মরুর ফুল ৩৬
মাদায়েন থেকে জেরুজালেম কম দূরত্বের পথ নয়। অনেক দিন সময় লাগে। এদিকে জায়েদ মেহরিনের বিয়ের কথা বার্তা চলায় কেউ কারো সাথে অন্যদের সামনে লজ্জায় কথা বলে না। মাঝে মাঝে অবশ্য ওরা সুযোগ পেলে কথা বলে। এক রাতে জায়েদ তাঁবুর বাইরে এসে কাছের এক টিলার উপরে বসে ছিল। চাঁদনী রাত, দূর থেকেও মানুষ জন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। টিলার উপরে বসে বসে জায়েদ পুরান সৃতি ভাবছে। সে কোথায় ছিল? আজ সে কোথায় পৌঁছেছে! সে ইচ্ছা করলে এখন ইরানী সেনা বাহিনীর ভাল একটা পদে চাকরি নিতে পারবে। কিন্তু তার এসব ভাল লাগছে না। ইরানে মনে হয় কোন ভাল মানুষ নেই। সবার নজর রাজ ক্ষমতার দিকে। ভাবছে মেহরিনকে বিয়ে করে মদীনায় চলে যাবে। আচ্ছা মেহরিন কি মদীনায় যেতে চাইবে? দুনিয়ার বড় বড় জাঁক জমক পূর্ণ শহরের মেয়ে হয়ে কি মদীনার পল্লীতে সে থাকতে পারবে? এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্যই মনে হয় পাশে মেহরিন এসে বসল।জায়েদ পাশে তাকাল না, মেহরিনের অস্তিত্ব টের পেল। সে যে সুগন্ধী ব্যবহার করে তাতেই বোঝা যায় কে এসেছে। ইরানী ও রোমান ধনীরা সুগন্ধী ব্যবহারের ব্যপারে ওস্তাদ। জায়েদ জীবনেও এস চোখে দেখেনি। শুধু জায়েদই নয় পুরা আরবের খুব কম লোকই এসেব চোখে দেখেছে।
“কী ভাবছেন?” মেহরিন কথা শুরু জন্য বলল।
“ভাবছি আমি কী ছিলাম? কী হলাম? সামনে কী হবে?”
“আর?”
“আর তোমার কথা। তোমাকে নিয়ে আমার খুব শংসয় হয়। আমার সাথে মদীনার ছোট পল্লীতে তোমার মত শহুরে মেয়ে কী থাকতে পারবে?”
“আপনাদের মদীনার কাছেই নানার বাড়ীতে চার বছর ছিলাম। ভুলে গেছেন্ন কি?”
“সেটা তো নানার বাড়ী। এছাড়া তখন তো যুদ্ধ চলছিল। ঐ সময়ের হিসাব আলাদা। তুমি তো জান তোমার আর আমার মধ্যে ব্যবধান কতটুকু। কোথায় তুমি আর কোথায় আমি? আমি জানি তোমার বাবা আমাদের বিয়েতে রাজী হবেন না। হবার কথাও নয়। ওনাকে আমি ভাল করেই চিনি। ইরান সেনা পতির মেয়ের বিয়ে হবে কোন এক শাহজাদার সাথে এটা নিশ্চয়ই উনি চাইবেন।”
“আমার মনে হয় বাবার এখন সেই পরিস্থিতি নেই। তিনি আপনার সম্মন্ধে নিশ্চয়ই ভাল খবর পেয়েছেন। আর না পেলেও মা নিশ্চয়ই বাবাকে আপনার সম্মন্ধে বলবেন। এছাড়া আপনার পক্ষে কথা বলার মত লোক আমাদের সাথে অনেকেই রয়েছেন। শুনলাম নতুন সম্রাট শেরওয়া আপনার সম্মন্ধে একটা চিঠি লিখেছেন বাবার কাছে। সেই চিঠি নিয়ে এক সেনা অফিসার আমাদের সাথে সাথেই যাচ্ছে। শেরওয়া আপনাকে খুব পছন্দ করেন। সম্রাটের কাছ থেকে সার্টিফিকেট পেলে নিশ্চয়ই উনি বিয়েতে অমত করবেন না। এছাড়া আপনি যাচ্ছেন ইরান সম্রাটে দূত হয়ে রোমান সম্রাটের কাছে। সাধারণ কোন মানুষ কি ইরান সম্রাটের দূত হতে পারে?” একনাগাড়ে মেহরিন কথাগুলো বলল। তবুও মেহরিনের কথা শুনে মনে হল সে নিজেকে বোঝানোর জন্যই কথাগুলো বলেছে।
“আমি একটা কথা বলতে চাই, তুমি যদি কিছু মনে না কর।”
“কী কথা?”
“ইরান সম্রাটকে আমি বিশ্বাস করি না” জায়েদ আসলে বলতে চেয়েছিল সে ইরানীদেরই বিশ্বাস করে না কিন্তু মেহরিন যেহেতু ইরানী তাই সামনা সামনি কথাটা বলল না।
“কেন?”
“যে লোক ক্ষমতার জন্য নিজের বাবাকে খুন করতে পারে, যে লোক ক্ষমতার জন্য নিজের আঠারো ভাইকে খুন করতে পারে সেই লোককে বিশ্বাস কীভাবে করব?”
জায়েদের কথায় যুক্তি আছে। সে আরো বলে যাচ্ছে “ওনারা প্রধান অগ্নি পূজারীকে দেবতাদের পরের স্থানেই দেখেন। সেই প্রধান পূজারীকে হত্যার জন্য আমাকে ঠিক করেছিলেন। এখন বল এই লোককে আমি কীভাবে বিশ্বাস করব? তাই তো ইরানী সরকারী অফিসারের বড় পদের অফার পেয়েও আমি মাদায়েনে থাকি নি। কোনদিন না আবার আমাকে পূজারী হত্যার অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হয়!”
মেহরিন কিছু বলল না। এসব কথা এখন বলছেন কেন? মেহরিন আশা করেছিল আজ যেহেতু জ্যোৎস্না রাত তাই জায়েদ হয়তো আকাশের চাঁদ নিয়ে রোমান্টি রোমান্টিক কথা বলবে কিন্তু জায়েদের কথা শুনে আজ রাতে মেহরিনের ঘুমই আসবে না।
“এইসব কথা এখন বলার মানে কী? এছাড়া আপনি তো ইরানের চাকরি করবেন না বলে এসেছেন। আপনি তো এখন আর ইরানীদের দলে নেই। জেরুজালেমের কাজ শেষ হলে আমি আপনি মদীনায় চলে যাব?” আত্মবিশ্বাস নিয়ে মেহরিন বলল।
“যদি তোমার বাবা বাঁধা দেয়?”
“আমি আপনার সাথে পালিয়ে যাব। দুনিয়ার কোন শক্তি আমাকে আপনার কাছ থেকে ছিন্ন করতে পারবে না।”
মেহরিনের কথা শুনে জায়েদের চোখে আবেগে পানি চলে এল। তবুও জায়েদের শংকা কাটে না।
---
জায়েদরা জর্ডান সীমান্তে চলে এসেছে। আর মাত্র সাত দিনের পথ পাড়ি দিলেই জেরুজালেম পৌঁছে যাবে। ঠিক এমন সময় তারা যে গ্রামে পৌঁছুল সেই গ্রামের বাসিন্দারা তাদের বলল “আপনারা এই পথে জেরুজালেম যাবেন না। সামনে যুদ্ধ হচ্ছে।”
যুদ্ধের কথা শুনে ইরানী সেনারা অবাক হয়ে গেল। এখন তো যুদ্ধ বিরতি চলছে। জেরুজালেমের রোমান সম্রাট ও ইরানী সেনাপতি একই ছাদের নিচে অবস্থান করছে। এখন কে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে?”
গ্রাম বাসী বলল “আপনারা কি মুসলমানদের কথা শুনেন নাই?”
ইরানী সেনা অফিসার “শুনব না কেন? আমাদের সম্রাটকে তার আণুগত্য করার জন্য একটা চিঠি দিয়েছিলেন” বলে হাসতে লাগলেন।
গ্রাম বাসী বলল “সেই মুসলমানরাই আক্রমণ করেছে!”
এবার ইরানী সেনা অফিসার বিষম খেতে লাগলেন। তার বিষম খাওয়া দেখে আরেক ইরানী অফিসার হা করে থাকলেন। কাফেলা কেন থেমে গেছে তা জানার জন্য জায়েদ সহ আরো কিছু লোক স্মাওনে এগোল। ঘটনা শুনে তারাও বিশ্বাস করতে পারল না যে মুসলমানরা জর্ডান আক্রমন করেছে।
জায়েদ জিজ্ঞেস করল “মুসলমানরা কেন আক্রমণ করেছে?”
গ্রাম বাসী বলল “সামনে মুতা নগরী। এই নগরীর শাসন কর্তা শুরাহবিল রোমান সম্রাটের আণুগত্য করেন। মুসলমানদের দূত শুরাহবিলের কাছে এসেছিলেন ইসলাম গ্রহনের পয়গাম নিয়ে। শুরাহবিল অনেক অহংকারী। নিজেকে রোমান সম্রাটের কাছাকাছিই মনে করে। অহংকারী শুরাহবিল দূত হত্যা নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও মুসলমানদের দূতকে হত্যা করেছে। সেই দূত হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই মুসলমানরা মুতা আক্রমণ করেছে।”
ইরানী অফিসার “মুসলমানরা বেশি বাড় বেড়েছে। ওদের জন্মভূমি মক্কা থেকে ওরা পালিয়ে মদীনায় গেছে। নিজেদের হাতে গোণা ক’জন অনুসারী আছে মাত্র। ওদের কোন নিজস্ব সেনা বাহিনী নেই। কীভাবে রোমানদের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ করবে?”
গ্রাম বাসী “আমাদেরও তো সেই একই প্রশ্ন- মুসলমানরা কোন সাহসে কোন ভরসায় এখানে যুদ্ধ করতে এসেছে? শুরাহবিলের নেতৃত্বে এই মুতায়ই এক লক্ষ রোমান সৈন্য রয়েছে। নিজস্ব এল লাখ সৈন্য ছাড়াও লাখাম, বাজাম, বলকিন, বাহরা এবং বালা গোত্র আরো এক লাখ সৈন্য সমাবেশ করেছে। এছাড়া আশেপাশে জেরুজালেম, গাজা সহ অন্যন্য রোমান শহরে কয়েক লক্ষ রোমান সৈন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমি শুনেছি মুসলমানদের অনুসারী দশ হাজারেরও বেশি নয় যার মধ্যে নারী শিশু বাদ দিলে হয়তো যোদ্ধার সংখ্যা দুই তিন হাজারের বেশি হবে না। অবশ্য যুদ্ধ নিয়ে আমাদের চিন্তা নেই। আমরা এক সময় ইরানীদের অধীনে ছিলাম। এখন রোমানদের অধীনে। আমাদের এসব নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে।”
ইরানী অফিসার জিজ্ঞাসা করলেন “তা অয়েক লক্ষ্ রোমান সৈন্যের মোকাবিলায় মুসলমানরা কত সৈন্য নিয়ে মুতা আক্রমণ করতে এসেছে?”
গ্রাম বাসী কৌতুক স্বরে বলল “শুনেছি তিন হাজার!”
চারিদিকে হাসির রোল পড়ে গেল। ইতি মধ্যে কাফেলার অন্যান্য সেনা অফিসাররা এখানে এসে হাজির হয়েছে যাত্রা বন্ধের কারণ জানার জন্য। মুসলমানরা মাত্র তিন হাজার সৈন্য নিয়ে কয়েক লক্ষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নিয়মিত সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছে শুনে সব সেনারা হাসতে লাগল।
গ্রাম বাসী হাসল না। সে বলল “আমার সাথে দুই একজন মুসলমানের কথা হয়েছে। তারা বলেছে- তারা জীবনের চাইতে মৃত্যুকেই বেশি পছন্দ করে।”
ইরানী অফিসার হাসতে হাসতে বললেন “এখানে ওরা ওদের পছন্দের জিনিসই পাবে।”
এদিকে জায়েদের সাথে থাকা ইরানী সেনা অফিসাররা সিদ্ধান্ত নিলেন যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা এই এলাকাতে অবস্থান করবেন। যুদ্ধ শেষ হলে তারা জেরুজালেমের পথে যাত্রা শুরু করবেন। তিন হাজার মুসলমানকে শেষ করতে দুই লক্ষ রোমান সৈন্যের এক প্রহরের বেশি সময় লাগার কথা না।
---
মুতা জর্দানের বালকা এলাকার নিকটবর্তী একটি জনপদ। এই জায়গা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসের দূরত্ব মাত্র দুই মানযিল। মুতার যুদ্ধ এখানেই সংঘটিত হয়েছিলো।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় মুসলমানরা যেসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এ যুদ্ধ ছিলো সেসবের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী। এই যুদ্ধই খৃষ্টান অধ্যুষিত দেশসমূহ জয়ের পথ খুলে দেয়। অষ্টম হিজরীর জমাদিউল আউয়াল অর্থাৎ ৬২৯ খৃষ্টাব্দ বা সেপ্টেম্বর মাসে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
যুদ্ধের কারণ
এই অভিযানের কারণ এই যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হারেছ ইবনে ওমায়ের আযদীকে একখানি চিঠিসহ সবরায় গভর্ণরের কাছে প্রেরণ করেন। রোমের কায়সারের গভর্ণর সুরাহবিল ইবনে আমর গাস্সানি সেই সময় বালক এলাকায় নিযুক্ত ছিলো। এই দুর্বৃত্ত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দূতকে গ্রেফতার করে এবং শক্তভাবে বেঁধে হত্যা করে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, রাষ্ট্রদূত বা সাধারণ দূতদের হত্যা করা গুরুতর অপরাধ। এটা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল, এমনকি এমনকি এর চেয়েও গুরুতর মনে করা হয়।
এ কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রেরিত দূতের হত্যার খবর শোনার খুবই মর্মাহত হন। তিনি সেই এলাকায় মোতায়েনের জন্যে সৈন্যদের প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী তিন হাজার সৈন্য তৈরী করা হয়। খন্দরে যুদ্ধ ছাড়া ইতিপূর্বে অন্য কোন যুদ্ধেই মুসলমানরা তিন হাজার সৈন্য সমাবেশ করেননি।
সেনানায়কদের প্রতি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যায়েদ ইবনে হারেসা (রা)-কে এই সেনাদলের সেনাপতি মনোনীত করেন। এরপর বলেন যে, যায়েদ যদি নিহত হন তবে জাফর এবং জাফর যদি নিহত হন, তবে আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহা (রা) সিপাহসালার নিযুক্ত হবেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম সেনাদলের জন্যে সাদা পতাকা তৈরী করে তা হযরত যায়েদ ইবনে হারেসার কাছে দেন। সৈন্যদলকে তিনি ওসিয়ত করেন যে, হারেছ ইবনে ওমায়েরে হত্যাকান্ডের জায়গায় তারা যেন স্থানীয় লোকদের ইসলামের দাওয়াত দেন। যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তবে তো ভালো যদি ইসলাম গ্রহণ না করে তবে আল্লাহর দরবারে সাহায্য চাইবে এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর নাম নিয়ে আল্লাহর পথে, আল্লাহর সাথে কুফুরকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, খেয়ানত করবে না, কোন নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং গীর্জায় অবস্থানকারী দুনিয়া পরিত্যাগকারীকে হত্যা করবে না। খেজুর এবং অন্য কোন গাছ কাটবে না, কোন অট্টালিকা ধ্বংস করবে না।
ইসলামী বাহিনীর রওয়ানা
ইসলামী বাহিনী রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে সাধারণ মুসলমানরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মনোনীত সেনানায়কদের সালাম এবং বিদায় জানান। সেই সময় অন্যতম সেনানায়ক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহা (রা) কাঁদছিলেন। তাঁকে এ সময়ে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ, দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ বা তোমাদের সাথে সম্পর্কের কারণে আমি কাঁদছি না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাক কোরআনে একটি আয়াত তেলাওয়াত করতে শুনে জাহান্নামের ভয়ে আমি কাঁদছি জাহান্নামের ভয়ে আমি কাঁদছি। সেই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তা অতিক্রম করবে, এটা তোমাদের প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত।’ (সূরা মরিয়ম, আয়াত ৭১)
আমি জানি না যে, জাহান্নামে পেশ করার পর ফিরে আসব কিভাবে? মুসলমানরা বললেন, আল্লাহ তায়ালা সালামতির সাথে আপনাদের সঙ্গী হোন। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের হেফাযত করুন এবং গনীমতের মালসহ আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনুন। হযরত আবদুল্লাহ তখন এই কবিতা আবৃত্তি করেন,
‘রহমানের কাছে মাগফেরাতের জন্যে
মগয বের করা তলোয়ারের আঘাতের জন্যে
বর্শা নিক্ষেপকারীর হাত, অন্ত্র কলিজা
চিরে ফেলা আঘাত করার শক্তি দানের জন্যে
সাহায্য চাই। আমার কবরে পাশ দিয়ে
যাবে যারা তারা বলবে এই সেই গাজী
যাকে আল্লাহ হেদায়াত দিয়েছেন এবং
যিনি হেদায়অত প্রাপ্ত
মুসলিম সৈন্যরা এরপর রওয়ানা হয়ে যান। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছানিয়াতুল অদা পর্যন্ত সেনাদলের সঙ্গে গিয়ে সৈন্যদের বিদায় জানান।
মুসলিম বাহিনীর সঙ্কট
উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মুসলিম সৈন্যরা মাআন নামক এলাকায় পৌঁছুলেন। এ স্থান ছিলো হেজাজের সাথে সংশ্লিষ্ট জর্দানী এলাকায়। মুসলিম বাহিনী এখানে এসে অবস্থান নেন। মুসলিম গুপ্হচররা এসে খবর দিলেন যে, রোমের কায়সার বালকা অঞ্চলের মাআব এলাকায় এক লাখ রোমক সৈন্য সমাবেশ করে রেখেছে। এছাড়া তাদের পতাকাতলে লাখাম, জাজাম, বলকিন, বাহরা এবং বালা গোত্রের আরো এক লাখ সৈন্য সমবেত হয়েছিলো। উল্লিখিত শেষোক্ত এক লাখ ছিলো আরব গোত্রমূহের সমন্বিত সেনাদল।
মজলিসে শুরার বৈঠক
মুসলমানরা ধারণাই করতে পারেননি যে, তারা কোন দুর্ধর্ষ সেনাদলের সম্মখীন হবেন। দূরবর্তী এলাকায় তারা সত্যিই সঙ্কটজনক অবস্থার সম্মুখীন হলেন। তাদের সামনে এ প্রশ্ন মূর্ত হয়ে দেখা দিল যে, তারা কি তিন হাজার সৈন্যসহ দুই লাখ সৈন্যের সাথে মোকাবেলা করবেন? বিস্মিত চিন্তিত মুসলমানরা দুই রাত পর্যন্ত পরামর্শ করলেন। কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করলেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিঠি লিখে উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হোক। এরপর তিনি হয়তো বাড়তি সৈন্য পাঠাবেন অথবা অন্য কোন নির্দেশ দেবেন। সেই নির্দেশ তখন পালন করা যাবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহা (রা.) দৃঢ়তার সাথে এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন। তিনি বললেন, ‘হে লোক সকল, আপনার যা এড়াতে চাইছেন এটাতো সেই শাহাদাত, যার জন্য আপনারা বেরিয়েছেন। স্মরণ রাখবেন যে, শত্রুদের সাথে আমাদের মোকাবেলার মাপকাঠি সৈন্যদল, শক্তি এবং সংখ্যাধিক্যের নিরিখে বিচার্য নয়। আমরা সেই দ্বীনে জন্যই লড়াই করি, যে দ্বীন দ্বারা আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদেরকে গৌরাবান্বিত করেছেন। কাজেই সামনর দিকে চলুন। আমরা দুইটি কল্যাণের মধ্যে একটি অবশ্যই লাভ করবো। হয়তো আমরা জয় লাভ করবো অথবা শাহাদাত বরণ করে জীবন ধন্য হবে। অবশেষে আবদুল্লাহ ইববে রাওয়াহার মতামতের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।
মুসলিম বাহিনীর অগ্রযাত্রা
মাআন নামক এলাকায় দুই রাত অতিবাহিত করার পর মুসলিম বাহিনী শত্রুদের প্রতি অগ্রসর হলেন। বালকার মাশারেফ নামক জায়গায় তারা হিরাক্লিয়াসের সৈন্যদের মুখোমুখি হলেন। শত্রুরা আরো এগিয়ে এলে মুসলমানরা মুতা নামক জায়গায় গিয়ে সমবেত হন। এরপর যুদ্ধের জন্য সৈন্যদের বিন্যস্ত করা হয়। ডানদিকে কোতাবা ইবনে কাতাদা আজরিকে এবং বামদিকে ওবাদা ইবনে মালেক আনসারী (রা.)-কে নিযুক্ত করা হয়।
সেনা নায়কদের শাহাদাত
মুতা নামক জায়গায় উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে অত্যন্ত তিক্ত লড়াই হয়। মাত্র তিন হাজার মুসলিম সৈন্য দুই লাখ অমুসলিম সৈন্যের সাথে এক অসম যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। বিসম্ময়কর ছিলো এ যুদ্ধ। দুনিয়ার মানুষ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো। ঈমানের বাহাদুরি চলতে থাকলে এ ধরণের বিস্ময়কর ঘটনাও ঘটে।
সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় পাত্র হযরত যায়েদ ইবনে হারেছ (রা.)পতাকা গ্রহণ করেন। অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দিয়ে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। এ ধরনের বীরত্বের পরিচয় মুসলমান ব্যতীত অন্য করো ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়নি।
হযরত যায়েদ-এর শাহাদাতের পর পতাকা তুলে নেন হযরত জাফর ইবনে আবু তালেব। তিনিও তুলনাহীন বীরত্বের পরিচয় দিয়ে লড়াই করতে থাকেন। তীব্র লড়াইয়ের এক পর্যায়ে তিনি নিজের সাদাকালো ঘোড়ার পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়ে শত্রুদের ওপর আঘাত করতে থাকেন। শত্রুদের আঘাতে তাঁর ডানহাত কেটে গেলে তিনি বাঁ হাতে যুদ্ধ শুরু করেন। শাহাদাত বরণ করা পর্যন্ত এভাবে পতাকা ধরে রাখেন।
বলা হয়ে থাকে যে, একজন রোমক সৈন্য তরবারি দিয়ে তাকে এমন আঘাত করে যে, তার দেহ দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে বেহেশতে দুটি পাখা দান করেছিলেন। সেই পাখার সাহায্যে তিনি জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা উড়ে বেড়ান। এ কারণে তাঁর উপাধি ‘জাফর তাইয়ার’ এবং জাফর যুল জানাহাইন। তাইয়ার অর্থ উড্ডয়নকারী আর যুল জানাহাইন অর্থ দুই পাখাওয়ালা।
অনেকের বর্ণনায় হযরত জাফর (রাঃ) এর শরীরে তীরের আঘাতের সংখ্যা সহ মোট ৯০টি আঘাত দেখা গেছে।
বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের মাধ্যমে হযরত জাফর (রা.)-এর শাহাদাত বরণের পর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা (রা.) পতাকে গ্রহণ করে ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে সামনে অগ্রসর হন। কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে
‘ওরে মন খুশী বেজার যেভাবে হোক
মোকাবেলা কর। যুদ্ধের আগুন জ্বেলেছে ওরা
বর্শা রেখছে খাড়া। জান্নাত থেকে
কেনরে তুই থকতে চাস দূরে?
এরপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা (রা.)বীর বিক্রমে যুদ্ধ করতে থাকেন। তাঁর চাচাতো ভাই গোশত লেগে থাকা একটা হাড় তাঁর হাতে দেন। যুদ্ধ শুরু হবার পর গতকাল থেকে উনি এখনো কিছুই খান নি। তিনি এক কামড় খেয়ে ছুঁড়ে ফেলেন। এরপর লড়াই করতে করতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
আল্লাহর তলোয়ার
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা শাহদাতের পর বনু আযলান গোত্রের ছাবেত ইবনে আরকাম একজন সাহাবী গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, হে মুসলমানরা, তোমারা উপযুক্ত একজনকে সেনাপতির দায়িত্ব দাও। সাহাবারা ছাবেতকেই সেনাপতির দায়িত্ব নিতে বললে তিনি বলেন, আমি এ কাজের উপযুক্ত নই। এরপর সাহাবারা হযরত খালেদ ইবনে ওলীদ (রা.) কে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তিনি পতাকা গ্রহণের পর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। স্বয়ং খালেদ ইবনে ওলীদ (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, মুতার যুদ্ধের দিনে আমার হাতে ৯টি তলোয়ার ভেঙ্গেছে। এরপর আমার হাতে একটি ইয়েমেনী ছোট তলোয়ার অবশিষ্ট ছিলো।
এদিকে রসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম রণক্ষেত্রের খবর লোক মারফত পৌঁছার আগেই ওহীর মাধ্যমে পান। তিনি বলেন, যায়েদ পতাকা গ্রহণ করেছিলেন, তিনি শহীদ হন। এরপর জাফর পতাকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি শহীন হন। এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা পতাকা গ্রহণ করেছিলেন, তিনিও শহীন হন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামের চোখ এ সময় অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, এরপর পতাকা গ্রহণ করেন আল্লাহর তলোয়ার সমূহের মধ্যে একটি তলোয়ার। তাঁর যুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জয়যুক্ত করেন।
যুদ্বের সমাপ্তি
বীরত্ব, বাহাদুরি ও নিবেদিত চিত্ততা সত্তেও মুসলমানদের মাত্র তিন হাজার সৈন্য দুই লাখ অমুসলিম সৈন্যের সামানে টিকে থাকা ছিলো এক বিস্ময়কর ঘটনা। হযরত খলেদ ইবনে ওলীদ (রা.)এ সময়ে যে বীরত্বের পরিচয় দেন, ইতিহাসে তার তুলনা খুঁজে পাওয়া যায় না।
যুদ্ধের প্রথম দিন শেষ পর্যায়ে হযরত খালেদ (রা.)রোমক সৈন্যদের মোকাবেলায় অবিচল ছিলেন। তিনি সেই সময় এক নতুন যুদ্ধকৌশলের কথা ভাবছিলেন, যাতে রোমকদের প্রভাবিত করা যায়। সেই কৌশলের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মুসলমানদের পিছিয়ে নেয়ায় ছিলো উদ্দেশ্য। তবে, কোন অবস্থায়ই রোমকরা যেন ধাওয়া করতে না পারে, সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা রোমকরা ধাওয়া করলে তাদের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া হবে খুবই কঠিন।
পরদিন সকালে হযরত খালেদ (রা.)সেনাদল রদবদল করে বিন্যাস্ত করলেন। ডানদিকের সৈন্যদেরকে বাঁদিকে এবং বাঁদিকের সৈন্যদের পেছনে নিয়ে গেলেন। এরূপ আদল বদলে দৃশ্য থেকে শত্রুরা বলাবলি করতে লাগলো যে, মুসলমানর সহায়ক সৈন্য পেয়েছে, তাদরে শক্তি পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেনা বিন্যাস অদল বদল করে হযরত খালেদ (রা.) মুসলমানদের ধীরে ধীরে পিছিয়ে নিলেন। রোমক সৈন্যরা মুসলমানদের আক্রমণ করতে এগিয়ে গেলো না কারণ তারা তখন ভাবছিলো যে, মুসলমানরা ধোঁকা দিচ্ছে। তার মরুপ্রান্তরে নিয়ে পাল্টা হামলা করে পর্যদুস্ত করবে। এরূপ চিন্তা করে রোমক সৈন্যরা মুসলমানদের ধাওয়া না করে নিজেদের এলাকায় ফিরে গেলো। এদিকে মুসলমানরা পিছাতে পিছাতে মদীনায় গিয়ে পৌছালেন।
হতাহতের সংখ্যা
মুতার যুদ্ধে ১২ জন মুসলমান শাহাদাত বরণ করেন। রোমানদের বহু হতাহত হয়েছে। কেননা, একমাত্র হযরত খালেদের হাতেই ৯টি তলোয়ার ভেঙ্গেছিলো। এতেই শত্রু সৈন্যদের হতাহতের সংখ্যা সহজেই আন্দাজ করা যায়।
মুতার যুদ্ধের প্রভাব
যে প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে মুতা অভিযান পরিচালিত হয়েছিলো, সেটা সম্ভব না হলেও এ যুদ্ধের ফলে মুসলমানদের সুনাম সুখ্যাতি বহু দূর বিস্তার লাভ করে। সমগ্র আবর জগত বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। কেননা, রোমানরা ছিলো সে সময়ের শ্রেষ্ঠ শক্তি। আবরব মনে করতো যে, রোমকদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হওয়া মানে আত্মহত্যার শামিল। কাজেই, উল্লোখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া তিন হাজার সৈন্য দুই লাখ সৈন্যের মোকাবেলায় সাহসিকতাপূর্ণ বিজয় গৌরব সহজ কথা নয়। আরবের জনগণ বুঝতে সক্ষম হয়েছিলো যে, ইতিপূর্বে পরিচিতি সকল শক্তির চেয়ে মুসলমানরা সম্পূর্ণ আলাদা। আল্লাহর সাহয্য মুসলমানদের সাথে রয়েছে। তাদের নেতা মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃসন্দহে আল্লাহর রাসূল। এ কারণেই দেখা যায় যে, মুসলমানদের চিরশত্রু জেদী ও অহংকারী হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু সংখ্যক গোত্র মুতার যুদ্ধের পর ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। এসব গোত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গোত্র হচ্ছে, বনু ছালিম, আশজা, গাতফান, জিবান ও ফাজারাহ।
মুতার যুদ্ধের প্রাক্কালে রোমানদের সাথে যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়েছিলো এর ফলেই পরবর্তীকালে মুসলমানদের বিজয় গৌরব দূরদূরান্তে বিস্তার লাভ করে।
---
মুতার যুদ্ধের খবর শুনে জায়েদদের কাফেলাতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল। অনেকেই ইসলামের ব্যপারে আগ্রহী হল। বিশেষ করে যারা জানে জায়েদের বাড়ী মদীনায় তারা জায়েদের সাথে দেখা করে ইসলাম সম্মন্ধে জিজ্ঞেস করতে লাগল। কিন্তু জায়েদের কাছে ইসলাম সম্মন্ধে কোন জ্ঞানই ছিল না। সে উত্তর দিত “ইসলাম সম্মন্ধে তোমরা যা জান আমিও তাই জানি। তবে একটা জিনিস আমার মাথায় কাজ করছে না কী করে তিন হাজার অনিয়মিত প্রশিক্ষণ বিহীন সৈন্য দুই লক্ষ প্রশিক্ষিত সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে!”
কাফেলার প্রধান ইরানী সেনা অফিসার বলল “তুমি আর কএয়কটা দিন অপেক্ষা কর। আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই আমরা জেরুজালেমে পৌঁছে যাব। তোমার কাজ শেষ হলে তুমি মদীনায় চলে গিয়ে আমাদের কাছে খবর দিতে পারবে- মুসলমানদের এত শক্তির রহস্য কী?”
জায়েদ কল্পনায় মদীনা দেখতে লাগল। অন্য দিকে সেনা অফিসার মনে মনে হাসছে। এই কাফেলার মাত্র এই ব্যক্তিই জানে সম্রাট শেরওয়া খালেকদুনকে চিঠিতে জায়েদ সম্মন্ধে কী লিখেছে।
চিঠিতে লেখা আছে “জায়েদ প্রধান পূজারীকে হত্যা করেছে। সে আবার আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। আবমন হয়ে চাঁদের পানে হাত দেয়া লোকদের হাত কেটে ফেলাই ভাল। আপনি তাকে প্রধান অগ্নি পূজারী হত্যার অভিযোগে মাথা বিচ্ছিন করতে পারেন।”
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment