ব্যর্থ মানুষের গল্প পর্ব ( ২ )
সানজিদা বড় হওয়ার পরে শাহেদের সাথে প্রথম দেখা হয় সানজিদার বাসায়। সেদিন
মঞ্জু বাসায় ছিল না। শাহেদ মঞ্জুর বাসার ড্রইং রুমে বসে অপেক্ষা করছিল।
ড্রইং রুম বলতে পুরনো একটা সোফা, একটা খাট, একটা টিভি গাদাগাদি করে রাখা।
এই রুমেই মঞ্জু ঘুমায়। দুই রুমের ছোট্ট একটা বাসা। আরেক রুমে সানজিদা ও তার
মা থাকে। সানজিদা গোসল করে চুল মুছতে মুছতে মঞ্জুর রুমে হঠাৎ ঢুকে পড়ল।
শাহেদ বসে আছে সেটা খেয়াল করে নি। নন্দীত কথা শিল্পী হুমায়ন আহমেদের মতে
মেয়েদের সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখায় গোসল করার পরে ভিজা মাথায় তোয়ালে জড়ানো
অবস্থায়। সানজিদার মাথায় তোয়ালে জড়ানো ছিল না। তবে কাছাকাছি পজিশনে ছিল।
শাহেদের মনে হল ঘরে একটা পরী ঢুকেছে। গোলাপী তোয়ালের রঙ আর শরীরের রঙ
একাকার হয়ে গেছে। শাহেদ হা করে চেয়ে আছে। সানজিদার সে দিকে খেয়াল নেই। তার
নজর দরজার দিকে, দরজাটা খোলা। দরজা বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই সে মূলত এসেছিল।
ভেতরের রুম থেকে এই রুমের দরজা দেখা যায়। সানজিদা গোসল করে বাথরুম থেকে বের
হয়েই খেয়াল করল বাহিরের রুমে দরজা খোলা। দরজা বন্ধ করে পেছনে ঘুরেই সে
শাহেদকে দেখল। সানজিদার গায়ে ওড়না নেই, তোয়ালেটা মাথায়। ভাইয়ার বন্ধুর সাথে
এভাবে দেখা হবে বুঝতে পারেনি। কী করবে, মাথা থেকে তোয়ালে খুলে গায়ে জড়াবে?
নাকি দৌড় দিবে? নিজ বাসায় তো দৌড় দেয়া যায় না। এছাড়া তিনি তো অপরিচিত লোক
নন। ‘আসসালামুয়ালাইকুম’ বলে সানজিদা দ্রুত ভেতরের রুমে ঢুকে পড়ল। ছোট রুম
তাই দৌড় দিতে হল না। দুই কদম হাঁটলেই এক রুম থেকে আরেক রুমে যাওয়া যায়।
সানজিদা রুম থেকে চলে যাওয়ার পরেও শাহেদের মাথায় সানজিদার চেহারা ঘোরপাক
খাচ্ছিল। সানজিদা চলে যাবার পরে রুমের সৌন্দর্য মনে হয় কমে গেল। শাহেদ
ভাবতে লাগল মঞ্জুর বোনটা এত সুন্দর! শাহেদ প্রতি মাসে দুই একবার এই বাসায়
আসে অথচ গত দশ বছরে সানজিদাকে একবারও দেখেনি। মঞ্জু সানজিদার লেখাপড়া নিয়ে
শাহেদকে সময় সময় আপডেট জানায় যেমন এসএসসিতে সানজিদা যখন ভাল রেজাল্ট করল
তখন শাহেদদের বাসায় মিষ্টি পাঠিয়েছিল। এইচএসসিতে শাহেদের কাছ থেকে টাকা ধার
নিয়ে সানজিদার ফর্ম ফিলাপ করা হয়েছিল।
“এই যে লেকচারার সাহেব। কখন এসেছিস?” মঞ্জুর কথায় শাহেদের ঘোর ভাঙ্গে। মঞ্জু বাসায় এসেছে। তার পরনে সিএনজি ড্রাইভারের নীল পোষাক। শাহেদ একদিন মঞ্জুর এই পোষাক পরে সিএনজি চালিয়েছে। অল্পের জন্য পুলিশের কাছে ধরা খায় নি। সে এক মজার ইতিহাস।
আগের পর্বে জেনেছেন শাহেদ অনার্সে ইংরেজীকে মনে প্রাণে ভালবেসেছিল। তাই তার রেজাল্ট ভাল হয়েছিল। অনার্স মাস্টার্স শেষে সে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই লেকচারারের চাকরি পায়। গতকাল এপয়েন্টম্যান্ট লেটার হাতে পেয়েছে। আজ তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু মঞ্জুর বাসায় মিষ্টি নিয়ে এসেছে। এসেই মঞ্জুর বাসায় অসাধারন রূপবতী সানজিদাকে দেখল। মঞ্জু যেহেতু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাই মঞ্জুর এখনো অনার্সই শেষ হয় নাই। মঞ্জুর রেজাল্টও ভাল। বাবা ঐ সময় মারা না গেলে এই ছেলের ভবিষ্যত আরো ভাল হত। শাহেদ ভাবে মঞ্জুও তার মত ব্যর্থ মানুষ!
শাহেদ “এসেছি আধা ঘন্টা হল। তোর এত দেরি কেন?” মঞ্জু “ফার্মগেইটের একটা ট্রিপ ছিল। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। আজকাল জ্যামের কারনে খ্যাপ মেরে পোষায় না।” প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে মঞ্জু বলল “দোস্ত চাকরি পেয়েছিস, এইবার দ্রুত বিয়ে করে ফেল। অনেক দিন বিয়ের দাওয়াত খাই না।”
বিয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই শাহেদের চোখে সানজিদার চেহারা ভেসে আসল। এরকম সুন্দরী বৌ পেলে আর কী লাগে!
“মাত্র তো চাকরি পেলাম। কয়টা দিন যাক।”
মঞ্জু “আন্টিকে তো আমি চিনি দেখবি আগামীকাল থেকেই উনি তোর জন্য পাত্রী খুঁজতে বের হবেন। ইতিমধ্যে হয়তো মেয়ে পছন্দ করে রেখেছেন। পাত্রী পছন্দ হলেই বিয়ে করে ফেলবি, দেরি করবি না।”
শাহেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটা ভালভাবেই করে শুরু করেছে। প্রায় মাস খানেকের মধ্যে সে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে গেল। এদিকে মা পাত্রী দেখা শুরু করেছে। একদিন এক মেয়ে আরেকদিন আরেক মেয়ের ছবি কালেকশান করছেন। শাহেদ যার ছবিই দেখে তার সাথেই সানজিদার তুলনা করে। তুলনা করে ভাবে কই আগরতলা কই খাটের তলা! অবশ্য মাকে ব্যপারটা জানায় না। কারণ জানানোর পরেই ভেজাল শুরু হবে। প্রথমত, দুই ফ্যামিলীর মধ্যে স্টেটাসগত ব্যবধান প্রচুর। বাবা মা জীবনেও রাজী হবে না। ডাক্তার বাবা চাইবেন ডাক্তার বেয়াই। সানজিদার বাবা নেই। ভাই সিএনজি চালক, এটা বাবা মা কোন মতেই মানতে চাইবে না। দ্বিতীয়ত, সানজিদা মাত্র ইন্টার পাশ করল। ছাত্রী ভাল, মঞ্জু নিশ্চয়ই তার উচ্চ শিক্ষার পথ বন্ধ করবে না। এই মেয়েও নাকি ডাক্তার হতে চায়। মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা দিবে। দুনিয়ার সবাই শুধু ডাক্তার হতে চায়।
সানজিদা ডাক্তার হতে পারল না। মেডিক্যালে চান্স পেল না। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও না। সেও শাহেদের মত ব্যর্থ মানুষ! ঢাকার বাইরে তার ভাই তাকে পড়াবে না। তার চেয়ে ঢাকার যেকোন কলেজে পড়াবে। এ ব্যপারে মঞ্জু শাহেদের পরামর্শ চাইল। সানজিদার নাম শুনলেই শাহেদের সেই রূপের কথা চোখে ভাসে। শাহেদের ভয় হয় মঞ্জু আবার টের পেয়ে যায় কি না। শাহেদ প্রস্তাব দিল “সানজিদাকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা।” মঞ্জু ম্লান হেসে বলল “গরীবদের জন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বিলাসিতা। টাকা কোথায় পাব? ইচ্ছা তো আছেই।”
“আমি ব্যবস্থা করব। আমাদের শিক্ষকরা চাইলে প্রতি সেমিস্টারে একজনকে শিক্ষা বৃত্তির ব্যবস্থা করতে পারে। এছাড়া এক সেমিস্টারে প্রথম হলে পরের সেমিস্টারে টিউশন ফী লাগে না।” সে যদি এভাবে আট সেমিস্টার পড়ে তাহলে তাকে মূলত প্রথম সেমিস্টারের টাকা দিতে হবে।” সেই টাকাও বেশি না, যা করার আমি ব্যবস্থা করব। তুই শুধু ওকে ভর্তি করা।”
“ঠিক আছে, আমি সানজিদাকে আগামীকালই তোর কাছে পাঠাচ্ছি। কী করতে হবে না হবে ব্যবস্থা করে দিস।” কথা শোনার পরে শাহেদের মন কেমন যেন করে উঠল। আগামীকাল তাহলে সানজিদার সাথে দেখা হবে!
সেই রাতে শাহেদের উত্তেজনায় ঘুম আসল না!
চলবে……….
“এই যে লেকচারার সাহেব। কখন এসেছিস?” মঞ্জুর কথায় শাহেদের ঘোর ভাঙ্গে। মঞ্জু বাসায় এসেছে। তার পরনে সিএনজি ড্রাইভারের নীল পোষাক। শাহেদ একদিন মঞ্জুর এই পোষাক পরে সিএনজি চালিয়েছে। অল্পের জন্য পুলিশের কাছে ধরা খায় নি। সে এক মজার ইতিহাস।
আগের পর্বে জেনেছেন শাহেদ অনার্সে ইংরেজীকে মনে প্রাণে ভালবেসেছিল। তাই তার রেজাল্ট ভাল হয়েছিল। অনার্স মাস্টার্স শেষে সে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই লেকচারারের চাকরি পায়। গতকাল এপয়েন্টম্যান্ট লেটার হাতে পেয়েছে। আজ তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু মঞ্জুর বাসায় মিষ্টি নিয়ে এসেছে। এসেই মঞ্জুর বাসায় অসাধারন রূপবতী সানজিদাকে দেখল। মঞ্জু যেহেতু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাই মঞ্জুর এখনো অনার্সই শেষ হয় নাই। মঞ্জুর রেজাল্টও ভাল। বাবা ঐ সময় মারা না গেলে এই ছেলের ভবিষ্যত আরো ভাল হত। শাহেদ ভাবে মঞ্জুও তার মত ব্যর্থ মানুষ!
শাহেদ “এসেছি আধা ঘন্টা হল। তোর এত দেরি কেন?” মঞ্জু “ফার্মগেইটের একটা ট্রিপ ছিল। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। আজকাল জ্যামের কারনে খ্যাপ মেরে পোষায় না।” প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে মঞ্জু বলল “দোস্ত চাকরি পেয়েছিস, এইবার দ্রুত বিয়ে করে ফেল। অনেক দিন বিয়ের দাওয়াত খাই না।”
বিয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই শাহেদের চোখে সানজিদার চেহারা ভেসে আসল। এরকম সুন্দরী বৌ পেলে আর কী লাগে!
“মাত্র তো চাকরি পেলাম। কয়টা দিন যাক।”
মঞ্জু “আন্টিকে তো আমি চিনি দেখবি আগামীকাল থেকেই উনি তোর জন্য পাত্রী খুঁজতে বের হবেন। ইতিমধ্যে হয়তো মেয়ে পছন্দ করে রেখেছেন। পাত্রী পছন্দ হলেই বিয়ে করে ফেলবি, দেরি করবি না।”
শাহেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটা ভালভাবেই করে শুরু করেছে। প্রায় মাস খানেকের মধ্যে সে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে গেল। এদিকে মা পাত্রী দেখা শুরু করেছে। একদিন এক মেয়ে আরেকদিন আরেক মেয়ের ছবি কালেকশান করছেন। শাহেদ যার ছবিই দেখে তার সাথেই সানজিদার তুলনা করে। তুলনা করে ভাবে কই আগরতলা কই খাটের তলা! অবশ্য মাকে ব্যপারটা জানায় না। কারণ জানানোর পরেই ভেজাল শুরু হবে। প্রথমত, দুই ফ্যামিলীর মধ্যে স্টেটাসগত ব্যবধান প্রচুর। বাবা মা জীবনেও রাজী হবে না। ডাক্তার বাবা চাইবেন ডাক্তার বেয়াই। সানজিদার বাবা নেই। ভাই সিএনজি চালক, এটা বাবা মা কোন মতেই মানতে চাইবে না। দ্বিতীয়ত, সানজিদা মাত্র ইন্টার পাশ করল। ছাত্রী ভাল, মঞ্জু নিশ্চয়ই তার উচ্চ শিক্ষার পথ বন্ধ করবে না। এই মেয়েও নাকি ডাক্তার হতে চায়। মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা দিবে। দুনিয়ার সবাই শুধু ডাক্তার হতে চায়।
সানজিদা ডাক্তার হতে পারল না। মেডিক্যালে চান্স পেল না। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও না। সেও শাহেদের মত ব্যর্থ মানুষ! ঢাকার বাইরে তার ভাই তাকে পড়াবে না। তার চেয়ে ঢাকার যেকোন কলেজে পড়াবে। এ ব্যপারে মঞ্জু শাহেদের পরামর্শ চাইল। সানজিদার নাম শুনলেই শাহেদের সেই রূপের কথা চোখে ভাসে। শাহেদের ভয় হয় মঞ্জু আবার টের পেয়ে যায় কি না। শাহেদ প্রস্তাব দিল “সানজিদাকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা।” মঞ্জু ম্লান হেসে বলল “গরীবদের জন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বিলাসিতা। টাকা কোথায় পাব? ইচ্ছা তো আছেই।”
“আমি ব্যবস্থা করব। আমাদের শিক্ষকরা চাইলে প্রতি সেমিস্টারে একজনকে শিক্ষা বৃত্তির ব্যবস্থা করতে পারে। এছাড়া এক সেমিস্টারে প্রথম হলে পরের সেমিস্টারে টিউশন ফী লাগে না।” সে যদি এভাবে আট সেমিস্টার পড়ে তাহলে তাকে মূলত প্রথম সেমিস্টারের টাকা দিতে হবে।” সেই টাকাও বেশি না, যা করার আমি ব্যবস্থা করব। তুই শুধু ওকে ভর্তি করা।”
“ঠিক আছে, আমি সানজিদাকে আগামীকালই তোর কাছে পাঠাচ্ছি। কী করতে হবে না হবে ব্যবস্থা করে দিস।” কথা শোনার পরে শাহেদের মন কেমন যেন করে উঠল। আগামীকাল তাহলে সানজিদার সাথে দেখা হবে!
সেই রাতে শাহেদের উত্তেজনায় ঘুম আসল না!
চলবে……….