্যা বেশি হলে এক পক্ষ আগেই পালিয়ে যায়। কে চায় যুদ্ধ করে মরে যেতে? আর পালিয়ে না গেলেও এরা সন্ধির প্রস্তাব দেয়। অথচ এই মুসলমানরা কোন সন্ধির প্রসট্যাব পাঠাল না, সরাসরি যুদ্ধ করল, এত স্বল্প সৈন্য নিয়ে!!! তবে জায়েদের এটা মনে হল মুসলমানদের নেতৃত্বে যে নবী রয়েছেন উনি বড় মাপের নেতা ও যোদ্ধা। কিন্তু তিনি এর আগে কোন ময়দানে যুদ্ধ করেন নাই, যুদ্ধের ট্রেনিং ও নেন নাই, তাহলে যুদ্ধের ব্যপারে এত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি কীভাবে নিতে পারেন? জায়েদের মাথায় কিছুই কাজ করল না।
মদীনার যুদ্ধের কথা স্বরণ হলেই তার মদীনায় যেতে ইচ্ছে করে। তার বাবা মা ভাই বোন কেমন আছে তা জানার তার খুব ইচ্ছা হয়। আচ্ছা, বাব মা সবাই কি নবীর প্রচারিত দ্বীন গ্রহণ করেছে? সেক্ষেত্রে জায়েদের সাথে তারা কী আচরণ করবে? জায়েদ তো খ্রিস্টান স্বেচ্ছাসেবী হয়ে রোমানদের পক্ষে কাজ করছে। মদীনার কথা মনে পড়লে মনে পড়ে মায়মুনার কথা। আর মায়মুনার কথা মনে পড়লে চোখের সামনে মেহরিনের চেহারা ভেসে আসে। কোথায় মায়মুনা আর কোথায় মেহরিন? মায়মুনা ছিল গ্রামের মেয়ে, তার সাথে মানান সই আর মেহরিন ইরান সেনাপতির মেয়ে। তার শরীরের ইরান রাজ পরিবারের রক্ত বইছে। তার বিয়ে হবে নিশ্চয়ই কোন না কোন ইরানী উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি বর্গের ছেলের সাথে যে ভবিষ্যতে হবে পারে ইরানের কোন শহরের পরবর্তী গভর্ণর, সেনাপতি, মন্ত্রী, আমির, উজির, সভা সদ। জায়েদের মত সামান্য, ছোট খাট ইরানী সেনা অফিসার যে অরিজিনাল ইরানী না তার এসব নিয়ে চিন্তা করাই বোকামী। এছাড়া সে ইরানী সেনা হলেও তার মূল পরিচয় সে রোমান গোয়েন্দা। তার কাজ শেষ হলে সে রোমানদের মূল সেনাবাহিনীতে ফিরে যাবে। তখন ইরানী মেহরিনরা হবে রোমান সেনা জায়েদের ‘জাতীয় শত্রু’! এসব ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়ল। রাতে সে খব সুন্দর স্বপ্ন দেখল। স্বপ্নটা সুন্দর লাগার কারণ, স্বপ্নে মেহরিন ছিল।
বড়লোকের মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাও পাপ। সকালে ঘুম থেকে উঠে জায়েদ আফসোস করতে থাকে। এখানে আর দুই একটা দিন থাকলে সে পাগল হয়ে যাবে। সে যে রোমান গোয়েন্দা তা ভুলে যেতে বসেছে। ঘুম থেকে উঠে শনে ঘরের বাইরে ছেলে মেয়েদের হাসাহাসির শব্দ। মেহরিন বাচ্চাদের তীরন্দাজী শেখাচ্ছে। জায়েদ একবার ইতস্তত করে সেদিকে এগিয়ে গেল। সে মেহরিনকে দেখছে আর মুগ্ধ হচ্ছে- মানুষ এত সুন্দর হতে পারে! মেহরিনের পরনে সেনার পোষাক। এ নিশ্চয়ই তার বাবা পাঠিয়েছে, এ এলাকায়ে ধরনের পোষাক, কাপড় পাওয়া যাওয়ার কথা নয়।
“ঐ যে ইরানী বীর আসছে” জায়েদকে দেখে মেহরিন বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বলল “ওনার তীরন্দাজী দেখ”
জায়েদ ইতস্তত করে বলল “আমি তীরন্দাজ না, আমি ঘোড়সওয়ার বাহিনীর সেনা। তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করা আমার কাজ। যদিও তীরন্দাজী আমি জানি তবে তোমার মত এত ভাল না।”
জায়েদের কথা শুনে মেহরিন মনে হয় খুশি হল। তবুও সে জায়েদকে চ্যালেঞ্জ করল “দেখেন ত দেখি ঐ গাছের ডালে লাগাতে পারেন কিনা।” এই বলে তার হাতে থাকা তীর ধনুক জায়েদকে দিল।
তীর ধনুক হাতে নিয়ে জায়েদ কিছুক্ষন কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে রইল। এই তীর ধনুকে মেহরিনের ছোঁয়া আছে। জায়েদ লক্ষ্যে তীর নিক্ষেপ করল। ডাল তো দূরের কথা তীর কাছাকাছিও যায় নি। যাবে কীভাবে? জায়েদ সেদিকে পূর্ণ মনযোগ দিতে পারছিল না। বাচ্চারা হো হো করে হেসে উঠল, সাথে মেহরিনও।
“ইরানী সেনারা যদি টার্গেটে তীর লাগাতে না পারে তাহলে ইরানী রাজ কণ্যাদেরই যুদ্ধের ময়দানে নামতে হবে” মেহরিনের মায়ের কন্ঠের গর্বের সূর। জায়েদ পিছনে ফিরে তাকাল। মেহরিন যে ভাল তীরন্দাজ সেই কথা মনে করিয়ে দিল।
“আজ বর যাত্রী আসবে। সেই সূদুর মক্কায় বিয়ে হচ্ছে। ছেলে আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশের ছেলে। অনেক আয়োজন বাকী আছে। তোমরা খেয়ে দেয়ে নেও। তুমি এই এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখে আসতে পার। বেশি দূরে যেও না। দুপুরের মধ্যে মেহামান চলে আসবেন আশা করছি।” মেহরিনের মা জায়েদের উদ্দেশ্যে বললেন।
মেহরিন জায়েদের উদ্দেশ্যে বললেন “আপনি গতকাল অনেক দূর থেকে এসেছেন বলে আপনাকে বিরক্ত করিনি। আজ বিয়ে হচ্ছে, তা নাহলে আপনার কাছ থেকে আজই যুদ্ধের গল্প শুনতাম। এখানে যখনই কোন দূত আসে তখনই তার কাছ থেকে আমরা যুদ্ধের গল্প শুনি।”
জায়েদ একটু সাবধানী হল “দূতরা কত দিন পর পর এখানে আসে?”
মেহরিন উত্তর দিল “প্রতি মাসে বাবা একবার চিঠি পাঠায়। আমাকে একটা, মাকে একটা। আমাদের জন্য উপহারও পাঠায়।”
“শেষবার কবে দূত এসেছিলেন?” জায়েদ শিউর হতে চায় এখন আবার দূত আসার সময় হয়েছে কিনা। নাকি যে দূতকে তারা বন্দি করেছে সেই দূত যদি নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত না যেতে পারে তখন সেনাপতির সন্দেহ হবে। ইরানী সেনপতি খুব চালাক। চালাক না হলে দশ লক্ষ সেনা কীভাবে সামলায়?
“গতকাল”
“গতকাল?” জায়েদের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। “আশেপাশে তাকাল, কোথাও নেই তো?”
মেহরিন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেল “আপনিই তো বাবার দূত”
জায়েদ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল তবে মনের মধ্যে নতুন চিন্তা ঢুকে পড়ল। যেহেতু সে পালিয়ে এসেছে তাই সেই হিসাবে সে এখন পলাতক সৈনিক। পলাতক সৈনিকদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যু। এছাড়া সে এসেছে একটা বিশেষ অভিযানে। এই অভিযানে ব্যার্থ হলেও তার মৃত্যু নিশ্চিত। সে এখন শত্রুর ঘরে রয়েছে। জায়েদ খাবার ঘরের দিকে গেল।
বর যাত্রী এসেছে। সবাই হই হুল্লোড় করছে। জায়েদ বাড়ীর বাইরে একটা গাছের নিচে বসে আছে। এই গাছেরই একটা ডালে সে তীর নিক্ষেপ করার চেষ্টা করেছিল। সেই তীর এখন তার হাতে। তীরের দিকে সে পরম মমতায় চেয়ে আছে। এই তীরে মেহরিনের ছোঁয়া রয়েছে। তীরটা মনে হয় জায়েদের বুকে লেগেছে। তীরটা সে তার বুকের মধ্যে চেপে ধরল। মনে মনে বলল “হে ঈশ্বর, আমাকে আর কত পরিক্ষায় ফেলবা? সেই যে পরীক্ষা দিচ্ছি ত দিচ্ছি, শেষ হচ্ছে না।”
“আপনি এখানে? আমিতো আপনাকে পুরো বাড়ী খুঁজে ফিরছি” মেহরিনের কথা শুনে তার ধ্যান ভাঙল। ছিঃ সে এই তীর বুকে ধরে আছে, দেখেনি তো! সে খুব লজ্জা পেল।
“আপনাকে বর খুঁজছে। আপনি আসুন”
“বর আমাকে খুঁজছে?” জায়েদ আকাশ থেকে পড়ল।
জায়েদের প্রশ্ন শুনে মেহরিন ব্যাখ্যা করল “আমরা বলেছি এই বাড়ীতে এখন সাত জন ইরানী ফৌজ রয়েছেন যারা সরাসরি রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। বর ও তাদের সাথে থাকা মেহামানরা আপনাদের দেখতে চাইছে। আসলে যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ওনারা খুব উদ্বিগ্ন কারণ ওনারা মূর্তি পূজারী। সেই হিসেবে ইরানীদের বিজয় দেখতে চাইছে।
জায়েদ বর পক্ষের আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলল। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হল। এরপরে বর পক্ষের মুরুব্বীরা জায়েদের কাছ থেকে যুদ্ধের কথা জানতে চাইল। এক মুরুব্বী বললেন “যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি ভাল ঠেকছে না। রোমানদের হামলায় ইতি মধ্যে তিনটা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ইরানীদের হাত ছাড়া হওয়ার পরে আমরা টেনশনে পড়ে গেছি। বিশেষ করে মক্কা থেকে পালিয়ে যাওয়া মুসলমানরা যে হারে শক্তিশালী হচ্ছে তাতে আমি ভবিষ্যৎ ভাল দেখছি না। আরবদের মধ্যে ঐক্য থাকলে এতদিন আমরা মুসলমানদের নিঃশেষ করে দিতাম। রোমানদের বিজয় হলে তারা মুসলমানদের পক্ষে থাকবে। কারণ তারাও আহলে কিতাবে বিশ্বাসী। ইত্তি মধ্যে মুসলিমদের একটা দল আবিসিনিয়ায় হিজরত করলে সেখানকার খ্রিস্টান বাদশা নাজ্জাশী মুসলমানদের আশ্রয় দেন। তখন থেকেই আমাদের ধারনা হয় যে ভবিষ্যতে খ্রিস্টান-মুসলম
জায়েদ ওদেরকে যুদ্ধের পরিস্থিতি বর্ণনা করল। কীভাবে পরিস্থিতি বর্ণনা করলে মানুষ আশাহত হবে না সেটা সে ভাল করেই জানে। সেভাবেই বর্ণনা করল। এক ফাঁকে একজন জিজ্ঞেস করল “আরবে তোমার বাড়ী কোথায়?”
জায়েদ উত্তর দিল “মদীনায়”
এক লোক উত্তর দিলেন “আমার শশুরবাড়ী মদীনায়। এক খাজরাজীর মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি, তার নাম মায়মুনা, আমার পঞ্চম স্ত্রী, তার ভাইয়ের নাম সালেহ। চেন নাকি?”
মায়মুনার কথা শুনে জায়েদ পাথর হয়ে গেল। সামনে বসা এই লোক মায়মুনার স্বামী! লোকটি কথা বলেই যাচ্ছে। জায়েদ গোয়েন্দা ট্রেনিং না পেলে হয়তো তার চোখ দিয়ে পানির দেখা মিলত। সবার নজর বরের দিকে হওয়ায় জায়েদের দিকে কেউ নজর দিল না।
একজন নজর দিল, আলোচনার মাঝে একজনকে খুঁজতে মেহরিন এই কামরায় চলে এসেছিল। তার চোখ জায়েদের বিষন্ন মুখ এড়াল না।