মরুর ফুল ২১

“রাজ পরিবারের ছেলেরা এমনই হয়। এসব ভেবে লাভ নেই। ছেলেটাতো তোর কোন ক্ষতি করে নাই” মেহরিনের মা মেহরিনকে উদ্দেশ্য করে বলছে। রাণি শিরির কামরায় সোহরাবের সাথে মেহরিনের দেখা হয়েছিল। সোহরাবের দৃষ্টি দেখে মেহরিনের খুব খারাপ লেগেছে। মনে হচ্ছিল সে চোখ দিয়েই গিলে ফেলবে। রাণি শিরিও মেহরিনের মনোভাব বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু রাণি কিছু বললেন না। রাণির কামরা থেকে বের হয়ে মেহরিন ও তার মা যখন বের হয়ে বাড়ী ফিরছিল তখন মেহরিন মাকে বলেছে “এই ছেলেটা যেন কেমন!” মেহরিনের মা মেহরিনের মনের কথা বুঝতে পেরে উপরের উত্তর দিয়েছেন।
“তবুও আমার কাছে ওনার কথা বার্তা ভাল লাগেনি” মেহরিনের জবাব।
“এভাবে দেখলে তোমার জন্য কোন যোগ্য ছেলে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি এক সময় তোমার বাবার দাসী ছিলাম। পরে তিনি আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন।” মেহরিনের মা।
“সেটা দিয়েছে তো ঠেকায় পড়ে। বাবা যখন দেখলেন ওনার অন্যান্য স্ত্রীদের মধ্যে তোমার মত এত সুন্দরী কেউ নেই তাই তোমাকে স্ত্রী বানিয়েছে। তিনি শুধু তোমাকে স্ত্রীই বানিয়েছেন কিন্তু অন্য স্ত্রী মত সমান মর্যাদা দেন নি। ওনার অন্য স্ত্রীরা যেখানে বিভিন্ন মহলে থাকেন সেখানে আমাদের স্থান ছিল আরবের পল্লীতে।” ঝাঁঝের সাথে মেহরিন বলল।
খালেকদুনের স্ত্রী কথা বাড়ালেন না। মেয়ের সাথে কথা বললে নিজের মান ইজ্জতই যাবে। তবে এটা বুঝল সোহরাবকে মেহিরিনের পছন্দ হয় নি। পছন্দ হলেই বা কি আর না হলেই বা কি মেহরিনের বিয়ে সোহরাবের সাথেই হবে। তিনি রাণির কাছে কথা দিয়েছেন। এই বিয়ের সাথে অনেক কিছু জড়িত আছে। প্রথমত, রাজ পরিবারের বিয়ে হলে খালেকদুনের স্ত্রীর গুরুত্ব খালেকদুনের অন্যান্য স্ত্রীর তুলনায় বেড়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, এই বিয়ের সাথে খালেকদুনের ভবিষ্যৎ জড়িত। কিসরা সম্রাট খসরু পারভেজ আজীবন থাকবেন না। এর পরের প্রজন্ম আসলে খালেকদুনের পরিবারের গুরুত্ব কমে যেতে পারে। তাই পরবর্তী প্রজন্মের সদস্য সোহরাবের সাথে মেহরিনের বিয়ে হলে ওদের ভবিষ্যৎ নিষ্কন্টক হবে।
খালেকদুনের স্ত্রী চিন্তায় পড়ে গেলেন। এই মেয়ে অনেক জেদী। ওকে বোঝানো অনেক কঠিন। সে যদি কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তাহলে তা থেকে পিছপা হবে না। এদিকে খালেকদুন কী ভাববে? বাড়ী গিয়ে ঠান্ডা মাথায় সে মেরিনকে বোঝাবে।
---
কারাগারে আজ অনেক নতুন কয়েদী এল। অন্যান্য কক্ষে স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে জায়েদের কক্ষে চারজন কয়েদীকে দেয়া হল। এরা সবাই ইরানী কয়েদী। বিদ্রোহের অভিযোগে এইসব কয়েদীকে ধরে আনা হয়েছে। তাদের সবার বাড়ী মাদায়েনে। এদের মধ্যে একজনের নাম বাহরাম, সে কিছুদিন আগে রাজকীয় সেনা বাহিনীর সদস্য ছিল। বাহরামের সাথে জায়েদ খুব ভাল করে মিশে গেল। বাহরামের বক্তব্য ছিল সে রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে নাই। সে শুধু অগ্নি পূজারীদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। অগ্নি পূজারীরা জনগনের কাছ থেকে প্রচুর টাকা আদায় করে। এই বছর যুদ্ধের অযুহাতে তারা চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই বাড়তি চাঁদা দেয়ার ক্ষমতা সবার ছিল না। বাহরাম এর প্রতিবাদ করায় তার রাজকীয় বাহিনীর চাকরিটা চলে যায়। পরদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জায়েদ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল “আমি যতটুক জেনেছি ইরানে সবচেয়ে ক্ষমতা ধর হল রাজকীয় সেনা বাহিনীর সদস্যরা। আর তোমার কাছে শুনে মনে হচ্ছে পূজারীরা এর চেয়ে বেশি শক্তিশালী!”
“তুমি ঠিক ধরেছ। এই পূজারীরাই ইরানের নীতি নির্ধারক। রোমান খ্রিস্টানদের যেমন গীর্জা ও পাদ্রীরা সম্রাটকে চালায় ঠিক এখানে অগ্নিপূজারী ও মন্দিরের পুরোহিতেরা সম্রাটকে চালায়। দুই পক্ষ দুই পক্ষকে ব্যবহার করে। অগ্নিপূজারীরা জনগনের আবেগ নিয়ে খেলা করে। ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চায় না। বললেই তার গলা কাটা পড়ে। আর সেই ধর্মের রক্ষক হিসেবে অগ্নিপূজারীদের প্রধান কাজ হল সম্রাটের গদি রক্ষা করা। রাজ পরিবারের ক্ষমতালোভী সদস্যরা পূজারীদের সাথে লিয়াজো রেখে চলে। এমনও উদাহরণ আছে, জোর করে কেউ ক্ষমতা দখল করল অথচ পূজারীদের অনুমতি না পাওয়ায় সে রাজ মুকুট মাথায় দিতে পারেনি। জায়েদ বুঝল ইরানে এখনো ভাল মানুষ আছে। আরেকটা বিষয় জায়েদ জানল- বাহরাম খালেকদুনকে খুব পছন্দ করে। বাহরাম এক সময় খালেকদুনের অধীনে সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিল।
---
খালেকদুনের তাঁবুটা পাহাড়ের চুড়ায় যেখান থেকে রোমান সম্রাটের প্রাসাদ দেখা যায়। তুরষ্কের ইস্তাম্বুল শহরে এখনো সেই রাজ প্রাসাদ টিকে আছে। ইরান সম্রাট যেই দূত এখানে পাঠিয়েছেন সেই দূত চলে গেল সহকারী সেনাপতির তাঁবুতে। এই সেই সহকারী সেনাপতি যার খালেকদুনের স্থলে সেনাপতি হওয়ার কথা ছিল কিনতি রাণি শিরির কারণে খালেকদুন সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে। সেই থেকে সহকারী সেনাপতি সুযোগের সন্ধ্যান করছে কী করে সেই পদ বাগানো যায়। তবে সে কাউকে ব্যপারটা বুঝতে দিচ্ছে না। দূত ইরান সম্রাটের কামরা থেকে বের হয়ে যেতেই তার ডাক পড়ে শাহজাদী বিলকিসের কামরায়। বিলকিস তাকে অনেক পুরষ্কার ও একটা চিঠি দেয় আর বলে সে যেন সহকারী সেনাপতিকে এই চিঠিটা পৌঁছে দেয়। এই কাজ করার পরে সে যেন তার বাকী কাজ করে। সহকারী সেনাপতি শাহজাদীর চিঠি পেয়ে চোখ চকচক করতে লাগল কারণ রাজ পরিবারের এ ধরনের কর্ম কান্ডের সাথে তারা আগে থেকেই পরিচিত। একজন আরেকজনকে মেরে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিলকিসের চিঠিতে কী লেখা থাকতে পারে তা আন্দাজ করা যাচ্ছে। চিঠি খুলে সেই আন্দাজ সঠিক হল। সম্রাটের দূতের রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে খালেকদুনের ভবিষ্যৎ। দূতকে ম্যানেজ করা কোন ব্যপার না, ভাল পুরষ্কার ধরিয়ে দিলেই হবে। এছাড়া শাহজাদী নিজে যখন দূতের মাধ্যমে চিঠি দিয়েছে তাহলে অবশ্যই তিনি দূতকে খুশি করেছেন। ইরান সম্রাট দূতের মাধ্যমে পাঁচ জন সিনিয়ার সেনা অফিসারকে পাঁচটি চিঠি দিয়েছেন। পাঁচ জনকেই চিঠির কথা গোপন রাখতে বলেছেন। প্রত্যেককেই খালেকদুনের কার্যক্রম সম্মন্ধে কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে। এছাড়া খালেকদুনকেও একটা জবাব দিহীতা মূলক চিঠি দেয়া হয়েছে। পাঁচ জন সিনিয়ার অফিসার খালেকদুনকে পছন্দ করেন তারা সবাই খালেকদুনের পক্ষেই রিপোর্ট দিল। দূত যেদিন আসবে সেদিন সে সহ-সেনাপতির সাথে দেখা করল। সহ-সেনাপতি পাঁচ জন অফিসারের উত্তর দেয়া পাঁচটি চিঠি নিজের হাতে নিলেন আর নিজে পাঁচটি নকল চিঠি দিলেন। এই পাঁচটি চিঠিতে খালেকদুনের বিরুদ্ধে লেখা আছে। দূত সিনিয়ার অফিসারদের পাঁচটি নকল চিঠি ও খালেকদুনের উত্তর নিয়ে মাদায়েনে রওনা হল।
---
জেলে আসার এক মাস পরে বাহরাম মুক্তি পেল। সে যে মুক্তি পাবে এটাই স্বাভাবিক কারণ রাজকীয় সেনাবাহিনীতে তার অনেক বন্ধু বান্ধব রয়েছে। তারা পুজারীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে সম্রাটের কাছে আবেদন করে। সম্রাট বাহরামকে মুক্তির নির্দেশ দেন। যাওয়ার সময় বাহরাম জায়েদজে জিজ্ঞেস করে “বন্ধু, আমি কি তোমার কোন কাজে আসতে পারি? আমি কি তোমার মুক্তির ব্যপারে চেষ্টা করব?”
জায়েদ উত্তর দিল “আমার জন্য শুধু একটা কাজই করলে তোমার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। মাদায়েনে খালেকদুনের আরব স্ত্রী অবস্থান করছেন। তিনি বণু গাফতান গোত্রের মেয়ে। ওনাকে গিয়ে বলবে আমি জেলে আছি। আর এটাও বলবে যে ওনারা অনেক বিপদে আছেন।”
বাহরাম যখন জেল গেইট থেকে বের হল তখন রাজকীয় বাহিনীর আরেক অফিসার মাসউদের দেখা পেল। মুক্তির আনন্দে বাহরামের মনে প্রশ্ন জাগল না মাসউদ জেলের সামনে কী করছে।
---
মেহরিনের মা মেহরিনকে সোহরাবের বিষয়টা নিয়ে গত এক মাসে কিছুই বলেনি। এদিকে রাণি শিরি পারলে বিয়ে দিন তারিখ নির্ধারণ করে ফেলে। আজ মেহরিনকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন “সোহরাবের ব্যপারে তোমার মতামত কী?”
“তুমি কি জেনে শুনে একটা খারাপ ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিতে চাও?” মেহরিন পালটা প্রশ্ন করল “আমি এই ছেলে সম্মন্ধে মাদায়েনে খোঁজ নিয়ে যা জানতে পেরেছি তা তুমিও জান। এরপরেও তুমি কি তাকে বিয়ে করতে বল?” মেহরিনের মা কিছু বলতে যাবেন এমন সময় এক দাসী এসে জানাল বাইরে একজন তার সাথে দেখা করার জন্য বসে আছে।
খালেকদুনের স্ত্রীর সামনে বাহরাম দাঁড়িয়ে আছে। নিজের পরিচয় দিয়ে বলল “আমি সেনাপতি খালেকদুনের অধীনে সিরিয়া ও জেরুজালেমে ছিলাম। পরে রাজকীয় বাহিনীতে যোগ দিয়েছি। আপনাকে একজন একটা খবর দিতে বলেছে। জায়েদ নামে আপনাদের পরিচিত একজন মাদায়েনের জেলে গত ছয় মাস ধরে আছে। সম্ভবত আপনারা যেদিন মাদায়েনে এসেছেন সেদিন থেকেই সে জেলে আছে। আর আরেকটা কথা বলতে বলেছে, আপনাদের পরিবার খুবই বিপদে আছে.........”
“জায়েদ মাদায়েনে আছে?” ঝড়ের বেগে মেহরিন কক্ষে প্রবেশ করল। এতক্ষণ সে পাশের কক্ষে ছিল। সে মনে করেছে রাণি শিরি কোন লোক পাঠিয়েছে। জায়েদের নাম শোনার পর তার কান খাড়া হয়ে গেল। জায়েদ মাদায়েনের জেলে আছে শুনে সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না, লোকটির সাথে কথা বলার জন্য নিজেই কক্ষে চলে এল।
বাহরাম অবাক হয়ে মেহরিনের দিকে তাকাল। মেহরিনের মাও মেয়ের এমন আচরণে অবাক হল। মেহরিন বলল “তিনি কেমন আছেন? উনি কী করে জেলে গেল?”
খালেকদুনের স্ত্রী বাহরামকে জিজ্ঞেস করল “তুমি কীভাবে জায়েদের খবর পেলে?”
“আমি মাস খানেক জায়েদের সাথে একত্রে জেলে ছিলাম”
“ওনার উপর কোন অত্যাচার হয় নি তো?” বাহরামকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মেহরিন প্রশ্ন করল। খালেকদুনের স্ত্রী এবার বিব্রত হলেন। বাহরাম কী ভাববে? একজন চাকর সম্মন্ধে সেনাপতির মেয়ের এমন আগ্রহে যে কারো মনে সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে। তিনি অনেকটা ‘কারণ দর্শানো’ ভঙ্গিতে বললে “আসলে ছেলেটা দুইবার আমাদের পরিবারকে বাঁচিয়েছে তো তাই আমার মেয়ে এবং আমি জায়েদের কোন ক্ষতি হোক চাই না।”
বাহরাম বলল “জেলে থাকাই একটা অত্যাচার। তবে জায়েদের উপর আলাদা কোন জুলুম করা হয় নি। ছেলেটাকে আমার খুব ভাল মনে হয়েছে। কেন যে চুরি করতে গেল।”
“চুরি করেছে? কী চুরি করেছে?” মেহরিন ও তার মা অবাক।
“জায়েদ বলেছে সে নাকি এক আমীরের বাড়ীতে চুরি করেছে। ধরা পড়ার পর তাকে শাস্তি হিসেবে জেলে দেয় হয়েছে। অবশ্য ইরানী কারাগার হল নিরাপরাধ ব্যক্তিদের কারাগার। আমার কাছে কখনো মনে হয়নি যে সে চুরি করতে পারে। সে অবশ্য বলেছে মুক্তি পেলে সে সোজা মদীনায় ফিরে যাবে। কোন এক লোক নাকি নিজেকে নবী বলে দাবী করেছে সেই নবীর পথ অনুসরণ করবে।”
“সেই নবী জালিমদের কারাগার থেকে পৃথিবীবাসীকে মুক্তি দিতে এসেছেন। আমার মনে হয় ইরানীরাও একদিন চাইবে সেই নবী আসুক, জুলুমাতের বিদায় হোক।” মেহরিনের মুখ থেকে এমন কথা বের হবে খালেকদুনের স্ত্রী জীবনেও ভাবে নি। তার বংশের অনেক লোক ইতিমধ্যে পাগল হয়ে গিয়েছে। তারা ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহন করেছে। কিন্তু মেহরিনের কথা শুনে মনে হচ্ছে ওরা যদি এখন আরবে থাকত তাহলে মেহরিনও হয়তো একদিন সেই পাগলদের দলে যোগ দিত। তিনি মেহরিনের চিন্তায় অস্থির হয়ে গেলেন। বাহরাম জেল থেকে মুক্তি পেয়ে নিজের বাড়ীতে না গিয়ে প্রথমে মেহরিনদের বাড়ীতে এসেছে। মেহরিনদের বাড়ী থেকে বের হয়ে একজন রাজকীয় সেনাকে দেখতে পেল। সে যেন কার বাড়ী খুঁজছে। বাহরামের সাথে চোখাচোখি হতেই সৈন্যটা অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে নিল।
---
জায়েদের খবর পেয়ে খালেদকুনের স্ত্রী দ্রুত রাজ প্রাসাদের পথ ধরলেন, যে মেহরিন রাজ প্রাসাদে আর জীবনেও যাবে না বলে কয়দিন আগে বলেছিল সেই মেহরিনও মায়ের সাথে চলল।
রাণি শিরিকে পাওয়া গেল। শিরিকে জায়েদের কথা বলতেই তিনি একটা ফন্দি আটলেন। মাদায়েনের কারাগার শাহজাদা সোহরাবের তত্বাবধানে চলে। তিনি চাইলেন মেহরিন ও তার মা এই উছিলায় যেন সোহরাবের কাছে যায়। তিনি বললেন “তোমরা এক কাজ কর, এখনই শাহজাদা সোহরাবের কাছে যাও, তাকে জানাও। সে অবশ্যই তাকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করবে।” কথাটা তিনি মূলত মেহরিনের উদ্দেশ্যেই বললেন। খালেকদুনের স্ত্রী মনে মনে শংকিত হয়ে পড়লেন। মেহরিন তো সোহরাবের নামই শুনতে চায় না। অবশ্য এবার যদি সোহরাবের মাধ্যমে জায়েদের মুক্তি হয় তাহলে মেহরিন হয়তো সোহরাবকে ভাল চোখে দেখতে পারে। হাজার হোক জায়েদ তো দুইবার মেহরিনের জীবন বাঁচিয়েছে। সোহরাবের কার্যালয়ে যাওয়ার কথা শুনে মেহরিনের প্রথমে একটু ইতস্তত লাগলেও তারা সাথে সাথে সেখানকার পথে হাঁটা শুরু করল।
---
মাসউদ শাহজাদী বিলকিসের সামনে দাঁড়িয়ে। সে খুব উত্তেজিত। তার চাইতে শাহজাদী বিলকিস বেশি উত্তেজিত অবস্তায়।
মাসউদ খবর দিয়েছে সে দীর্ঘ এক মাস পরে আজ কারাগারে গিয়েছে। কারা ফটকে সে রাজকীয় বাহিনীর চাকরিচ্যুত অফিসার বাহরামকে দেখে। সে মাত্র জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে। জেলের ভেতরে গিয়ে শোনে জেলে বন্দীর পরিমান বেড়ে যাওয়ায় বাহরাম সহ আরো তিন জন্য ইরানীকে জায়েদের সাথে একই কক্ষে রাখা হয়েছিল। বাহরামের বাড়ী মাদায়েনে এবং সে এক সময় খালেকদুনের অধীনে সৈনিকের কাজ করত এটা মাসউদের জানা ছিল। এক মাস একই কক্ষে থাকলে তাদের মধ্যে কোন গোপন কথা থাকে না। জায়েদ যখন জানবে বাহরাম খালেকদুনের অধীনে চাকরি করত তখন জায়েদ একটা সুযোগ নিতে পারে। যেহেতু খালেকদুনের স্ত্রী জায়েদকে পছন্দ করে তাই জায়েদ যদি বাহরামের মাধ্যমে খালেকদুনের বাড়ীতে খবর পাঠায় তাহলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। বিশেষ করে রাণি শিরি সম্রাটে কানে খবর দিলে সম্রাট প্রথমে কারারক্ষীদের জিজ্ঞসাবাদ করবেন। কারারক্ষীরা মাসউদের ও সেনা গোয়েন্দা অফিসারের নাম বললে দুই জনেরই গলা কাটা পড়বে। কারাগার থেকে বেরিয়ে মাসউদ দ্রুত এক সেনাকে খালেকদুনের বাড়ীতে পাঠাল। সেই সেনা শুধু দেখবে বাহরাম সেই বাড়ীতে ঢোকে কি না। কিছুক্ষন পরে সৈন্যটি এসে খবর দিল বাহরামকে খালেকদুনের বাড়ীতে দেখা গেছে। বাহরাম বের হবার কিছুক্ষন পরেই খালেকদুনের স্ত্রী ও মেয়ে রাজ প্রাসাদের দিকে রওনা হয়েছে। তার মানে কাজ সেরেছে! এবার তাদের কল্লা কাটা পড়বে। তার আগে শাহজাদী বিলকিসকে খবরটা জানাতে হবে। তিনি অনেক বুদ্ধিমতী, কোন একটা ব্যবস্থা নিবেন।
শাহজাদী সব শুনে কিছুক্ষন রাগে ক্ষোভে চিৎকার করল। এরপরে সে একটা নির্দেশ দিল।
---
সোহরাব যে কার্যালয়ে বসে তার পাশেই তার জন্য একটা কামরা আছে। সে মাঝে মাঝে এখানে সময় কাটায়। খালেকদুনের স্ত্রী ও মেহরিন কার্যালয়ের গেইটে এসে প্রহরীকে বলল “আমরা শাহজাদার সাথে দেখা করতে এসেছি। আমি সেনাপতির স্ত্রী।”
প্রহরী অনুমতি নিতে ভিতরে গেল। প্রহরী বাইরে এসে বলল “উনি এখন ব্যস্ত আছেন। কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন।” শহরের গভর্ণর ব্যস্ত থাকতেই পারেন। অন্য সময় হলে অপেক্ষা করা যায় কিন্তু এই সময়টা অসহ্য। কিছুক্ষন পরে ভিতর থেকে এক সুন্দরী দাসী বের হল। তার উস্কু খুস্ক চুল বলে দিচ্ছে ভেতরে ‘কিছু একটা’ ঘটেছে। মেহরিন মেয়েটাকে দেখে চোখ সরিয়ে ফেলল। ভেতর থেকে ওদের ডাক পড়ল।
সোহরাবের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে সে এতক্ষন মদ খেয়েছে। সাথে ঐ মেয়েটি ছিল। খালেকদুনের স্ত্রী এতে অবাক না হলেও মেহরিনের জন্য সে আফসোস করল।
সব কিছু শুনে সোহরাব কারাগারে দ্রুত লোক পাঠাল। এখান থেকে কারাগার বেশি দূরে নয়। কিছুক্ষণ পরে সেই লোক হন্ত দন্ত হয়ে ফিরে এল “সর্বনাশ হয়ে গেছে। কারাগার থেকে তিন জন বন্দী পালিয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা প্রধান কারারক্ষীকে হত্যা করেছে! যে তিন জন পালিয়েছে সে তিন জনের মধ্যে জায়েদও আছে।”
রেসিপি দেখুন
No comments :

No comments :

Post a Comment