মরুর ফুল ৩০

জায়েদ আগেই সন্দেহ করেছিল যে লোকটি রাজ প্রাসাদে গিয়ে শাহজাদাকে খুন করার ব্যবস্থা করতে পারেন সেই লোক সাধারণ কেউ নয় কিন্তু তিনি যে একজন শাহজাদা এটা জায়েদের কল্পনাতেও ছিল না। তার মানে এক ভাই আরেক ভাইকে খুন করবে? অবশ্য কিসরার সালতানাতে এটা নতুন কোন ঘটনা না। রোমান সম্রাট তার বাবা ও পাঁচ ভাইকে খুন করে সম্রাট হয়েছেন। লোকটির নাম জানা হল-শাহজাদা শেরওয়া। রাজ প্রাসাদের প্রধান ফটকে প্রবেশের পরে জায়েদ সহ আরো কয়েকজন সেনা সোজা ডান দিকে চলল। শাহজাদা শেরওয়া সোজা মন্দিরের দিকে গেলেন। পিছনে ফিরেও তাকালেন না। জায়েদ যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেই দিকে রাজকীয় সেনাদের অফিস। রাজ প্রাসাদে প্রবেশ করার পূর্বে জায়েদকে রাজ প্রাসাদের একটা ম্যাপ এঁকে কোথায় কী কী আছে তা দেখানো হয়েছিল। জায়েদ সামনে এগিয়ে গিয়ে একটা অফিসে প্রবেশ করল। তাকে বলা হয়েছে ডান দিকে গিয়ে তৃতীয় নম্বর বাড়ীতে ঢুকতে। গেইটে একজন সেনা দাঁড়িয়ে আছে। সে জায়েদকে চোখের ইশারায় একটা কক্ষ দেখিয়ে দিল। বোঝা গেল এই সেনা শেরওয়ার লোক। জায়েদ সেই কক্ষে প্রবেশ করল। কক্ষে কেউ নেই। কিছুক্ষণ পরে একজন সেনা এল। সে বলল “তুমি দোতলায় উঠে বারান্দার পাশে দিয়ে দুই নম্বর কক্ষে প্রবেশ করবে। সাবধান কেউ যেন কিছু টের না পায়। এ জায়গাটা সব সময় সেনা গোয়েন্দাদের নজর থাকে। এই নাও সেই কক্ষের চাবি। আর পাশের কক্ষে ওদের জন্য খাবার রেডি আছে। প্রতিদিন দুইবার তাদের খাবার দেয়ার জন্য সেনা সদস্য ঐ কক্ষে প্রবেশ করে। তুমি খাবার নিয়ে যাও।”
জায়েদ সাবধানী পায়ে হাঁটতে লাগল। এমনিতেই তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এখন যদি টের পায় সে এখন রাজ প্রাসাদে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে গলা কেটে ফেলবে। জায়েদ দুরু দুরু বুক নিয়ে সেই কক্ষের তালা খুলল। কক্ষের ভেতরে তার মনের মানুষ রয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করে সে মেহরিন ও তার মায়ের দিকে ইশারা করল যাতে শব্দ করে কোন কথা না বলে।
“তুমি এখানে কীভাবে এসেছ?” খালেকদুনের স্ত্রী ফিসফিস করে বলল। জায়েদ কারাগারের বাইরে আছে সেটা তিনি জেনেছেন কিন্তু রাজ প্রাসাদ পর্যন্ত যে পৌঁছে যাবে এটা কারো কল্পনাতেও ছিল না।
“সে অনেক কথা। শাহজাদা শেরওয়া আপনাদের বের করার ব্যবস্থা করবে বলে আমাকে কথা দিয়েছেন। তার বিনিময়ে আমাকে দিয়েও কিছু কাজ করিয়ে নিবেন বলে কথা আদায় করে নিয়েছেন।”
“আপনাকে কী কাজ করতে হবে?” মেহরিনের কন্ঠে ব্যাকুলতা। সে জানে এই শাহজাদারা কখনো ভাল কাজ করতে জানে না।
“দুই জন লোককে খুন করতে হবে-একজন শাহজাদ ফররুখ আরেকজন প্রধান পূজারী মাকান”
“আপনি ধরা পড়ে যাবেন। এরা কত নিরাপত্তার মধ্যে থাকে আপনি জানেন?” মেহরিন মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।
“আমি না হয় ওদের হত্যা করে ধরা পড়লাম কিন্তু তাতে যদি তোমরা মুক্তি পাও অসুবিধা কী?”
“অসুবিধা কী মানে? আপনি না থাকলে আমার বেঁচে থাকার প্রয়োজনই বা কী? প্রাসাদ থেকে মুক্তি পেয়ে কী করব?” জায়েদের মনে হতে লাগল এই মেয়ের জন্য তার দু’জন মানুষ কেন একশ মানুষ খুন করতেও আফসোস হবে না। তার সময় শেষ, আর কথা বলা যাবে না।
“বাবা আমি তোমার প্রতীক্ষায় রইলাম। বেঁচে থাকতে আমার মেয়ে রাজ পরিবারের দাসী হবে তা আমি সইতে পারব না।”
---
শাহজাদী বিলকিসের কক্ষ। আততায়ী মাসউদ দাঁড়িয়ে আছে।
“আমরা পুরো মাদায়েন চষে বেড়াচ্ছি কিন্তু এখন পর্যন্ত জায়েদের দেখা পেলাম না। মাদায়েন শহর অনেক বড়। এখানে কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এছাড়া যুদ্ধে হারার পরে রাজকীয় সেনাদের কেউ সাহায্য করতে চাচ্ছে না। সবার মধ্যে যুদ্ধ বিরোধী মনোভাব কাজ করছে।”
“আমি মাদায়েনের খবর জানতে চাই না। আমি শুধু জায়েদের খবর জানতে চাই” শাহজাদী রেগে গেছে “তুমি কি জান জায়েদ যদি মুখ খোলে তাহলে কার কার ফাঁসি হবে? এই প্রাসাদেই জায়েদের পক্ষে কয়েকজন রয়েছে। রাণি শিরি, ভবিষ্যৎ সম্রাট মারোজা সহ আরো কিছু শাহজাদা।”
মাসউদ চুপ করে রয়েছে। শাহজাদী আবার কথা বলল “চুপ করে আছ কেন? একটা বুদ্ধি দেও। খালেকদুনের স্ত্রী কণ্যা রাজ প্রাসাদে আছে। সম্রাটে মতি গতি যেকোন মুহুর্তে বদলে গেলে সম্রাট তাদেরকে মুক্ত করে দিবেন। তখন সম্রাট যদি তাদের কথা শোনেন তাহলেও তদন্ত করলে আমরা ধরা পড়ে যাব। এছাড়া রাণি শিরি দুই দিন পরে ঠিকই সম্রাটকে পটয়ে ফেলবেন। তখন তিনি আগের মত ক্ষমতা পেয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে আমাদের বিপদ হতে পারে।” হঠাত শাহজাদী মুখে হাসির রেখা দেখা গেল “একটা বুদ্ধি পেয়েছি। এই বুদ্ধি কাজে লাগাতে পারলে সম্রাট খালেকদুনের স্ত্রী ও কণ্যার ফাঁসি আজই কার্যকর করবেন।”
মাসউদ উদগ্রীব হয়ে বলল “কী সেই বুদ্ধি শহাজাদী?”
“শাহজাদা ফররুখ অসুস্থ। মেহরিন যে ছুরি দিয়ে তাকে আঘাত করেছে সেই ছুরি মরিচা ধরা ছিল। ফররুখ মেহরিনকে দাসী হিসেবে রাখতে চেয়েছে। না হলে সম্রাট তার মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করত। এখন শাহজাদা ফররুখ যদি অসুস্থ অবস্থায় মারা যায় তাহলে এর জন্য দায়ী হবে মেহরিন। আর ফররুখের মৃত্যু হলে সম্রাটের মাথা পুরাই খারাপ হয়ে যাবে। তখন ঐ অবস্থায় তিনি মেহরিন ও তার মায়ের মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করবেন। রাজকীয় সেনারা ফররুখের মৃত্যু সহ্য করবে না। তারা সাথে সাথেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করবে। আর রাণি শিরি এখন অসহায়। তার কথা এই মুহুর্তে কেউ শুনতে চাইবে না।”
মাসউদের মুখ হা হয়ে গেল “শাহজাদাকে হত্যা করতে হবে? কীভাবে?”
“এই মুহুর্তে শাহজাদা মারাত্মক অসুস্থ। খাবারে বিষ মিশিয়ে দিলে সেই খাবার খেয়ে মারা গেলে কেউ খাবারে বিষ নিয়ে সন্দেহ করবে না। সবাই বুঝবে মেহরিনের সেই ছুরির যখমে অসুখ বেড়ে গিয়ে শাহজাদা মারা গেছে।”
---
এ বিশাল রাজ প্রাসাদের অনেকগুলো কক্ষ। জায়েদ যদি এলোমেলো ভাবে ঘুরে বেড়ায় তাহলে কেউ না কেউ সন্দেহ করবে। সে এমনভাবে হাঁটছে যাতে মনে হয় সে এখানে নিয়মতি টহল দেয়। ভেতরে প্রবেশ করে একটা নির্দিষ্ট কক্ষে ঢুকে বাবুর্চীদের পোষাক পরে নিল। এখানকার বাবুর্চীদের নির্দিষ্ট পোষাক রয়েছে। শাহজাদা শাহাজদীদের খাবার সময় হলে তারা যার যার নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে খাবার পরিবেশন করে থাকে। রান্না করার জন্য কয়েকশত লোক রয়েছে। এক শাহজাদার পরিবারের বাবুর্চীকে আরেক শাহজাদার পরিবার অনেক সময় চিনেই না।
শাহজাদা ফররুখের নির্দিষ্ট কক্ষের সামনে দিয়ে জায়েদ একবার ফিরে আসল। কক্ষে এক মহিলার কন্ঠ। অনেকক্ষণ পরে সেই মহিলা বের হল। মহিলাকে দেখে অসুস্থ রোগীদের সেবিকা টাইপের কেউ মনে হল। পা টিপে টিপে জায়েদ শাহজাদার কক্ষে প্রবেশ করল। শাহজাদা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন। ওনার মাথার পাশে একটা টেবিলে একট বাটিতে ঔষধ রাখা আছে। জায়েদ জামার ভিতর থেকে ছুরি বার করল। ছুরি বসিয়েই শাহজাদার মুখ চেপে ধরতে হবে যাতে শব্দ করতে না পারে। দুই একবার ইতস্তত করতেই কক্ষের বাইরে কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেল। শাহাজদাকে খুন করে জায়েদকে পালাতে হবে। যদি পালাতে না পারে তাহলে বিপদ। জায়েদ কক্ষের ভেতরে একটা মূর্তির পেছনে গিয়ে লুকাল। পায়ের শব্দ যদি রুমে প্রবেশ করে তাহলে বিপদ। এই কক্ষে প্রবেশ ন করে অন্য কক্ষে গেলে জায়েদ কাজ সেরেই চলে যাবে।
কিন্তু জায়েদকে হতাশ করে দিয়ে একজন লোক ভেতরে প্রবেশ করল। উনি পানি দিতে এসেছে। লোকটি পানি দিয়ে চলে যাওয়ার পরে জায়েদ কিছুক্ষণ মূর্তির পেছনে বসে রইল। সে মুর্তির পেছন থেকে বের হতে যাবে ঠিক এমন সময়ে কক্ষে আরেক লোক প্রবেশ করল। জায়েদ মুর্তির পেছনে কাঠের মত শক্ত হয়ে রইল। কারণ জায়েদ এই লোককে চেনে। মাদউদ নামের এই রাজকীয় সেনা বেশ কয়েকবার কারাগারে গিয়েছিল। তবে সে কি শাহজাদা ফররুখের লোক? কিন্তু মাসউদকে এমন চোরের মত লাগছে কেন? তার আশেপাশে তাকানোর ভঙ্গি দেখে মনে হয় সে নিজেও এখানে লুকিয়ে লুকিয়ে এসেছে। একজন রাজকীয় সেনা রাজ প্রাসাদে লুকিয়ে আসবে কেন?
মাসউদ এদিক সেদিক তাকিয়ে যখন নিশ্চিত হল কেউ তাকে দেখছে না তখন সে জামার ভেতর থেকে একটা জিনিস বের করল। ব্যপার কী? মাসুদও কি জায়েদের মত শাহজাদা ফররুখকে খুন করতে এসেছে নাকি? কিন্তু তার হাতে তো ছুরি নেই! তাহলে? মাসউদ শাহজাদার মাথার কাছে থাকা ঔষধের পেয়ালাতে তরল জাতীয় জিনিস ঢালল। তরল ঢালার পরে সেই জিনিস জামার ভেতরে লুকিয়ে ফেলল। শাহজাদা ফররুখকে হত্যা করা যেমন জায়েদের জন্য জরুরি তেমনি মাসউদের রহস্য বের করাও জায়েদের জন্য জরুরি। জায়েদ এতদিন কী কারণে কার স্বার্থে কারাগারে ছিল তা মাসউদকে ধরলে জানা যাবে। কিন্তু তার আগে মাসউদের গতি বিধি সম্মন্ধে জানা দরকার। মাসউদ যদি শাহজাদাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করতেই চায় তাহলে জায়েদের কাজ সহজ হয়ে গেছে। তার শুধু শুধু মানুষ খুন করার প্রয়োজন নেই। সে সিদ্ধান্ত নিল মাসউদের পিছু নিবে যদিও এটা অনেক কঠিন কাজ। মাসউদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতেই জায়েদ মাসউদের পিছু নিল। কিছুদূর গিয়ে জায়েদ দেখল মাসউদ একটা কক্ষের বাইরে দাঁড়ানো এক দাসীকে কী যেন বলছে। বিশাল রাজ প্রাসাদে কত লোক কত প্রয়োজনে হাঁটাহাঁটি করছে। কে কাকে চেনে? তবে প্রত্যেকের গায়ে নির্দিষ্ট পোষাক রয়েছে। পোষাক দেখেই প্রত্যেককে একেকটা ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়। দাসী ভেতরে গিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই বেরিয়ে এসে মাসউদকে কী যেন বলল। মাসউদ দাসীর কথা শুনে ভেতরে প্রবেশ করল। এদিকে দাসী কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
---
শাহজাদা শেরওয়া অগ্নি মণ্ডপের সামনে মাথা নুয়ে পূজা করছে। মন্দীরে সে একাই অবস্থান করছে। তার শরীরে পূজারীদের পোষাক। অনেকক্ষণ পরে তিনি মাথা তুললেন। দুই হাত কড় জোড় করা। আকাশের দিকে তাকালনে। মন্দিরের গঠন এমনই যে এখান থেকে আকাশ দেখা যায় অর্থাৎ উপরের দিকে ছাদ নেই। বর্ষাকালে রাজ প্রাসাদের লোকজন ছাদওয়ালা আরেক মন্দীর ব্যবহার করে।
আকাশের দিকেও তিনি অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। এবার দুই হাত দুই দিকে তুলে উপরে তুলে বললেন “হে ঈশ্বর, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্রাজ্য আজ অনুপযোক্ত লোকের হাতে রয়েছে। ইরান সম্রাটের অযোগ্যতার কারণে আজ জরদশতের জন্মস্থান পবিত্র শহর আরমিয়া খ্রিস্টানদের দখলে। আমাদের পবিত্র অগ্নি খ্রিস্টানরা নিভিয়ে দিয়েছে। তোমার হাজার হাজার পূজারীকে ওরা হত্যা করেছে। আজ এই অযোগ্য সম্রাটের বেঁচে থাকার যোগ্যতা নেই। আমি তোমার অগ্নির সম্মান রক্ষার্থে আজ এই সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করছি। তুমি আমার সহায় হও।”
এরপরে অনেকক্ষণ ধরে তিনি জপ করলেন। জপ শেষে হাসি মুখে রাজ প্রাসাদে ফিরলেন। তার কক্ষেই কিছুক্ষণ পরে জায়েদ আসল।
“কাজ সেরেছে?”
“এতক্ষণে মনে হয় আমার হয়ে কাজ আরেকজন করে ফেলেছে!”
“মানে?”
জায়েদ শাহজাদাকে সব খুলে বলতেই শেরওয়া বলল “সর্বনাশ, তুমি তো বড় ভুল করেছ। তুমি মেহরিনের মৃত্যু পরোয়ানায় সাক্ষর করে ফেলেছ!”
জায়েদ হা করে রইল। সে কিছু বুঝল না।
শেরওয়া বলল “শাহজাদা ফররুখ যদি নতুন করে ছুরির আঘাতে মারা যায় তাহলে সবাই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ফল বলে সন্দেহ করবে কিন্তু সে যদি বিষ খেয়ে মারা যায় তাহলে কেউ বিষ খাওয়ার বিষয়টি সন্দেহ করবে না। এমনিতেই তার অবস্থা গুরুতর খারাপ দেখেছি। সে মারা গেলে সবাই ভাববে মেহরিনের ছুরির আঘাতে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। বিষের ব্যাপারে কেউ সন্দেহ করবে না। অবশ্য যদি তাকে হেকিম সাহেব ঔষধ খাইয়ে দেয় তাহলে তিনি বিষের গন্ধ টের পাবেন। কিন্তু হেকিম সাহেব তো দিনে দুই বার আসেন। ঔষধ খাবার সময় আসেন না। শাহজাদার দাসী ঔষধ খাইয়ে দেয়।”
জায়েদ কিছুই বুঝল না। হঠাত এক সেনা দৌড়ে চিৎকার করে কক্ষের সামনে দিয়ে গেল। সে চিৎকার করছে “শাহজাদা ফররুখের অবস্থা খারাপ। জলদি হেকিম ডাকেন। ওনার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”
শাহজাদা শেরওয়া জায়েদকে বলল “তুমি এখানেই থাক। আমি দেখছি।” তিনি ফররুখের কক্ষে দৌড় দিলেন।
শাহজাদী বিলকিস সহ আরো দুই জন শাহজাদী ও তিন জন রাণি ইতি মধ্যে সেখানে হাজির। দুই জন শাহজাদাকে দেখা গেল দৌড়ে এদিকে আসছে। ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে। ফররুখের অচেতন দেহ পড়ে রয়েছে। এক সেনা কর্মকর্তা শাহাজাদার হাত চেপে ধরে পালস দেখলেন, নাকের কাছে আঙ্গুল দিয়ে দেখলেন, বুকে হাত দিলেন। এরপরে নিচের দিকে চোখ নামিয়ে ফেললেন, অর্থাৎ সব শেষ। শাহাজাদার মৃত্যূ হয়েছে। শাহাজদী বিলকিস সবার আগে কান্না শুরু করল। তার কান্নার সাথে সাথে দুই রাণি ও বাকী শাহজাদীরাও কান্না শুরু করেছে। বিলকিস কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল “আমি সেদিনই বুঝেছি যেদিন আমার ভাই খালেকদুনের মেয়ের ছুরির আঘাতে.....” সে কান্নার দমকে আর কিছুই বলতে পারল না। সে আবারো একই কথা দুই তিনবার রিপিট করল। শেরওয়া লক্ষ্য করল বিলকিস ইচ্ছে করেই বার বার খালেকদুনের মেয়ের নাম নিয়ে সবার দৃষ্টি তার দিকে সরাবার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টায় সে সফল হল। আশেপাশের মোসাহেবরা সবাই বলাবলি করতে লাগল ছুরির আঘাতের কারনেই শাহজাদার মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যে সম্রাট কক্ষে চলে এসেছেন। তিনি কাঁদছেন তার সবচেয়ে প্রিয় ছেলের মৃত্যুতে। বিলকিসের কথাগুলি তার কানে ঢুকল। কান্না করতে করতেই তিনি হুকুম দিলেন “খালেকদুনের স্ত্রী, কণ্যাকে দরবারে নিয়ে এসো। আমি তাদের নিজ হাতে হত্যা করব।”
রেসিপি দেখুন
No comments :

No comments :

Post a Comment