মরুর ফুল ৪২

বিজয় বা শোকরানার নামাযঃ
সেদিন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হানি বিনতে আবু তালেবের ঘরে গিয়ে গোসল করলেন। এরপর সেখানে আট রাকাত নামায আদায় করলেন।
তখন ছিলো চশত-এর সময়। এ কারণে কেউ বললো, এটা চাশত-এর নামায, কেউ বললো, ফতেহ বা বিজয়ের পর শোকরানার নামায। উম্মে হানি তার দু’জন দেবরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উম্মে হানি, তুমি যাদের আশ্রয় দিয়েছো, তাদের আমিও আশ্রয় দিলাম। এ কথা বলার কারণ ছিলো এই যে, উম্মে হানির দুই দেবরকে হযরত আলী (রা.) হত্যা করতে চাচ্ছিলেন। উম্মে হানি ছিলেন হযরত আলীর বোন। উম্মে হানি তার দুই দেবরকে লুকিয়ে রেখে দরজা বন্ধ করে রেখেছিলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলে উম্মে হানি তাকে দেবরদের সমস্যা সম্পর্কে বললে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
চিহ্নিত কয়েকজন শত্রুঃ
মক্কা বিজয়ের দিন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় জন কুখ্যাত চিহ্নিত অপরাধীকে হত্যা তালিকায় অন্তভূক্ত করলে এদের ব্যাপারে বলা হয় যে, এরা কাবা ঘরের পর্দার নীচে আত্মগোপন করলেও যেন হত্যা করা হয়। এরা হলঃ
১. আবদুল ওজ্জা ইবনে খাতাল
২. আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ ইবনে আবু ছারাহ
৩. একরামা ইবনে আবু জেহেল
৪. হারেছ ইবনে নুফায়েল ইবনে ওয়াহাব
৫. মাকিছ ইবনে ছাবাবা
৬. হাব্বার ইবনে আসওয়াদ
৭. ইবনে খাতালের দুই দাসী, যারা কবিতার মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বদনাম রটাতো
৯. সারাহ, সে ছিলো আবদুল মোত্তালেবের সন্তানদের একজন দাসী। সে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কুৎসা রটনা করতো অধিকন্তু তার কাছেই মক্কায় প্রেরিত হাতেবের চিঠি পাওয়া গিয়েছিলো।
আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ ইবনে আবু ছারাহকে হযরত ওসমান ইবনে আফফান (রা.) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে তার প্রাণ ভিক্ষার সুপারিশ করলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাণ ভিক্ষা দিয়ে তার ইসলাম গ্রহণ মেনে নিলেন। কিন্তু এর আগে তিনি কিছুক্ষণ নীরব ছিলেন। তিনি চাচ্ছিলিনে যে, ইতিমধ্যে কোন একজন সাহবী আবদুল্লাহকে হ্ত্যা করুক। কেননা এই লোকটি আগেও একবার ইসলাম গ্রহণ করেছিলো এবং হিজরত করে মদীনায় গিয়েছিলো কিন্তু পরে মুরতাদ অর্থাৎ ধর্মান্তরিত হয়ে মক্কায় পালিয়ে এসেছিলো। দ্বিতীয়বার ইসলাম গ্রহণের পর অবশ্য তিনি ইসলামের ওপর অটল অবিচল ছিলেন।
একরামা ইবনে আবু জেহেল ইয়েমেনের পথে পালিয়ে গিয়েছিলো। তার স্ত্রী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চাইলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মঞ্জুর করলেন। এরপর সেই মহিলা স্বামীর পথের অনুসরণ করে তাকে ফিরিয়ে আনলো। একরামা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং তার ইসলাম খাঁটি ইসলামই প্রমাণিত হয়ে ছিলো।
ইবনে খাতাল কাবা ঘরের পর্দা ধরে ঝুলছিলো। একজন সাহবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এস খবর দিলেন। তিনি বললেন, ওকে হত্যা করো। সেই সাহবী গিয়ে তাকে হত্যা করলেন।
মাকিছ ইবনে ছাবাবাকে হযরত নোমাইলা ইবনে আবদুল্লাহ হত্যা করলেন। মাকিছ প্রথমে মুসলমান হয়েছিলেন। কিন্তু পরে ধর্মান্তরিত হয় এবং একজন আনসার সাহবীকে হত্যাও করে। এরপর মক্কায় মোশরেকদের কাছে ফিরে যান।
হারেছ মক্কায় রসূলকে নানাভবে কষ্ট দিতো। হযরত আলী (রা.) তাকে হত্যা করেন।
হাব্বাব ইবনে আসওয়াদ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা হযরত যয়নব (রা.)-কে তাঁর হিজরতের সময় এমন জোরে ধাক্কা মেরেছিলেন যে, তিনি হাওদায থেকে শক্ত প্রান্তরে গিয়ে পড়ে যান। এতে তাঁর গর্ভপাত হয়ে যায়। মক্কা বিজয়ের দিন এ লোকটি পালিয়ে যায়। পরে মুসলমান হয়ে ফিরে আসে। পরবর্তীতে তার ইসলামও যথার্থ প্রমাণিত হয়েছিল।
ইবনে খাতালের দুইজন দাসীর মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়। অন্যজনের জন্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চায় এবং সে ইসলাম গ্রহণ করে।
হাতেবের পত্রবাহক সারাহর জন্যেও প্রাণভিক্ষা চাওয়া হয় এবং সে ইসলাম গ্রহণ করে।
বাকি পাঁচজনের প্রাণভিক্ষা দেয়া হয় এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করে।
যাদেরকে হত্যা তালিকায় রাখা হয়েছিলো তাদের মধ্যে আরো একজনের নাম শোনা যায়। সে হচ্ছে হারেস ইবনে তালাল খযায়ী। হযরত আলী (রাঃ) তাকে হত্যা করেন।
এই তালিকায় কা’ব ইবনে যুহাইর-এর নামও অনেকে উল্লেখ করেন। কা’ব এর ঘটনা বিখ্যাত। তিনি পরে এসে ইসলাম গ্রহণ করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসায় কবিতা রচনা করেন। এই তালিকায় ওয়াহশী ইবনে হারব এবং আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হেন্দ বিনতে ওতবার নামও ছিলো। তারা পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইবনে খাতালের দাসী আরনবকে হত্যা করা হয়। উম্মে সা’দকেও হত্যা করা হয়। এই হিসাবে পুরুষদের সংখ্যা আট এবং মহিলাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ছয়। এমনও হতে পারে যে, আরনব এবং উম্মে সা’দ একই দাসীর নাম।
সফওয়ান ইবনে উমাইয়াকে যদিও হত্যা তালিকায় রাখা হয় নাই কিন্তু বিশিষ্ট কোরায়শ নেতা হিসাবে তার মনে নিজের জীবনের আশঙ্কা ছিলো। এ কারণে সে পালিয়ে গিয়েছিলো। ওমায়ের ইবনে ওহাব জুহমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাযির হয়ে তার নিরাপত্তার আবেদন জানান। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিরাপত্তা দেন। নিরাপত্তার ‍নিদর্শন স্বরূপ তিনি ওমায়েরকে নিজের পাগড়ি প্রদান করেন। উল্লেখ্য মক্কায় প্রবেশের সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই পাগড়ি মাথায় দিয়েছিলেন। ওমায়ের সওয়ানের কাছে গেলেন। সে সময় সফওয়ান জেদ্দা থেকে থেকে ইয়েমেনে সমুদ্রপথে পালিয়ে যেতে নৌকায় আরোহণ করতে যাচ্ছিলেন। ওমায়ের সেখান থেকে সফওয়ানকে নিয়ে এলেন। রসূলুল্লাহর কাছে এসে সফওয়ান দুই মাসের সময় চাইলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চার মাস সময় দিলেন। এরপর সফওয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী আগেই মুসলমান হয়েছিলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়কে প্রথম বিয়ের ওপর অটুট রাখলেন।
ফোযালা ছিলো অপরাধী। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তওয়াফ করার সময় সে তাঁকে হত্যার কুমতলবে তাঁর কাছে এসে দাঁড়ায়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার মনের ষড়যন্ত্রের কথা বলে দিলেন। এতে ফোযালার বিস্ময়ের সীমা রইল না। সাথে সাথে সে পাঠ করলো লা-ইলাহা ইল্লাহল্লাহু মোহাম্মদুর রসূলুল্লাহ।
মক্কা বিজয়ের পরদিন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষণঃ
মক্কা বিজয়ের পরদিন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দেয়ার জন্যে দাঁড়ালেন। তিনি আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা করার পর বললেন, ‘হে লোকসকল, আল্লাহ তায়ালা যে তারিখে আসমান যমিন সৃষ্টি করেছিলেন সেদিনই মক্কাকে মর্যাদা সম্পন্ন শহর হিসেবে নির্ধারণ করেন। একারণে এই শহরের মর্যাদা কেয়ামত পর্যন্ত অটুট থাকবে। আল্লাহ তায়ালা এবং রোজ কেয়ামতের ওপর বিশ্বাসী কোন মানুষের জন্যেই এই শহরে রক্তপান করা বা কোন গাছ কাটা বৈধ নয়। যদি কেউ প্রশ্ন তোলে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে রক্তপাত করেছেন তবে তাকে বলবে যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর রসূলকে অনুমতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তোমাদের সে অনুমতি দেয়া হয়নি। আর আমার জন্যে নির্দিষ্ট সময়েই রক্তপাত বৈধ করা হয়েছিলো। অতীতের যেমন এখানে রক্তপাত খুন খারাবি নিষিদ্ধ ছিলো ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। যারা এখানে উপস্থিত রয়েছে তারা অনুপস্থিতিদের এ খবর জানিয়ে দেবে।”
এক বর্ণনায় আরো উল্লেখ রয়েছে যে, এখানের কাঁটা যেন কাটা না হয়, শিকার যেন তাড়ানো না হয়, পথে পড়া পরিত্যক্ত জিনিস যেন তোলা না হয়। তবে, সেই ব্যক্তি তুলতে পারবে, যে সেই জিনিসের পরিচয় করাবে। এখানে ঘাস যেন তোলা না হয়। হযরত আব্বাস (রাঃ) ইযখির ঘাসের প্রসঙ্গ তুললে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ ইযাখির ঘাস তোলা যাবে। বনু খাযাআ গোত্রের লোকেরা সেদিন বনু খযাআ গোত্রের একজন লোককে হত্যা করেছিলো। রসূলে খোদা এ সম্পর্কে বললেন, খাযাআ গোত্রের লোকেরা তোমরা হত্যাকান্ড থেকে নিজেদের বিরত রাখো। হত্যাকান্ড যদি কল্যাণকর প্রমাণিত হতো, তবে আগেই হতো। অনেক হত্যাকান্ড ঘটেছে। তোমরা এমন একজন লোককে হত্যা করেছো, যার ক্ষতিপূরণ অবশ্যই আমি আদায় করবো। এখন থেকে কেউ যদি লোককে হত্যা করে তবে নিহত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজন ইচ্ছা করলে ঘাতকদের কাউকে হত্যা করতে পারবে আর ইচ্ছা করলে ক্ষতিপূরণ নিতে পারবে।
আনসারদের সংশয়ঃ
মক্কা বিজয়ের পর আনসাররা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাতৃভূমি অধিকার করার পর কি মক্কায় থাকবেন? সে সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পর্বতে হাত তুলে দোয়া করছিলেন। দোয়া শেষ করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা নিজেদের মধ্যে কি কথা বলাবলি করছিলে?’ আনসাররা অস্বীকার করলেন। বার বার জিজ্ঞাসার পর তারা নিজেদের সংশয়ের কথা জানালেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর পানাহ, এখন জীবন মরণ তোমাদের সাথে।”
বাইয়্যাতঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলমানদের মক্কা বিজয় দেয়ার পর মক্কার অধিবাসীদের সামনে সত্য পরিষ্কার হয়ে গেলো। তারা বুঝতে পারলো যে, ইসলাম ব্যতীত সাফল্যের কোন পথ নেই। এ কারণে ইসলামের অনুসারী হওয়ার উদ্দেশ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বাইয়াতের জন্যে হাযির হলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফার ওপরে বসে লোকদের কাছ থেকে বাইয়াত নিতে শুরু করলেন। হযরত ওমর (রা.)রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নীচে ছিলেন এবং লোকদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করছিলেন। উপস্থিত লোকেরা এ মর্মে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হলো যে, তারা যতোটা সম্ভব তাঁর কথা শুনবে এবং মেনে চলবে।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণের পর মহিলাদের কাছ থেকেও বাইয়াত নেন। হযরত ওমর (রাঃ) নীচে ছিলেন এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে বাইয়াত নিচ্ছিলেন, মহিলাদের তাঁর কথা শোনাচ্ছিলেন।
সে সময় আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হেন্দা ভিন্ন পোশাকে হাযির হলেন। আসলে হযরত হামযার (রাঃ) লাশের সাথে তিনি যে আচরণ করেছিলেন সে কারণে ভীত ছিলেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিনে ফেলেন কিনা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে বাইয়াত নিচ্ছিলেন যে, তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না। হযরত ওমর (রাঃ) সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করে বললেন, মহিলারা তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা চুরি করবে না। একথা বলার পরই হেন্দা বললো, আবু সুফিয়ান আস্ত কৃপণ, আমি যদি তার ধন-সম্পদ থেকে কিছু নেই, তখন কি হবে? আবু সুফিয়ান সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বললেন, তুমি যা কিছু নেবে সেসব তোমার জন্যে হালাল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন। এরপর বললেন, আচ্ছা তুমি কি হেন্দা? আবু সুফিয়ানের স্ত্রী বললো, হাঁ, হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যা কিছু হয়ে গেছে, সেসব মাফ করে দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাকে মার্জনা করুন।’
এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেনা করবে না। একথা শুনে হেন্দা বললেন, স্বাধীন কোন নারীর কি যেনা করতে পারে? এরপর তিনি বললেন, নিজের সন্তানকে হত্যা করবে না। হেন্দা বললেন, শৈশবে আমি তাদের লালন-পালন করেছি, বড় হওয়ার পর আপনার লোকেরা তাদের হত্যা করেছে। কাজেই তাদের বিষয়ে আপনি এবং তারা ভালো জানেন।
উল্লেখ্য, হেন্দার পুত্র হানযালা ইবনে ইবু সুফিয়ান বাদরের যুদ্ধের দিনে নিহত হয়েছিলো। হেন্দার কথা শুনে হযরত ওমার (রাঃ) হেসে কুটি ‍কুটি হলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- ও হাসলেন।
এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কারো নামে অপবাদ দেবে না। হেন্দা বললেন, আল্লাহর শপথ, অপবাদ বড় খারাপ জিনিস। আপনি প্রকৃতই হেদায়ত এবং উন্ন চরিত্রের শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন স্থির কৃত বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাফরমানি করবেন না। হেন্দা বললেন, আল্লাহর শপথ, এই মজলিসে আমি মনে এমন ভাব নিয়ে বসিনি যে, আপনার নাফরমানী করবো।
এরপর ফিরে এসে হেন্দা তার বাড়ীর মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেললো। মূর্তি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে হেন্দা বলছিলেন, ‘তোমাদরে ব্যাপারে আমরা ধোঁকার মধ্যে ছিলাম।’
মক্কায় নবী (স.)-এর অবস্থানঃ
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উনিশ দিন অবস্থান করেন। এই সময়ে ইসলাম শিক্ষা, তাকওয়া ও হেদায়াত সম্পর্কে পথ নির্দেশ দিচ্ছিলেন। সেই সময়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে আবু উছয়েদ খাযারি (রা.) নতুন করে হরম শরীফের খুঁটি স্থাপন করলেন।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লিখিত সময়ে ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ছারিয়্যা অর্থাৎ ছোট ধরনের সেনাদল প্রেরণ করলেন। এমনি করে সকল মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা হলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে একজন ঘোষণা করলেন যে, কেউ যদি আল্লাহ তায়ালা এবং আখেরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন নিজের ঘরে মূর্তি না রাখে, বরং মূর্তি যেন ভেঙ্গে ফেলে।
রেসিপি দেখুন
No comments :

No comments :

Post a Comment