মরুর ফুল ৪০
মক্কা অভিমুখে মুসলিম বাহিনীঅষ্টম হিজরীর ১০ই রমযান। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১০ হাজার সাহাবা। মদীনার তত্ত্বাবধানের জন্যে আবু রাহাম গেফরীকে নিযুক্ত করা হয়।
জাহাফা বা তার আরো কিছু এগিয়ে যাওয়ার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের চাচা হযরত আব্বাসের সাথে দেখা। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে সপরিবারে মদীনায় হিজরত করতে যাচ্ছিলেন। আবওয়া নামক জায়গায় পৌঁছে তাঁর চাচাতো ভাই আবু সুফিয়ান ইবনে হারেস এবং ফুফাতো ভাই আবদুল্রাহ ইবনে উমাইয়ার সাথে দেখা হলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরা উভয়ে তাঁকে নানাভাবে কষ্ট দিয়েছিলো এবং কবিতা রচনা করে তাঁর নিন্দা করে বেড়াতো। এ অবস্থা দেখে হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমকে বললেন, আপনার চাচাতো ভাই ফুফাতো ভাই আপনার কাছে সবচেয়ে খারাপ হবে এটা সমীচীন নয়।
হযরত আলী (রাঃ) আবু সুফিয়ান ইবনে হারেস এবং আবদুল্লাহ ইবনে উমাইয়াকে বললেন “তোমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের কাছে যাও এবং হযরত ইউসুফকে তাঁর ভাইয়েরা যে কথা বলেছিলেন সে কথা বলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম নিশ্চয় এট পছন্দ করবেন না যে, অন্য কারো জবাব তাঁর চেয়ে উত্তম হবে। হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইয়েরা তাঁকে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর শপথ, আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয় আপনাকে আমাদের ওপর প্রধান্য দিয়েছেন এবং আমরা নিশ্চয় অপরাধী ছিলাম।’ (সূরা ইউসুফ, আয়াত ৯১)”
আবু সুফিয়ান ইবনে হারেস তাই করলেন। এই আয়াত শুনে রসূল আবু সুফিয়ান ইবনে হারেস এরপর কয়েক লাইন কবিতা আবৃতি করলেন, তার অর্থ হচ্ছে, “তোমার বয়সের শপথ, আমি যখন লাত-এর শাহ সওয়ারকে মোহাম্মদের শাহ সওয়ারের ওপর বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে পতাকা তুলেছিলাম সে সময় আমার অবস্থা ছিলো রাতের পথহারা পথিকের মত। কিন্তু এখন আমাকে হেদায়াত দেয়ার সময় এসেছ, এখন আমি হেদায়াত পাওয়ার উপযুক্ত হয়েছি। আমার প্রবৃত্তির পরিবর্তে একজন হাদী আমাকে হেদায়াত দিয়েছেন এবং তিনি আমাকে আল্লাহর পথ দেখিয়েছেন। অথচ এই পথকে আমি ইতিপূর্বে সব সময় উপেক্ষা করেছিলাম।”
এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবেগে আবু সুফিয়ানের বুকে চাপড় মেরে বললেন “তুমি আমাকে সব ক্ষেত্রে উপেক্ষা করেছিলে।”
পরবর্তীকালে আবু সুফিয়ান ইবনে হারেস একজন ভালো মুসলমান হয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে ইসলাম গ্রহণের পর লজ্জার কারণে তিনি রসূলের প্রতি চোখ তুলে তাকাননি। আল্লাহর রসূল ও তাকে ভালোবাসতেন এবং তাকে বেহেশেতের সুসংবাদ দিতেন। তিনি বলতেন, আমি আশা করি আবু সুফিয়ান হামজার মতো হবে। ইন্তেকালের সময় উপস্থিত হলে বললেন, আমার জন্য কেঁদো না। ইসলাম গ্রহণের পর আমি পাপ হ্ওয়ার মতো কোন কথা বলিনি।
মাররুজ যাহারানে মুসলিম সেনাদলঃ
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সফর অব্যাহত রাখলেন। তিনি এবং সাহবায়ে কেরাম সকলেই রোযা রেখেছিলেন। আসফান কোদায়দের মধ্যবর্তী কোদায়েল জলশায়ের কাছে পৌঁছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে রোযা ভেঙ্গে ফেলতে বললেন কিন্তু সাহাবীরা কেউ রোযা ভাঙ্গল না। অতঃপর রাসূল (সাঃ) নিজেই রোযা ভেঙ্গে ফেললেন। তাঁর দেখাদেখি সাহাবায়ে কেরাম ও রোযা ভাঙ্গলেন।
এরপর পুনরায় তাঁরা সফর করতে শুরু করেন। রাতের প্রথম প্রহরে তাঁরা মারুরুজ জাহারান অর্থাৎ ফাতেমা প্রান্তরে গিয়ে পৌঁছলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে সাহাবারা পৃথকভাবে আগুন জ্বালালেন। এত দশ হাজার চুলায় রান্না হচ্ছিলো। আল্লাহর রসূল পাহারার কাজে হযরত ওমরকে (রাঃ) নিযুক্ত করলেন।
আল্লাহর রসূলের সমীপে আবু সুফিয়ানঃ
মাররুজ জাহরানে অবতরণের পর হযরত আব্বাস (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাদা খচ্চরের পিঠে আরোহণ করে ঘোরাফেরা করতে বেরোলেন। তিনি চাচ্ছিলেন যে, কাউকে পেলে মক্কায় খবর পাঠাবেন, যাতে করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কায় প্রবেশের আগেই কোরাইশরা তাঁর কাছে এসে নিরাপত্তার আবেদন জানান।
এদিকে আল্লাহ তায়ালা, কোরাইশদের কাছে কোন প্রকার খবর পৌঁছা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ কারণে মক্কা বাসীরা কিছুই জানতে পারেনি। তবে তারা ভীতি-বিহ্বলতার মধ্যে এবং আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। আবু সুফিয়ান বাইরে এসে কোন নতুন খবর জানা যায় কিনা সে চেষ্টা করছিলো। সে সময় তিনি হাকিম বিন হাজাম এবং বুদাইল বিন ওরাকাকে সঙ্গে নিয়ে নতুন খবর সংগ্রহের চেষ্টায় বেরিয়েছিল।
হযরত আব্বাস (রাঃ) হযরত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খচ্চরের পিঠে সওয়ার হয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি আবু সুফিয়ান এবং বুদাইল ইবনে ওরাকার কথা শুনতে পেলেন। আবু সুফিয়ান বলছিল “আল্লাহর শপথ, আমি আজকের মতো আগুন এবং সৈন্যবাহিনী অতীতে কখনো দেখিনি।”
বুদাইল ইবনে ওরাকা বললো “আল্লাহর শপথ, ওরা হচ্ছে বনু খোযাআ। যুদ্ধ ওদের লন্ড ভন্ড করে দিয়েছে।”
আবু সুফিয়ান বললেন “এতো আগুন এবং এতো বিরাট বাহিনী বনু খোযাআর থাকতেই পারে না।”
হযরত আব্বাস (রাঃ) আবু সুফিয়ানের কন্ঠস্বর শুনে বললেন “আবু হানজালা নাকি?”
আবু সুফিয়ান আব্বাস (রাঃ) এর কন্ঠস্বর চিনে বললেন “আবুল ফযল নাকি?”
আব্বাস (রাঃ) বললেন “হ্যাঁ”
আবু সুফিয়ান বললেন “কি ব্যাপার? আমার পিতামাতা তোমার জন্যে কোরবান হোক।”
জবাবে তিনি বললেন “রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদলবলে এসছেন। হায়রে কোরাইশদের সর্বনাশা অবস্থা।”
আবু সুফিয়ান বললেন “এখন কী উপায়? আমার পিতামাতা তোমার জন্যে কোরবান হোক।”
আব্বাস (রাঃ) বললেন “ওরা তোমাকে পেলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবে। তুমি এই খচ্চরের পিছনে উঠে বসো। আমি তোমাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাবো। তোমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেব।”
আবু সুফিয়ান তখন খচ্চরে উঠে আব্বাস (রাঃ) এর পিছনে বসলেন। তার অন্য দু’জন সাথী ফিরে গেলো।
হযরত আব্বাস (রা.) আবু সুফিয়ানকে নিয়ে চললেন। কোন জটলার কাছে গেলে লোকেরা বলতো, কে যায়?
কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খচ্চরের পিঠে ওনাকে দেখে বলতো “ইনি, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা, তাঁরই খচ্চরের পিঠে রয়েছেন।”
যখন তিনি ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বললেন “কে?”
একথা বলেই আব্বাস (রাঃ) এর দিকে এগিয়ে এলেন। আব্বাস (রাঃ) এর পিছনে আবু সুফিয়ানকে দেখে বললেন “আবু সুফিয়ান? আল্লাহর দুশমন? আল্লাহর প্রশংসা করি, কোন প্রকার সংঘাত ছাড়াই আবু সুফিয়ান আামদের কবযায় এসে গেছে।” একথা বলেই হযরত ওমর (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছুটে গেলেন। আব্বাস (রাঃ) ও খচ্চরকে জোরে তাড়িয়ে নিলেন।
খচ্চর থেকে নেমে তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন। ইতি মধ্যে হযরত ওমর (রা.) এলেন।
তিনি এসেই বললেন “হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ওই দেখুন আবু সুফিয়ান। আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই।”
হযরত আব্বাস (রা.) বললেন “হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমি সুফিয়ানকে নিরাপত্তা দিয়েছি।” পরে তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথা স্পর্শ করে বললেন “আল্লাহর শপথ, আজ রাতে আমি ছাড়া আপনার সাথে কেউ গোপন কথা বলতে পারবে না।”
আবু সুফিয়ানকে হত্যা করার অনুমতির জন্যে হযরত ওমর বারবার আবেদন জানালে আব্বাস (রাঃ) বললেন “থামো ওমর। আবু সুফিয়ান যদি বনি আদী ইবনে কা’ব এর লোক হতো, তবে এমন কথা বলতে না।”
হযরত ওমর বললেন “আব্বাস থামো। আল্লাহর শপথ, তোমার ইসলাম গ্রহণ আামর কাছে আামার পিতা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণের চেয়ে অধিক পছন্দনীয়, এর একমাত্র কারণ এই যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তোমার ইসলাম গ্রহণ আমার পিতা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণের চেয়ে অধিক পছন্দনীয়।”
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন “আব্বাস, আবু সুফিয়ানকে তোমার ডেরায় নিয়ে যাও। সকালে আমার কাছে নিয়ে এসো।”
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ মতো আব্বাস (রাঃ) আবু সুফিয়ানকে ওনার তাঁবুতে নিয়ে গেলেন। সকাল বেলা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আবু সুফিয়ানকে নিয়ে গেলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন “আবু সুফিয়ান, তোমার জন্যে আফসোস, তোমার কি এখনো একথা বোঝার সময় আসেনি যে, আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কোন মাবুদ নেই?”
আবু সুফিয়ান বললো “আমার পিতামাতা আপনার জন্যে কোরবান হোন, আপনি কতো উদার, কতো মহানুভব, কতো দয়ালু। আমি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ থাকলে এই সময়ে কিছু কাজে আসতো।”
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু সুফিয়ান “তোমার জন্যে কি এখনো একথা বোঝার সময় আসেনি যে, আমি আল্লাহ রাসূল?”
আবু সুফিয়ান বলল “আমার পিতামাতা আপনার ওপর নিবেদিত হোন। আপনি কতো মহৎ, কতো দয়ালু আত্মীয়-স্বজনের প্রতি কতো যে সমবেদনশীল। আপনি যে প্রশ্ন করলেন, এ সম্পর্কে এখনো আমার মনে কিছু খটকা রয়েছে।”
হযরত আব্বাস (রাঃ) বললেন “আরে শিরশ্চেদ হওয়ার মতো অবস্থা হওয়ার আগে ইসলাম কবুল করো। একথা সাক্ষী দাও যে, আল্লাহ ব্যতীত এবাদতের যোগ্য কেউ নেই এবং হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।”
হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর একথা বলার পর আবু সুফিয়ান ইসলাম কবুল করে এবং সত্যের সাক্ষী হলেন।
হযরত আব্বাস বললেন “হে আল্লাহর রসূল, আবু সুফিয়ান মর্যাদাবান লোক, কাজেই তাকে কোন মর্যাদা দেয়ার আবেদন জানাচ্ছি।”
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেন “ঠিক আছে, যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ। যে ব্যক্তি নিজের ঘরে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ রাখেবে সে নিরাপদ, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ শরীফে প্রবেশ করবে, সেও নিরাপদ।”
মক্কা অভিমুখে ইসলামী বাহিনীঃ
অষ্টম হিজরীর ১৭ই রমযান সকাল বেলা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাররুজ জাহারান থেকে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হলেন। তাঁর চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ) কে বললেন “আবু সুফিয়ানকে যেন প্রন্তরের পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড় করিয়ে রাখে। এতে সে পথ অতিক্রমকারী আল্লাহর সৈনিকদের আবু সুফিয়ান দেখতে পাবে।”
হযরত আব্বাস (রাঃ) তাই করলেন। এদিক দিয়ে বিভিন্ন গোত্র তাদের পতাকা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। কোন গোত্র অতিক্রমের সময় আবু সুফিয়ান জিজ্ঞাসা করতেন “আব্বাস এরা কারা?”
জবাবে হযরত আব্বাস (রাঃ) যেমন বলতেন “ওরা বনু সালিম”
আবু সুফিয়ান বলতেন “বনু সালিমের সাথে আমার কি সম্পর্ক?”
অন্য কেউ সেই পথ অতিক্রমের সময় আবু সুফিয়ান বলতেন “এরা কারা?”
হযরত আব্বাস যেমন বলতেন “এরা মাজনিয়াহ গোত্র”
আবু সুফিয়ান বলতেন “মাজনিয়াহ গোত্রের সাথে আমার কি সম্পর্ক?”
একে একে সকল গোত্র আবু সুফিয়ানের সামনে দিয়ে অতিতক্রম করলো্। যে কোন গোত্র যাওয়ার সময় আবু সুফিয়ান তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন এবং পরিচয় জানার পর বলত “ওদের সাথে আমার কি সম্পর্ক?”
এর পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোহাজের ও আনসারদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে দেখা যাচ্ছিল শুধু লৌহ শিরস্ত্রাণ। আবু সুফিয়ান বললেন, সুবহানাল্লাহ “এরা কারা?”
হযরত আব্বাস (রাঃ) বললেন “আনসার ও মোহাজেরদের সঙ্গে নিয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচ্ছেন।”
আবু সুফিয়ান বললেন “এদের সাথে যুদ্ধ করার শক্তি কার আছে? আবুল ফযল, তোমার ভাতিজার বাদশাহী তো জবরদস্ত হয়ে গেছে।”
হযরত আব্বাস (রাঃ)বললেন “আবু সুফিয়ান, এটা হচ্ছে নবুয়ত।”
আবু সুফিয়ান বললেন “হাঁ এখন তো তাই বলা হবে”
এ সময় আরো একটা ঘটনা ঘটলো। আনসারদের পতাকা হযরত সা’দ (রা.) বহন করছিলেন। আবু সুফিয়ানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হযরত সা’দ (রা.) বললেন, আজ রক্তপাত এবং মারধর করার দিন। আজ হারামকে হালাল করা হবে। আল্লাহ তায়ালা আজ কোরাইশদরে জন্যে অবমাননা নির্ধারণ করে রেখেছেন। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাওয়ার সময় আবু সুফিয়ান বললেন “হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সা’দ যা বলেছে, আপনি কি সে কথা শুনেছেন?” রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন “সা’দ কি বলেছে?”
আবু সুফিয়ান বললেন এই এই কথা বলেছে।
এ কথা শুনে হযরত ওসমান (রাঃ) এবং হযরত আবদুর রহমান আওফ (রাঃ) বললেন “হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমরা আশঙ্কা করছি যে, সা’দ কোরাইশদের মধ্যে খুন-খারাবি শুরু না করে?”
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “না, আজ তো এমন দিন যে, কাবার তাযিম করা হবে। আজ এমন দিন যে, আল্লাহ তায়ালা কোরাইশদের সম্মান দেবেন।”
এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে পাঠিয়ে হযরত সা’দ এর হাত থেকে পতাকা নিয়ে এলেন এবং তাঁর পুত্র কয়েস এর হাতে দিলেন। এতে মনে হলো পতাকা যেন হযরত সা’দ এর হাতেই রয়ে গেছে।
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment