আমি জানি তুমি সুখে নাই

মিথ্যা ভালবাসা জন্য মা বাবার মুখটা শেষ বার ও দেখি নাই,  জেল খাটা দেশ ছড়া  সবকিছুর পর আমি আজ একজন সফল মানুষ  শুধু  মা বাবা  শেষ  দেখাটা ও দেখি নাই,আর নিজের সংসার করা হলো না।

১৯৯৭ সালের ঘটনা,আজ থেকে ২৬ বছর আগে  আমি আমার এক চাচাতো বোনের  সাথে ৩ বছরের রিলেশন এর পর পালিয়ে বিয়ে করা।বিয়ের  একদিন  পর মেয়ের বাবা আমি সহ আমার মা বাবা ২ বোন আর ২ ভাইকে আসামী করে মামলা করে।

আমি সহ আমার বন্ধু কে এরেস্ট করে পুলিশ। মেয়েকে    পুলিশ তাদের জিম্মা  নিয়ে যায়। মেয়ে পুলিশ এর সামনে সাক্ষী  দেয় আমি জোর করে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছি।আমি ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধ বিয়েও নির্যাতন করি।

পুলিশ কে মেয়ের  বাবা টাকা দিয়ে আমাকে  আর আমার বন্ধু কে ইচ্ছেমত পিটালো।এর পরের  দিন কোর্ট এ চালান  করে দেয়। পুলিশ  আবার রিমান্ড চায়,৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এই ৩ দিন অনেক অত্যাচার করে পুলিশ। আজ  সারা শরীর ব্যাথা  করে  পুলিশ  এর মারের ব্যাথা।  

৩ দিনের রিমান্ড  শেষ  আবার আদালতে নেওয়া হলো আমাদের  জেল এ নেওয়া  হলো ১১ মাস জেল খাটার পর জামিন এ বের হয়ে আসলাম। জেল খানা থাকা অবস্থা বাবাকে হারালাম।

জামিন বের হয়ে আসলে  মা ঘরে ঢুকতে দেয় নাই।দরজা  থেকে তাড়িয়ে  দেয়।যেন  আর কোন দিন এই বাড়িতে না আসি।আমার জন্য বাবা অপমান লাঞ্ছিত হয়ে স্ট্রোক করে পৃথিবী থেকে শেষ  বিদায়  নেয়।

 বাড়ি  থেকে যেদিন বের হয়ে আসি আমার পকেট  বোনের দেওয়া  ১১০০ টাকা ছিলো। সেই ১১ শ টাকা দিয়ে মেহেরপুরের মজিব নগর হয়ে ভারতে চলে যাই। সেইখানে  ৩ মাসের  উপর ছিলাম। এইখানে ২ মাসের মত  কলকাতা নিউমার্কেটে একটা দোকানে  কাজ করি।ভারতীয় রুপিতে ৬ হাজার  ৭ শত টাকা নিয়ে  দালাল  এর মাধ্যমে পাকিস্তানে চলে যাই। এইখানে  আসার  পর ২ বছর করাচীতে এক বাংলাদেশে ভাইয়ের মাধ্যমে সাগরে মাছ  ধরার কাজ করে  ২ বছরে পাকিস্তানী টাকা ৬ লাখ টাকা জমা করি। এই টাকা দিয়ে পাকিস্তান থেকে ইরান  হয়ে তুরস্ক দিয়ে গ্রীস  চলে আসি। গ্রীস  থেকে জার্মানি চলে আসি।অনেক  পরিশ্রম  আর সফলতার পর আমি এখন জার্মানি তে একজন সফল রেস্টুরেন্ট ব্যাবসায়ী।

এখন আমার জার্মানি ৪ টা রেস্টুরেন্ট আর ৭ টা কপি শফ।জীবনে এতো সফলতার পর ও আমার কিছু এ নাই।

মা কে হারালাম, বাবাকে হারালাম কারো লাশ ও দেখি নাই।যে বোনটা আমাকে  ১১ শ টাকা দিয়েছে,শুনেছি  ওর সাথে ওর স্বামীর ডিভোর্স হয়েছে আমার জন্য।আমি জেল থেকে বের হয়ে আসার পর আমার বোন আর ভাইকে  এরেস্ট করায়।বোন এরেস্ট এর পর বোনের স্বামী আমার বোন কে  ২ মেয়ে আর ১ ছেলে সহ ডিভোর্স  দেয়।

বোনটা  ও অসুস্থতা আর অপমান  আর নিজের সংসার হারানোর যন্ত্রণা তিল তিল করে  মারা যায়। আমি কিছু এ জানতাম  না।কারণ আমার সাথে বাংলাদেশের কারো সাথে যোগাযোগ ছিলো  না ১২ বছর।১২ বছর পর সফল হয়ে বাংলাদেশ  এ আসি ভিজিট ভিসা নিয়ে।নিজের এলাকা  যাই । কেউ চিনেনা, কিছু মুরুব্বি  ছিনে  আমাকে। সেই যে দেশ থেকে ১১ দিন পর আসলাম  আর কখনো  দেশে  যাই  না।২ ভাই কে জার্মানি তে নিয়ে আসলাম। ১ বোন আর  তার ছেলে মেয়েদের নিয়ে আসলাম। যে বোন মারা গেছে উনার ১ মেয়েকে  আর ছেলেকে  জার্মানিতে নিয়ে আসলাম।

এতোকিছুর পর ও আমার কিছু এ নাই।এখনো ভালবাসি সেই ভালবাসার মানুষটিকে।যে আমার জীবন কে ধংস করে দিয়েছে। শুনেছি  ও বিয়ে  করে ওর ২ ছেলে মেয়েকে  বিয়ে ও দিয়েছে।

সেইদিন  আমার বাবার টাকা ছিলো  না আর ক্ষমতা ছিলো  না বলে আমি সহ আমার পুরো পরিবার শাস্তি পেয়েছি। আজ আমার  টাকা  ও আছে ক্ষমতা ও আছে।কিন্ত এই টাকা আর ক্ষমতা দিয়ে আমি শুন্য।

ফেসবুকে অনেক  গল্প পড়ি সবার জীবনের, ২৬ বছর পর মনে হলো নিজের জীবনের গল্পটা সবার  সাথে শেয়ার  করি।

মনে রাখবেন কাউকে  ঠকিয়ে কেউ সুখী  হয় না,আমি জানি তুমি সুখে নাই।কারণ তোমার স্বামী একজন  চরিত্রহীন মানুষ।

টাকা  আর ক্ষমতার অহংকার  কখনো  দেখাতে নাই,যে আজ রাজা সে আগামীকাল  ফকির। তোমার  বাবার ক্ষমতা আর টাকা ২ টা এক সাথে ধংস হয়ে গিয়েছিলো,কারণ  আল্লাহ  অহংকারী কে পছন্দ করে না।তোমার  বাবা ক্যান্সারের চিকিৎসার সব টাকা আমার দেওয়া,তারপর  তোমার  ভাইরা তোমার বাবাকে  বাঁচাতে পারে নাই।

ভালো  থাকুক  সকল প্রতারকরা।

মুগ্ধ ভাইয়ার ভালোবাসার মহারানীর পোস্ট

মুগ্ধ ভাইয়ার ভালোবাসার মহারানীর পোস্ট! 😅💔

 ৩.৪১! আশ্চর্য! আমি কানতেছি কেন!!

jaaan,

তুই আজ ধরা, ছোঁয়া, রাগ, অভিমান, ভালোবাসা সকল কিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেছিস। আমি যতই তোকে ডাকি, তুই আর কোনদিন বলবি না, " hae jaan bolo"

আমি আর কখনো তোর গলা শুনব না। জীবন কত নিষ্ঠুর শিক্ষা দিয়ে দিলো আমাদের বল। আমার পোস্ট, স্টোরির একজন ও ভিউয়ার হলে সেটা তুই ছিলি। আজকে আমার এই লেখা ও তোকে আর স্পর্শ করবে না। 

আমি অনেক কপাল করে তোকে পাইছি, আল্লাহ যেন এমন কপাল কাউকে না দেয়।

মুগ্ধ ভাইয়ার ভালোবাসার মহারানীর পোস্ট


২০ জুন ২০২১, 

তুই প্রথম আমাকে বললি তোর আমাকে ভালো লাগে। আমি টিপ পরি তাই তুই একটা ফেসবুক পোস্ট করলি টিপ নিয়ে। আমি ভাবলাম আতরা ফাতরা ছেলে তুই, খালি খালি ফ্লার্ট করতেছিস, তারওপর পড়াশোনায় ডাব্বা। এরকম ছেলের সাথে কথা বলতে আম্মু নিষেধ করে দিছে। 

এরপর ইনবক্সে অনেক ফ্লার্ট চলল তোর.......

অক্টোবর ২০২১ 

করোনার পরে আমাদের টার্ম ফাইনাল শুরু। সেবার ফিজিক্স পরীক্ষার প্রশ্ন ভীষণ কঠিন, আমি হিমসিম খাচ্ছিলাম এনসার করতে। চোখ পরল তোর দিকে, দেখি বেঞ্চে থুতনি দিয়ে অসহায় এর মত তাকিয়ে আছিস খাতার দিকে। মায়া লাগল, আহারে লিখতে পারছিস না। রিটেক কোর্স টা এই বছর পাশ করলি। 

২৫ নভেম্বর ২০২১,

 তুই আমাকে বিকেলে কল করলি অর্পা কই তুই। ভার্সিটি ডে আমি বের হব না কেনো, জোরাজোরি করেও বের করতে পারলি না। আমি একটু পরে কল দিয়ে বললাম আমি বের হব, তুই ততক্ষণে শীববাড়ি চলে গেছিস। সেদিন বের হওয়া হলো না। পরেরদিন হলের নিচে তোর আগের হরনেট টা নিয়ে এসে কল দিলি, নাম। আমি তো অবাক এ পাগল বলে টা কি, এভাবে বাইকে চড়ে যাব সবাই কি বলবে! তুই তো নাছোড়বান্দা। নামতে বলছি নাম। তারপর আর কি নামলাম। গেলাম বার্গার খেতে। নাগা নিয়ে তোর সে কি নাকের জ্বল চোখের জ্বল এক হয়ে গেলো। এরপর আস্তে আস্তে শুরু হলো আমাদের ডেটিং পিরিয়ড। 

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২,

তুই প্রপোজ করলি তাও এটা বলে যে আজকে থেকে সব মেয়ে বাদ, তুই আমার সেটেল হওয়া অবধি ওয়েট করবি। আমি তোকেই বিয়ে করব। সেদিন আমরা ভীর- জারা সিনেমাটা দেখছিলাম।

আমরা একবছর একদম উথাল পাথাল প্রেম করলাম।এরপর আমাদের লাগল একদিন মহা ক্যাচাল। ব্যাচমেট, কেউ কাউকে গুনলাম না। যাহ থাকবই না। 

আমি কেঁদে একদম একাকার। তুই তো মুখ বোঝা এমনিই। কাউকে বলতে পারলি না খালি সিগারেট আর সিগারেট। 

১২ দিন পর আমরা আর পারলাম না। সব ভেঙে চুরে কান্না কাটি শেষে আমি তোকে তপন দার দোকানে জড়ায়ে ধরলাম। 

এরপর তিন মাস একদম একের প্রেম চলল। তারপর আবার লাগল,  এবার ও কেউ কাউকে পাত্তা দিলাম না। করলাম ব্রেকআপ। 

টিকল না ৭ দিন ও। 

তারপর আবার সব ঠিক করে র‍্যাগ এর আগে লাগল মহা ক্যাচাল। তুই কনভেইনার সে কি ব্যস্ত। আমি তো পাই ই না।

৯ অক্টোবর ২০২৩,

তোর জন্মদিন, আমি রান্না করে রাখলাম তুই র‍্যাগ নিয়ে দৌড়াতে গিয়ে আর রান্না খাওয়ার সময় হলো না। সে কি অভিমান আমার। এই নিয়ে দিলাম র‍্যাগ এর আগে আগে সব শেষ করে। তখন একটা বাজে অবস্থাই হলো আমাদের, একেতো র‍্যাগ তারওপর জুনিয়র নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি। কেউ কারো মুখ দেখি না।

কিন্তু ভেতর তো পুরে ছাড়খার। 

২৩ নভেম্বর ২০২৩,

তোর কল আসল, আমি ধরলাম না। সাগরে বললাম তোর বন্ধুকে বলবি আমাকে আর কল না দিতে। তুই সে কত বার কল, ম্যাসেজ। শেষে অনলাইন থেকে একটু কল দিয়ে হ্যালো হ্যালো শুনলি। 

তখন তোর কি বাজে অবস্থা। 

৩০ নভেম্বর ২০২৩,

রিফাহর জন্মদিন শেষে কাদের ভাই এর দোকানে গিয়ে দেখি তুই বসা, দেখেই আমি সরে চলে আসলাম। তুই আমাকে এক ঝলক দেখে চুপচাপ বের হয়ে বাইক এমন টান দিলি। আমি বুঝতে পারলাম যে জ্বলতেছে তাও আমি নরম হলাম না। একঘন্টা পর শুনি তুই রুপসা গিয়ে বাইক নিয়ে পরে গেছিস। কি যে কষ্ট টা পেলাম, তাও মন নরম হলো না।

১ ডিসেম্বর ২০২৩,

আননোন নম্বরের কল, 

-হ্যালো কে

-আমি

শুনেই বুঝলাম আমার ছোট মানুষ টা।

হ্যাঁ বল

তুই একটু হলরোডে আয়, আমি প্রমান করে দিব জুনিয়র এর সাথে আমার কিছু নাই। 

আমি এক্সিডেন্ট করছে দেখে আর আটকাতে পারলাম না, গেলাম। মুখের দিকে তাকায়ে কি মায়া লাগল।

কিছুক্ষন পরে আমার হাত ধরে, হাঁটুতে মাথা দিয়ে বললি

," তোরে ছাড়া আমার শান্তি লাগে না। তুই পুরা আম্মুর মত। আমার সব আছে, শান্তি নাই, অর্পা তোর ফেরত আসা লাগবে না। আমি তোর বাসায় প্রস্তাব দেব ৬ মাস পর "

আমি তখনো চুপ।

- আচ্ছা শামীম চৈতির মত বিয়ে করে ফেলি তাহলে লুকায়ে। 

আমি জানি দুজনের কেউ ই রেডি না বিয়ে করতে। তাও, কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারি না। কেনোভাবেই হারাতে দেব না। 

আমি টাইম চাইলাম (যদিও নাটক)

১৩ ডিসেম্বর ২০২৩,

আমি সিলেট যাব, মেহরাব কে বলে রাখছিলাম। মুগ্ধকে বললাম আমি সিলেট যাব। এখন ও ও যাবে। আমার জন্য হেলমেট কিনল। স্নিগ্ধ, জিদান ওদের ও রাজি করালো।

সেদিন আমাকে মেইনগেইট থেকে বাইকে চড়ায়ে সেই সাস্ট অবধি নিয়ে গেলো। কি কষ্ট টাই না হইছিলো একা একা এতদূর ড্রাইভ করতে! চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে। তাও সারাপথ কত কথা বললাম আমরা দুজন দুজনের সাথে। 

১৫ ডিসেম্বর ২০২৩,

আমরা শ্রীমঙ্গল গেলাম, রাতে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলায় কত কত সত্যি বের হয়ে আসল তোর। আমি যে মাইর টা দিলাম...............

পরেরদিন আমাকে খুলনা নামায় দিলি।

২৯ মার্চ ২০২৪,

আমি ঢাকা গেলাম। আজমপুর যেখানে তোর লাশ টা পরে ছিলো। আমি ওখানে নামলাম। পরেরদিন তুই, আমি, স্নিগ্ধ, আদ্রিতা গেলাম শপিং এ। নিজে খুঁজে খুঁজে আমাকে পছন্দ মত দুইটা জামা কিনে দিলি। ট্রায়াল রুম থেকে বের হলেই তোর চোখে মুখে হাসি। jaaan কি সুন্দর লাগছে তোকে! আর তোর বরাবর এর প্রিয় মি. মানিকের বার্গার।ওটা তো আমাকে তুই খাওয়াবিই। 

১১ মে ২০২৪,

রক এন্ড রিদম এর কনসার্ট। আমি আতিফ আসলামের টায় যেতে পারি নি। এটাতে যাবই। জিদান, স্নিগ্ধ, রাহাত ওরাও আসবে। গেলাম সবাই। গেটে ঢুকতে মারামারির মত শুরু হলে, তুই সে কি আমাকে বারবার হাত দিয়ে সরায়ে দিচ্ছিস। তোর গায়ে ধাক্কা লাগতেছে। আমার গায়ে যেন না লাগে। ঢুকলাম কোনোভাবে। কতবার জড়ায়ে ধরলাম, চুমু খাইলাম। শেষে অনি হাসান পূর্নতা বাজাবে আর মিজান গাইবে। আমি দেখি না। তুই আমাকে বললি কাঁধে বস। আমিও আর দুনিয়ায় চিন্তা না করে বসলাম কাঁধে চড়ে। তুমি সেই পূর্নতা আমার অনুভবে"" শুনলাম তোর কাঁধে বসেই। সেদিন সারারাত ঢাকা শহরে চড়ে বেড়াইলাম। হাতিরঝিল এসে আমি মুগ্ধর পিঠে হ্যালান দিয়ে বসে আছি। জিদান বললো," অর্পার ই ভালো" 

হ্যাঁ আসলেই জিদান। আমার ই ভালো ছিলো দিন।

পুরান ঢাকার কত খাবার দাবার খেলাম আমরা। টিএসসি তে স্নিগ্ধর সাথে গ্যান্জাম করলাম। পরেরদিন বিকেলে আমাকে বাসে তুলে দিলি তুই।

২১ জুন ২০২৪,

অঙ্কুরের বিয়েতে তোকে সারপ্রাইজ দিতে গেলাম। তুই আগেই টের পেয়ে গেছিলি। মন খারাপ আমার তাও তুই বললি, "jaaan ami ter pai nai."

আন্টি আমাকে গরুর মাংস মুখে তুলে দিতে দিতে বলল দুই ছেলের একসাথে বউ আনব.........।

আমি একটু সরে এসে তোর মুখে একটা খেজুর দিতে যাব তখনি দীপ ভাইয়া আর ভাবী সামনে পরে গেলো। তুই ও আচমকা দেখিয়ে বললি এইযে ভাইয়া, ভাবী। আমি লজ্জা পেলে ভাবী আমাকে নিয়ে একটু মজা করল। 

খাইতে বসার আগে আমি বলে দিছিলাম সাদা পাঞ্জাবী, হলুদ লাগে না যেন। ঠিক ই লাগল। তুই দূর থেকে হাত উঁচু করে দেখায়ে বললি হলুদ লেগে গেছে অর্পা। 

আমি দিলাম ঝাড়ি।

কিছুক্ষন পরে তুই নিচে নেমে গেলি লিফট ধরে ওই টাই তোকে আমার শেষ দেখা। কেনো যেন তাকায়ে ছিলাম তোর দিকে সেদিন তুই ও একটা হাসি দিয়ে আমাকে ফেলে নেমে গেলি। 

jaaan মনে আছে তোকে আমি একটা ডাইরি লিখে দিছি। হাফ আমার লেখা, আমাদের কত ছবি সেখানে। বাকিটা আমি তোকে লিখতে বলছিলাম। জীবন আমাদের ওই ডাইরির কটা পেজের থেকেও ছোট তাই না বল?

কত তোলা তোলা করে ভালোবাসছিস আমায় তুই। এত ছোটাছুটির পরেও আমার কাছে এসে সব ঠান্ডা তোর। আমার এত মেজাজ, এর রাগ, সব কেমন চুপ করে সহ্য করে গেছিস। কোনদিন আমাকে একটা বাজে কথা বলিস নি। উঁচু গলায় কথা বলিস নি। আল্লাহ!!! কি আদর, কি আদর। কত যত্নে আমাকে তুই রাখতি মুগ্ধ একবার মনে করে দেখ। 

আজকে তুই বীরের মত সবার মনে বেঁচে আছিস। জান আমি তো আগেই জানতাম তুই বীর। তুই আমার মুগ্ধ। আমার একটাই মুগ্ধ ছিলো। 

এখন আর আর্তনাদ করি না। I am so proud of you jaaan. 

I mean you are a hero. A great soul. 

আমার কাছে তুই তো একটা বাচ্চা। যেই মাথায় তোর গুলি টা লাগলো মুগ্ধ, আমি কত সহস্র বার হাত বুলায়ে দিছি, আদর করে দিছি।আজকে আর আমি তোকে ছুঁতে পারি না। কিন্তু তুই তো নাকি আর আমার একার নাই, পুরো দেশের হয়ে গেছিস।

মেনে নিলাম।

সারাজীবন তো তোর আদর সোহাগের ভাগ কাউকে দেই নি, আজকে তাই কাউকে পাচ্ছি না যাকে জিজ্ঞেস করতে পারি তোমার কি একই হাহাকার! 

আমার মুগ্ধ আর নেই। 

"কিন্তু তুই আমাকে পূর্ন করে দিয়ে গেলি মুগ্ধ। 

একটা ছবি কেবল আমি আমার টাইমলাইন এ রাখতে চাই আমাদের। দয়া করে আমাকে আর মুগ্ধকে সবাই রেসপেক্ট করবেন। আমি এই পোস্ট টা হাজার বার দেখতে চাই।

 আমি একদিন রাগ করছি, তুই নিচে বসে আমাকে মানাচ্ছিস। এক হাত দিয়ে আমার গাল টেনে ধরে বসে আছিস আমার হাঁটুর কাছে। 

এত আদরে রেখে আজকে কেমন দেশের হয়ে গেলি!

Shamim Sultan এর ভালোবাসার চিঠি

বাবা-মা, বোন-দুলাভাই, চাচা-চাচি, ফুফু-ফুপ্পা, মামা-মামি, খালা-খালু এই সব আত্মীয় স্বজন যদি কাজেই না আসে তাহলে ওদের সাথে থেকে কি লাভ। জীবনের কঠিন সময় গুলোতে কাউকে পাশে পাইনি। কেউ এসে বলেনি কেমন আছি বা সমস্যা গুলোর সমাধানের বৃন্দ মাত্র চেষ্টা করে নি। কাউকে বোঝাতে পারি নাই আমার সমস্যা। বাবা-মায়ের অহংকার, রাগ, জেদের কাছে আমার ভালোবাসা মূল্যহীন।

হালসার মানুষ গুলোকে বলতে চাই। ছেলের সুখের কাছে কি রাগ, জেদ বড় হয়ে গেলো। আপনাদের পছন্দেই তো বিয়ে করলাম। তাহলে বিয়ের পরে কেন এত ঝামেলা। বিয়ের ১৭ দিনের দিন কেনই বা ধর্মদহতে কল দিয়ে বললেন এই ছেলে আমার না পালিত ছেলে। মানলাম হয়ত মজা করে বলেছেন কই তার পরে কখনও তো এই বিষয়টা সমাধান করলেন না। বিয়ের পর থেকেই এরকম ছোট বড় সমস্যা করেছেন যেটার কোন সমাধান করার চেষ্টা করেন নাই। ছোট হয়ে যাবেন বলেই তো সমাধান করেন নাই। ছেলের বাবা হয়ে যে অহংকার দেখান বর্তমান সময়ে এই অহংকার চলে না। এখন একটাই প্রশ্ন সত্যিই কি আমি আপনাদের সন্তান?

ধর্মদহ এর মানুষ গুলোকে বলতে চাই। মানুষের অবস্থান সব সময় এক রকম থাকে না। একটা সময় আমার ব্যাগ প্যাক এ ৩,৭০,৫০০ টাকা সমমূল্য পরিমানের গ্যাজেট (ম্যাক, ডিএসএলআর, আইফোন, আইওয়াচ) থাকত। আমি সব সময়ই চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার। আপনাদের ঘরেও তো একটা ছেলে বসে আছে চাকুরীর জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু চাকুরী কি পেয়েছে পাই নাই কারণ চাকুরী এত সহজ না। বিয়ের পর থেকে কি শুধু আমার ভুল বা দোষ, আপনাদের কোন ভুল নাই? দুই পরিবারের ছোট ছোট ভুল গুলোই বড় হয়েছে। এই ভুল গুলো কেও সমাধান করে নাই। আমি সব সময়ই চেষ্টা করেছি দুই পরিবারকে বোঝাতে পারি নাই।

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ এ বিয়ের কথা বার্তা হওয়া। ২ অক্টোবর, ২০১৭ রিং পরানো আর ২২ অক্টোবর, ২০১৭ বিয়ে। আমি ভালো ইনকাম ও ভালো পজিশন ছিল বলেই এরকম ছেলে দেখে বিয়ে দিতে এক মূহুর্ত দেরি করেন নি। কিন্তু যখনই আমার অবস্থান খারাপ হলো তখন থেকেই আমি খারাপ হয়ে গেলাম। আসলে আপনারা জামাই চান না টাকা চান।

ঈশিতার চাকুরীর জন্য এপ্রিল, ২০১৯ এ মাওনাতে বাসা নেওয়া এবং আমার যাওয়া আসা। আপনারা হয়ত ভাবেন মেয়ের ইনকাম জামাই এসে খাই আর চলে যায়। এটা ভাবা স্বাভাবিক কারণ ঈশিতা মনে হয় বলতো না আমিও সংসার এ খরচ করি। খরচ এর বিষয় গুলো না বলে ঈশিতা নিজেকে বড় করেছে। কিন্তু মাসে আমার চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হতো সংসারে। যেটা আপনারা জানেন না। ওই সময় এর বেশি সংসারে খরচ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না কারণ আমার ঢাকাতেও থাকা খাওয়ার খরচ ছিল। যেভাবেই হোক দু'জনের ইনকাম এ আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু শাশুড়ি আম্মা আমাদের সংসারে একটু বেশিই নাক গুলিয়েছেন। সংসারে তোমাকে কখনও একা কষ্ট করতে দেইনি। তুমি যখন রান্না করেছো তোমাকে সহযোগিতা করেছি। খাওয়া শেষে পাতিল গুলোও সকালে আমি পরিষ্কার করেছি যাতে তোমার অফিস থেকে এসে না করতে হয়। তোমার কাপড় পর্যন্ত ওয়াশ করে দিয়েছি। কখনও ভাবি নি সংসার তোমার সব সময় চিন্তা করেছি সংসার দু'জনেরই। এরপরও আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।

বিয়ের সময় আপনাদের এলাকার মানুষ গুলো বলেছে এরকম ছেলে পাওয়া যান না। কিন্তু যখনই ডিভোর্জ হয়ে গেলো সেই মানুষ গুলোই আমার বদনাম ও খারাপ ছেলে বলা শুরু করলো। তখন থেকেই ঈশিতাকে বলতেন এই ছেলেকে ডিভোর্জ দিয়ে দিতে। বিয়ে কি পুতুল খেলা মন চাইলো না ডিভোর্জ দিয়ে দিলাম। দুই পরিবার এক সাথে বসে কি একটা সমাধান করা যেতো না?

ঈশিতা তোমাকে বলতে চাই। স্বামী হিসেবে তুমি আমাকে কখনই আপন করে নিতে পারো নাই, সব সময়ই দুরুত্ব রেখেছো। অনেক কথাই আমাকে বলো নাই যেটা বলা প্রয়োজন ছিল। অনেক কথায় আমি অনেক পরে শুনেছি। আমাদের মাঝে যা হয় তুমি তোমার আম্মুর সাথে শেয়ার করো যেটা একদম ঠিক না। তুমি বলতে মিথ্যা কথা বলতে পারো না কিন্তু সময় মতো ঠিকই আমাকে মিথ্যা বলেছো। বিয়ের পর থেকেই আমার প্রতি তোমার উদাসীন। তুমি ঢাকা থেকে বাড়িতে যাও বাড়িতে যাওয়ার পরে কল দিয়ে কখনই বলো না আমি ভালো ভাবে বাড়িতে চলে এসেছি। যেটা আমি বিয়ের দুই বছরেও পাই নি তোমার থেকে। আমার প্রতি তোমার কোন ভালোবাসায় ছিল না। তারপরও আমি ম্যানেজ করে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলাম হয়ত একদিন তুমি বুঝতে পারবে।

ঈশিতা ডিভোর্জ দেওয়ার জন্য তোমার আত্মীয়-স্বজনরা সব সময়ই তোমাকে সাপোর্ট দিয়েছে কিন্তু ডিভোর্জ দেওয়ার পরে কিন্তু সেই আত্মীয়-স্বজনরা এক দিনও খোঁজ নেয়নি তোমার। চাকুরী নাই চলছো কিভাবে, খাচ্ছো কি কেউ জানতে চাইনি। কারণ আমরা মানুষরাই এরকম স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলি।

ডিভোর্জ এর পরেও তোমাকে যেভাবে পেরেছি সহযোগিতা করেছি। কিন্তু তুমি তোমার মায়ের কথাতে আমাকে ডিভোর্জ দিয়ে দিলে। সত্যিই কি আমাকে ভালোবাসতে?

তোমার অভিযোগ ছিল আমি কেয়ারলেস। আমি কেয়ারলেস বলেই ঘরে বাজার আছে কি না সব সময়ই খোজ নিয়েছি। না বলতেই ফোনে রিচার্জ ও ইন্টারনেট দিয়েছি। তোমার বাড়ির মানুষ গুলোর খবর নিয়েছি। তুমি সারা দিন অফিস করে বাসায় গিয়ে রেষ্ট করেছো কখন বলি নাই আজকে সারা রাত গল্প করব। কেয়ারলেস ছিলাম বলেই তুমি অফিসে থাকলেও নিজে রান্না করে খেয়েছি। চুল ভেজা নিয়ে সকালে অফিসে যেতে হবে বলে তোমাকে কখনও সেক্স এর জন্য পেশার দিইনি। কেয়ারলেস ছিলাম বলেই কুমিল্লা থেকে এনে রসমালাই খাওয়াইছি। কেয়ারলেস ছিলাম বলেই ডিভোর্জ এর পরেও থ্রি-পিচ, বাজার, ফোনে রিচার্জ ও ইন্টারনেট দিয়েছি। কেয়ারলেস ছিলাম বলেই ঢাকা থেকে ভোর ৫ টায় বের হয়ে মাওনাতে গিয়ে তোমাকে নিয়ে চন্দ্রাতে বাসে তুলে দিয়ে এসেছি। কেয়ারলেস ছিলাম বলেই ডিভোর্জ এর পরেও বাইক এক্সিডেন্ট করার পরেও বাইক চালাতে কষ্ট হয়েছে এরপরও তোমাকে ইন্টারভিউ দিতে নিয়ে গিয়েছি। এতটুকুই আফসোস এত কিছু করার পরেও কেয়ারলেস।

যাইহোক, আমার থেকে ভালো কারও সাথে বিয়ে করে সুখে সংসার করো। তোমার ইচ্ছে গুলো পূরুন করো। আমার একটা রিকোয়েস্ট তোমার যদি মেয়ে হয় অবশ্যই মেয়ের নাম সামাইরা রাখবে।

জীবনে কখনও প্রেম করি নাই। বিয়ের পরে সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবেসেছি যেটা তুমি কখনও বুঝো নাই। কিভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয় আমি জানি না তাই হয়ত তোমাকে বোঝাতে পারি নাই।

আমার কাছে আপনারা যারা টাকা পান যদি সম্ভব হয় ক্ষমা করে দিয়েন। এই পর্যন্ত চলার পথে যদি আপনাদের কে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দিয়েন।

পৃথিবীতে বেঁচে থাকলে হয়ত তোমাকে ঘৃণা করতে হবে। যাকে ভালোবেসেছি তাকে ঘৃণা করতে পারব না। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ থেকে একদিনও ঠিক মতো ঘুমাতে পারি নাই শুধু তোমার স্মৃতি সামনে চলে এসেছে।

শেষ সময় ঈশিতা তোমাকে বলতে চাই একদিন তোমাকে থাপ্পর মেরেছিলাম সত্যিই মন থেকে তোমাকে আঘাত করতে চাই নি কিন্তু ওই সময় মাথা কন্ট্রোল করতে পারি নাই। আমার খারাপ আচরনের জন্য অনুতপ্ত। অনুগ্রহ করে ক্ষমা করে দিও।

কষ্ট গুলো বড় হয়ে গেছে আর নিতে পারছি না।

ভালো থাক ভালোবাসা...

তমার দিকে তাকাতে পারছিনা পিছন হয়ে দাড়িয়ে আছি আকাশ প্রাণে তাকিয়ে

ছেলে→ আই লাভ ইউ তমা..
মেয়ে→থাপ্পড় চিনেন?
ছেলে→চিনি তো,,
মেয়ে→ খাবেন?
ছেলে→ কে দিবে?
মেয়ে→আমি দিবো,,
ছেলে→দেড়ি করছো কেনো এখনি দাও,,
মেয়ে→লজ্জা করেনা আপনার?
ছেলে→ আমি তো প্যন্ট পরছি
মেয়ে→আপনাকে যে কি করি
ছেলে→ বিয়ে করো
মেয়ে→আসলে একটা থাপ্পড় দেয়া উচিৎ আপনাকে..
ছেলে→ চাইলে কিস ও করতে পারো না করবোনা,,
মেয়ে→সামনে থেকে সরুন
ছেলে→পিছনে পিছনে আসবো নাকি?
মেয়ে→ কি করেন আপনি?
ছেলে→পড়াশোনা করি,,
মেয়ে→আপনার বাবা কি করেন?
ছেলে→বাবা নেই,
মেয়ে→মারা গেছেন?
ছেলে→ না আসলে আমি জানিনা,
মেয়ে→আপনার মা কি করেন?
ছেলে→আমার জন্মের সময় মারা গেছেন,,
মেয়ে→থাকেন কোথায়?
ছেলে→বস্তিতে,,
মেয়ে→ওখানে থাকেন কেনো?
ছেলে→এক ভিখুকের সাথে এখন ওনি আমার মা,,
মেয়ে→ ফকিন্নির বাচ্চা তোর সাহস তো কমনা,,
ছেলে→আপনাকে ভালবাসতে পারবো না কেনো?
মেয়ে→একজন ভিখারির বাচ্চাকে বয়ফ্রেন্ড কি করে বানাই?
ছেলে→আর কোন দিন তোমার সামনে আসবোনা,,,

আমি আর কিছু বললাম না চুপ করে নিরবে চলে আসলাম। ভালবাসা জোর করে হয়না আর আমি যেহুতু ভিখারির ছেলে। আমার জন্য এইসব ভাবাও পাপ,,

আমি ফারাবী হাবিব ডাক নাম ফারাবী এক বস্তিতে থাকি,, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্স করছি।
আমার বাবা কে তা জানিনা মা জন্মের সময় মারা গেছেন। তাই মায়ের মুখ দেখিনি।
বড় হয়েছি এক ভিখারির কাছে তাই তিনিই এখন আমার মা।

কিছুটা বুঝতে শিখেছি তাই টোকাই দলে নাম লিখিয়েছি। সারাদিন টোকাই করে যা পেতাম তাতেই আমার দিন চলে যেতো।
একদিন পাশের মহল্লার কিছু টোকাই ছেলে আমাকে মেরেছিলো।
তাই আমার মা আমাকে আর টোকাই গিরি করতে দেননি। কিছু দিন পর একটা স্কুল এ পড়তে পাঠালেন। আর তিনি সারাদিন রাস্তাঘাটে মানুষের কাছ থেকে টাকা জোগার করে সংসার চালান।

প্রাইমারী পাস করার পর আসি হাইস্কুল এ বেশ মেধাবী ছিলাম। সব সময় ক্লাসে ফাস্ট হতাম পাশাপাশি একটা প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করতাম। যে টাকা বেতন দিতো কোন রকম পেট চলতো। পড়ালেখার টাকা মা ভিখুকের কাজ করে জোগার করতো,

খুব ভালো খাবার খেতে পারতাম না। নিন্ম মানের চালের ভাত আর কাচা মরিচের ঝাল পেয়াঁজ হলেই পেট ভরে খেতে পারতাম।
মাজে মাজে মা বড়লোকদের আধা খাওয়া বাঁশি পচা খাবার নিয়ে আসতেন।
আমার চোখ খাবারের লোভে চকচক করতো গপাগপ গিলতাম।
খাবের শেষে তৃপ্তিকর ঢেঁকুর সাথে মায়ের দিকে তাকাতাম দেখতাম মায়ের চোখে জল টলমল করছে,,
আমি তাকালেই মা চোখের জল আড়াল করে আচল দিয়ে মুছতো আর বলতো। বাজান চোকে মনে অয় সমেস্যা দেহা দিচে। খালি পানি পরে চোক দিয়া।
তোই কবে বড় অইবি বাজান? আমারে মেমসাব গো মতন একটা সসমা কিন্না দিবে কবে?

আমার গলা ধরে আসে। আমি তো জানি আমার মায়ের চোখের জলের উৎস।
আমাকে বড় হতে হবে অনেক বড়,,
প্লাস্টিক কারখানার চাকরি ছেরে দিলাম মালিকটা খালি প্যানপ্যান করে,, কিছু হলেই মায়েরে নিয়া বাজে কথা বলে,,,
কিছুদিন চুক্তি রিক্সা নিলাম জাবেদ চাচার কাছ থেকে।
স্কুলের সময় স্কুলে যেতাম বাকী সময় রিক্সা চালাতাম।

একদিন এক বড়লোক ছেলে আর তার গ্যলফ্রেন্ড নিয়া গ্রিনরোড থেকে রবিন্দ্র সরোবর যাইতেছিলাম, রিক্সায় বসে বসে তারা আজ কত টাকার শপিং এবং খাওয়া দাওয়া করলো। সব কিছুর হিসেব করছে।
মনে মনে বেশ খুসি হলাম বাড়ার পাশাপাশি চাইলে কিছু বকখশিও পেতে পারি আজ। রবিন্দ্র সরোবর বললাম স্যার নামেন ওনারা নামলেন।
ছেলেটি একটা দশ টাকার নোট ধরিয়ে দিলো আমি বললাম স্যার হয়নাতো আর দশটা টাকা দেননা স্যার।
লোকটা আমার কলারে ধরে বললো চুপচাপ চলে যা ছোটলোক কোথাকার।
মেয়েটি বললো কি দরকার বাবু? এইসব ছোট লোকদের গায়ে হাত তুললে তোমার হাত নোংরা হবে। এই লোকের গায়ে জিবাণু থাকে,, চুপ করে নিরবে চলে আসলাম, গরিবের জন্ম ই তো মার খাবার জন্য। চোখের জল মুছে চলে আসলাম।

জাবেদ চাচার গ্যারেজে রিক্সা জমা দিয়ে আমাদের বস্তির খুপরিতে ডুকলাম। মা বাতাস দিতে লাগলো আমি মুড়ি খেয়ে পড়তে বসলাম।
সামনে আমার এস এস সি অনেক কস্টে আমি আর মা ফরম ফিলাপের টাকা জোগার করেছি।
আমি পরছি মা বাতাস করছে মাঝে মাঝে মায়ের চোখের দিকে তাকাই। মায়ের চোখে রাজ্যের সপ্ন ভাসে। যে সপ্নে ভিবোর হয়ে সারাদিনের কস্ট ভূলে যায় আমার মা। আর আমি মায়ের সপ্নভরা চোখের দিকে তাকিয়ে অদ্যম হয়ে উঠি আরো ঝোরে পড়তে থাকি।

এস এস সি এইচ এস সি দিলাম দুইটা তেই গোল্ডেন প্লাস পেয়েছিলাম পেপারে ছবি ও দিয়েছিলো। সাংবাদিক যখন এসেছিলো ছবি নিতে। গত রমজানে এক সাহেবের জাকাতের দেয়া শার্টটা পড়েছিলাম, আহা কি সুবাস লাগছিলো নতুনের ছুয়া। খুব সুন্দর একটা ছবি উঠেছিলো হয়তো নতুন শার্ট নয়তো দামী ক্যামরা।

আমার মাকে এস এস সির রেজাল্ট এর পর বলেছিলাম। মা আমি গোল্ডেন প্লাস পাইছি।
তখন আমার মা বলেছিলো কিরুম্মা পিলাচ বাজান?
ঐযে কারেনের কাম করে?
কত বেচন যাইবো পিলাচটা?
বেচতে পারলে এক কেজি চাইল কিনিচ বাজান।
আজকে ঘরে চাইল নাই। তই বাজান নকত বেচন যাইবোনি বাজান?

আমি কিছু বলিনি সেদিন কান্না চেপে ধরে রেখেছিলাম।
মা চলে যাবার পর চিৎকার করে কেঁদেছিলাম,,
ফুলবানু খালা উকি মেরে দেখছিলো আমায়। ভাবছিলো হয়তো বড় পাস দিছি তাই আনন্দে কাঁদছি।

একদিন আমি রিক্সার উপর বসে গামছা দিয়ে গাম মুছছি। এমন সময় দেখছি আমার মা কোন এক সাহেবের গাড়ির জানালার সামনে দাড়িয়ে অনুরুধ করছে। ছার ও ছার আমার পোলারে ভারসিটিতে ভত্তি করামু কয়টা টেহা দিয়া সাহায্য করেন না ছার আল্লাহ্‌ আপনের ভালা করবো। সাহেব কি বললো তা আমি শুনিনী। তবে মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো। আমার মায়ের হাত ভেঙে গিয়েছিলো নিস্টুর কালো পিচঢালায় পরে।
বেথায় কঁকিয়ে উঠছিলো আমি দৌড়িয়ে গিয়ে মাকে কোলে করে বস্তিতে নিয়ে আছিলাম।

আমার মা বেথায় নয় লজ্জায় মুখ লুকাতে চেয়েছিলো,, কারন আমার সামনে তিনি ধাক্কা খেয়েছিলেন।
ডাক্তারের কাছে নিতে পারিনি টাকা ছিলোনা। ফুলবানু খালায় প্রতিদিন তেল গরম করে মায়ের হাতে মালিশ করে দিতো দিতো। যদিও মায়ের হাতটা এখনো সোজা হয়নি তবে দিরে দিরে বেথা কমে গিয়েছিলো।

আমি মাকে একটা টং দোকান ভাড়া করে দিয়েছি। সেখানে মা পান সিগারট বিক্রি করে।

আমি ঢাকা ভারসিটিতে এডমিট হয়েছি আমার অনেক ফ্রেন্ডস। একদিন স্যার বললো ফারাবী তোমার নিজের লাইফের কথা বলো শুনি।
সেদিন সব বলেছিলাম বলার পর আমার আর কোন ফ্রেন্ডস নেই। তারা আমাকে ছেরে দিয়েছে কেমন করে জানি কথা বলে।
একদিন তো সোয়ান আবিরকে বলেছে দেখ আবির ফারাবী ফক্কির পোলাকে পাত্তা দিবিনা।
তারা হয়তো ভেবেছিলো আমিও কোন বড়লোক ক্রিমিনালের জাত কিন্ত না আমি তো ফক্কির সন্তান।

হঠাৎ পিয়নের ডাকে বাস্তবে ফিরে এলাম। এতখন অথিতে ডুবে ছিলাম। আমি এখন ম্যাজিস্ট্রেট।
সেদিনকার বড়লোক সোয়ান আবরদের স্যার হ্যা ওরা আমাকে এখন স্যার বলে ডাকতে হয়।
টাকা পয়সা ধন সম্পদ মান সম্মান সব আছে।
আরো আছে আমার জান্নাত আমার ভিখারী মা।
না তিনি এখন ভিখারী নন তিনি এখন ম্যাজিস্ট্রেট এর মা।

সেদিন পেপারে বিজ্ঞাপন দিলাম পাএি চাই।
শিরোনামে ঠিকানা দিয়ে দিলাম। কোন এক মেয়ের বাবা পরের দিন বাসায় এসে হাজির। আমি আমার মা এবং বাসার সব কিছু পছন্দ হলো উনার। উনার বাসার ঠিকানা দিলেন। কোনো একদিন আমি রিক্সা চালাতাম আমার মা রিক্সায় বসে থাকতো।
আজ আমি নিজের গাড়ি চালাই মা আমার পাশে বসে আছেন। মেয়ের বাসার সামনে গাড়ি রাখলাম।

বাসার বিতর ডুকলাম বেস সাদর জানালো। মেয়ের মা নাস্তা দিলেন আমাদের কে।
কিছুখন পর মেয়ে আসলো লম্বা গুমটা দিয়া। দুইটা মেয়ে দুপাশে ধরে নিয়েছে।
আমার মা বললেন ঘোমটা সরাতে।
আমি মেয়ের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম।
এটা তো তমা *
যার পিছনে আমি কলেজ জিবনে গুরতাম। তমা আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। সেকি আমাকে চিনতে পেরেয়েছে?
চিনার কথা নয় সেদিনকার কালো চিকুন ফিরাবী আজ অনেক স্মার্ট।

আমি বললাম মেয়র সাথে একটু কথা বলবো সবাই রাজি হলো। আমি আর তমা ছাদে গেলাম।

আমি কয়একটা কাঁশি দিলাম।
তমা→ পানি খাবেন?
আমি→নাহ্
তমা→কেমন আছেন?
আমি →তুমি কেমন আছো তমা?
তমা→আপনি আমার নাম জানলেন কেমন করেরে?
আমি→ নাহ্ এমনি, আমাকে তোমার পছন্দ হয়েছে?
তমা→জ্বী
আমি→আমার পরিচয় জানো?
তমা→আপনি একজন ম্যাজিস্ট্রেট এতটুকু জানি।
আমি→নাহ্ এর বাহিরে ও একটা পরিচয় আছে।
তমা→সেটা কি বলুন
আমি→আমি ফারাবী কোন এক ভিখারির সন্তান তোমার পিছনে ঘুরতাম চিনতে পরেছো?
তমা→আপনি? আপনি এত বড় হলেন কেমন করে?

আমি রহস্যময় হাঁসি দিলাম সে হাঁসির মানে এক একজনের কাছে এক একরকম। তমার চেহারায় অবিশ্বাসের ছাপ দেখতে পেলাম,,

আমি পিছন হয়ে দাড়িয়ে আছি আকাশ প্রাণে তাকিয়ে কত গুলো পাখী উরছে দেখতে ভালো লাগছিলো। তমার দিকে তাকাতে পারছিনা।

তমা আমার দিকে অভাক চোখে চেয়ে আছে।

হঠাৎ কোথায় থেকে যেনো একটা গান বেজে উঠলো। একুল ভেঙে অকুল গরে এইতো নদির খেলা। সকাল বেলার ধনীরে তোই ফকির সন্দা বেলা


তমার দিকে তাকাতে পারছিনা পিছন হয়ে দাড়িয়ে আছি আকাশ প্রাণে তাকিয়ে

পৃথিবী তে সব চেয়ে বড় অত্যাচার হলো ভালোবাসার অত্যাচার

আমার সাথে একটা মেয়ের রিলেশন ১+ বছরের। আমরা সেইম এইজ। ওর সাথে থাইকা আমি মেনটাল্লি সিক হয়ে গেছি। আমার আর ধৈর্যশক্তি নাই। ওর মধ্যে অনেক সমস্যা আছে। ও প্রচুর জেদি। ও আমাকে স্বাধিনভাবে চলতে দেয় না। ও যেটা বলে আমাকে সেটাই শুনতে হয়। ওরে যদি এগুলা নিয়া কিছু বল তাইলে ওয় জিদে হাত কাটে, উল্টাপালটা পাগলামি করে। ও চায় আমি ওর কথায় উঠি আর বসি। ও আমার ফ্রেন্ডদের সাথে মিশতে দিতে চায় না। আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলে এটা নিয়া অনেক ঝামেলা করে। ওয় মনে করে ওর থেকে আমি আমার ফ্রেন্ডদের মুল্য বেশি দেই। এইজন্য ও আমার ফ্রেন্ডদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য জোর করে প্রচুর।
পৃথিবী তে সব চেয়ে বড় অত্যাচার হলো ভালোবাসার অত্যাচার

আমি ওরে অনেক সুন্দর করে বুঝাইছি কিন্তু ওয় বুঝতে চায় না। ও যদি এখন বলে চলো ঘুরতে যাবো তাহলে ওকে মানা করা যায় না। আমার ভার্সিটি থাকলেও ও আমাকে জোর করে। ওর লজিক "আমি বড় নাকি ভার্সিটি বড়?"। আমি তখন রাগ হয়ে বলি আমি পারবো না। তখন ওয় জিদে ব্লেড দিয়া হাত কাটে। ‌আমি ভার্সিটি তে ক্লাস এর পর একটা কোর্স করি। দেখা যায় বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে যায়। তাই ওর সাথে ২ ঘন্টা কথা বলে ঘুমানোর কথা বললে আমাকে ঘুমাইতে দেয় না। যদি বলি ঘুমাবো আমি অনেক টায়ার্ড তাইলে ওয় অনেক ঝগড়া করে। ‌

একবার ওর সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমার আপুকে নিয়া হাসপাতাল যাইতে হবে তাই ওরে বলসিলাম আজকে যাইতে পারবো অন্যদিন চলো। ওয় এটা নিয়াও অনেক ঝামেলা করসে। এভাবে ও প্রতিটা জিনিস নিয়া এমন করে। এমন কোনো দিন নাই যে ওয় ঝগড়া করে না। আমি অরে সামনাসামনি হাতে হাত রাইখা অনেক বুঝাইছি কিন্তু ও একটুও বুঝে না। ১ দিন ঠিক থাকলে আবার সেইম কাজ টাই করে। ‌ ‌ও যদি বলে এখন ফোনে কথা বলবো ফোন দাও আমার বাসায় মানুষ থাকলেও সেটা শুনবে না। ওরে ফোন দিতেই হবে। আমি যদি তখন একটু হার্ড হয়ে যাই তাইলে হাত কাটবে। ‌মানে একটু এদিক সেদিক হলেই ও হাত কাটবে আর পাগলামি করবে।

ওর আম্মুকে ওর কাজিন আমাদের রিলেশনের কথা বলে দিসে ওর অবস্থা দেইখা। ওর আম্মু ওরে হাত পা ধইরা কান্নাকাটি কইরাও বুঝাইসে বাট বুঝে নাই। ওর আম্মু ওরে নিয়ে অনেক টেনশনে আছে। কারণ ও যে সাইকো তাতে যেকোনো কিছুই করতে পারে। সেও চায় আমাদের সাথে রিলেশন যাতে না থাকে। কারণ ওর আব্বু জানতে পারলে ওরে ঘর থেকে বের করে দিবে। ওর আব্বু অনেক রাগি। এইসব প্রেম পছন্দ করে না তার উপর যদি এইসব কাহিনি শুনে তাইলে অনেক প্রবলেম হবে। ‌ ‌

এখন আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন এত সমস্যা হইলে ব্রেকাপ করে ফেলেন। ওর সাথে ব্রেকাপ করার অনেক ট্রাই করছি কিন্তু ওয় বলে ব্রেকাপ করলে সুইসাইড করবে। ওয় এত পরিমাণ সাইকো হয়ে গেসে যে ওর দারা সুইসাইডও সম্ভব। প্রতিটা জিনিস নিয়ে ওয় আমার সাথে কেচাল করে। ওয় যদি বলে ডানে তাইলে ডানে যাইতে হবে আর যদি ভলে বায়ে তাইলে বায়ে। একটু এদিক সেদিক হইলে হাত কাটবে। ওর হাত পুরা নষ্ট করে ফেলসে কেটে। বিশ্বাস করেণ আমি পুরা ভেঙে পড়ছি। সামান্য কিছু নিয়া আমাকে ব্লাকমেইল করে। হয় শুনো নয়তো উলটা পালটা করে ফেলবো।

ওর এতই জিদ যে যখন জিদ উঠবে আমাকে দিয়া সেটাই করাবে। তাতে আমার কোনো সমস্যা হলো কিনা সেটা দেখবে না। রেগুলার ঝগড়া করবে আর উলটা পালটা বিহেভ করবে।

কাল একটা জিনিস নিয়া একটু ঝগড়া করসি এইজন্য ও ব্লেড দিয়া হাত কেটে পুরা মাংস বের করে ফেলসে। ৬ টা সেলাই লাগসে ওর। ওর আম্মু দেইখা পুরা পাগলের মত হয়ে গেসে। ওর আম্মু ওর আব্বুকে বলতেও পারতেছে না কারণ ওর আব্বু এইটা নিয়া অনেক ঝামেলা করবে। ওর আব্বু অনেক রাগি। এগুলা শুনলে আমার ফ্যামিলি তে আইসা অনেক সমস্যা করবে। আমি চাই না এইসব এখন ফ্যামিলিকাল পর্যায়ে যাক। আমার আব্বু এম্নেই সহজ সরল মানুষ এইসব নিতে পারবে না :(

ওর সাথে আমি রিলেশন সুন্দরভাবে চালাইতে চাইসি কিন্তু সেটা আর পসিবল না।
ওর মানসিক অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলতেসে। ওর বোন কাজিনরা সবাই ওর কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ। ওরে বুঝায় না এমন কেউ নাই তাও ও বুঝতে চায় না। ওরে আমি ছাড়তে চাইতেছি কিন্তু ও সুইসাইডের ভয় দেখায় তাই পারতেসি না। আমি এখন কি করবো? একে তো ওর বাপ জানলে আমার ফেমিলির সাথে ঝামেলা করবে আবার আমিও ওরে ছারতে পারতেছি না ওর সুইসাইডের ভয়ে। আমি এখব কি করবো আমাকে একটু সাজেশন দিন...

বৃদ্ধাশ্রম থেকে বলছি

বৃদ্ধাশ্রম :
আমার বেতন ২২০০০ টাকা, কিন্তু আমি যে বাসায় থাকি ওটা বাড়িধারাতে (ওল্ড ডি ও এস এইচ)।এয়ারপোর্ট এর পূর্ব দিকে একটা বিশাল ফ্লাট। লোকে শুনে হাসে, পিছে লোক ঘুসখোর বলে। আমি হাসি, গ্রাম থেকে এসেছিলাম একটা কাজ জুটাবো বলে। কিন্তু আমাকে খুঁজে নিয়েছে বিশাল কোম্পানি। বছর খানেক পর আমার কাজের উপর খুশি হয়ে এই বাড়িধারাতে ট্রান্সফার করে দেয়। সাথে এই অফিসিয়াল ফ্লাট। পুরো ঘটনা অনেক কে বলা হয়, যারা শুনে তারা ভ্রু কুঁচকায়। বাকিরা ঘুস খোর বলে। যেদিন এই বাসায় এসেছিলাম সেদিন শায়লা কে কোলে তুলে ঘুরিয়েছিলাম, চুমু খেয়েছিলাম, মাঝরাতে দুজনে একসাথে নেচেছি খিক খিক।

রিহানের জন্ম হয়েছিল বাড়িধারা লেক ভিউ ক্লিনিকে। সবচেয়ে উন্নত সেবার এই ক্লিনিকে রিহান সোনার চামুচ মুখে জন্মেছিল। মধ্যবিত্তের কাছে সোনার চামুচ অধরা, বড্ড আদিক্ষেতা। আমার কাছে তা ছিল না। পুরো ১২ আনা সোনা দিয়ে বানিয়ে নিয়েছি সোনার চামুচ। জন্মের পর সেই চামুচে সামান্য মধু নিয়ে রিহানের মুখে দিয়েছিলাম। আমার সন্তান, সোনার চামুচ না হলে চলবেই না। হুম রিহানের মা কখনো ওর ছবি তুলতে দিত না।কারন অজুহাতের সমান। কিন্তু আমি নাছোরবান্দা, জন্মের প্রথম দিন থেকে রিহানের প্রথম বসা, হামাগুড়ি দেওয়া, প্রথম দাঁত নিয়ে হাসি, নিজের পায়ে দাড়ানো, প্রথম মুখে ভাত, প্রথম স্কুল, কলেজ সব সব আমার ক্যামেরায় বন্দি করেছি। অহহ হ্যাঁ শায়লা একদিন নিজেই একটা ছবি তুলেছিল রিহানের। যেদিন রিহান আমার পিঠে বসেছিল আর আমি গরুর মত হয়ে হাম্বা হাম্বা করে ওকে নিয়ে ঘুরছিলাম। উফফফ আমার দেখা সেরা ছবি ওটা। শায়লা বলতো ধুর ছাই, আমাকে খুশি করতে মিথ্যা বলছো।

রিহান যখন ২৬ শে পা দিল তখন আমার ৫২ বছর। এটা নিয়ে বেশ একটা হাসির রোল পড়ে গিয়েছিল। বাবা ছেলে বয়সে দ্বিগুন। সেই ক্লাস ফোরের অঙ্কের মত। শায়লা সে বছর বেশ ক্ষেপিয়েছিল আমায়, তবে বেশি দিন পারে নি। রিহান হঠাৎ একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এলো। শায়লা প্রচন্ড রেগে গিয়েছিল সেদিন। পারলে রিহান কে জ্যান্ত পুতে ফেলবে। মনে খুব আপসেট হয়ে গেল শায়লা, কিছুদিন তো খাওয়া, ঘুম ছেড়েই দিল। আমি বোঝালাম, ছেলে মানুষ, পছন্দ হয়েছে, বিয়ে করেছে। কেন আমরাও তো এই ভাবেই বিয়ে করেছি তাই না?? কিন্তু শায়লা বুঝলো না। তার উপর রিহানের বউয়ের অবাধ্য আচরন বাসার ভিতর বেশ খিটমিট পরিবেশের সৃষ্টি করলো। রিহান একদিন প্রচন্ড রেগে তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল, সে এ বাসায় থাকবে না। অহহ হ্যাঁ একটু বলেই দেই পরে আমি কিস্তিতে অফিস থেকে বাসাটা ৮ বছরে কিনে নিয়েছিলাম। সেই স্বপ্নের বাসায় রিহান থাকবে না, যার স্মৃতি ঘিের এ বাসা সেই থাকবে না। আমি ওর পিঠ চেপে দিয়ে বললাম, রাগ করিস না। তোরা এ বাসায় থাক, আমাদের বরং বৃদ্ধাশ্রম এ দিয়ে আয়। এটাই তো চাচ্ছিস তাই না?? রিহান আমতা আমতা করে কিছু বলতে চাইলো। আমি হেসে বললাম, কোথাকার বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে?? ও বলল, গুলশানে। অনেক ভাল একটা বৃদ্ধাশ্রম আছে। তোমরা ওখানে অনেক ভাল থাকবে। আমি হেসে আমার রুমে আসলাম,শায়লা আমাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। ঠিক একই কান্না কেঁদেছিল রিহান যখন জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছিল। কি কান্না টাই করেছে, ""আমার রিহান কে ফিরিয়ে দাও বলে "

বসুন্ধরার এই বৃদ্ধাশ্রমে মোট ৬৩ জন আশ্রিতা। যার মধ্যে আমরা দুজন কমবয়েসি। এই ব্যাপার টা খুব মজা লাগতো, শায়লা কে বলতাম দেখ কি কপাল এত জোয়ান বয়সে আমরা ঘর ছাড়া! শায়লা মুখ কালো করে নিত। কিন্তু একটা মেয়ে হাসতো। ওর নাম সাবিহা।এখানে থাকে। সবার দেখাশুনা করে।কার কি লাগবে সেই দেখাশুনা করে। যখন থেকে আমরা এসেছি এই মেয়েটাই আমাদের পরম কাছের হয়ে গেছে। প্রায় দেখি সাবিহা শায়লার মাথায় তেল দিয়ে দেয়। আমি ওর মাথায় গুতা দিয়ে বলি কিরে ""তোর এই মাকে আবার আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবি না তো?? বুঝিস এই একটাই আমার সম্পদ""। ও আমার পেটে গুতা দিয়ে বলতো, ইহহহ আমার কি সেই সাধ্য আছে?? বলে খিল খিল করে হাসতো। -

গুনে গুনে ফের ২৮ বছর পেড়িয়েছি। ৮০ এর বুড়া আমি , বৃদ্ধাশ্রমের গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছি। বসুন্ধরার সেই বৃদ্ধাশ্রম থেকে ৫ মাস পড়েই পালিয়েছি। তারপর এখানে এসেছি, এখন যেখানে আছি সেখানে নাম বলবো না।পালিয়েছি কারন রিহান মাঝে মাঝে ন্যাকামি দেখাতো, হারামীর ন্যাকামো আমার পছন্দ হতো না। ওর মায়ের সাথে কথা বলে চলে যেত। পালিয়ে আসার পর ওরা আমাকে খুজেঁছিল কিনা জানি না, তবে খুজেঁ নি এটা সিওর। এই ২৮ বছরে আমার কাছে কিছু বাকী নেই। ৯ বছর আগে হঠাৎ শায়লা ঘুমিয়ে গেল, এতো ডাকলাম শুনলোই না, ঘুমোনোর আগে শুধু রিহান কে ডাকলো। আমার বুক টা কেঁপে উঠলো,চোখে ঝাপসা দেখলাম, সাবিহা রোজ আসতো আমাদের দেখতে। রোদ বৃষ্টি, ঝড়, এমন কোন দিন নেই যে সে আসেনি। একদিন খুব জ্বর নিয়েও এসেছিল, শায়লা খুব বকেছিল সেদিন। নিজের সন্তান যেখানে এত বড় বেঈমান সেখানে পর সন্তানের মায়ায় শায়লা কেঁদে দিত। যেদিন শায়লা ঘুমিয়ে গেল, সাবিহা ২ বার সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল।চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছিলো, মাটিতে বসে পা দাপিয়ে আম্মা আম্মা বলে চেঁচাচ্ছিলো। সব কিছু ছেড়ে কবরে শুইয়ে দিলাম শায়লা কে। এরপর মাঝে মাঝে আসতো সাবিহা, গম্ভীর ভাবে কথা বলতো, শায়লার সব কাপর ও নিয়ে গিয়েছিল, আমার কাছে ছিল শুধু রিহানের ফটো এলবাম। বছর দুয়েক পরে টানা ১ মাস আসলো না সাবিহা, খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। একদিন এক ছোকড়া গোছের ছেলে এসে একটা চিঠি দিল। আর বলল, সাবিহা বুবু দিয়েছে। আমি বললাম ও কই? আসে না যে? ছেলেটা মাথা নিচু করে বলল, বুবু ২৫ দিন আগে রোড এক্সিডেন্ট মারা গেছে। ওর জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার সময় এই চিঠি পাওয়া গেছে, আর এই ঠিকানা। বলেই ছেলেটা চলে গেল, আমি বুকে হাত দিয়ে ঠোট চেপে ধরলাম..... বাহ সাবিত্রি বাহ শায়লা। বাহ!! তোরাও আমায় ছেড়ে চলে গেলি!

হঠাৎ একটা গাড়ির হর্নে সেদিকে তাকালাম। মার্সিডিজ বেঞ্জ। এই গাড়িটা আমার সবচেয়ে পছন্দ, কখনো কেনার সামর্থ্য হয় নি, তবে একে দুর থেকেই দেখলেই চিনে ফেলি। গাড়ির সামনের সিট থেকে একটা ২৫/২৬ এর ছোকড়া নামলো। চোখে সিওর গুচ্ছি এর সানগ্লাস,বড় বিরক্তিকর আমার কাছে, তাই দেখলেই বুঝতে পারি। ছেলেটা গাড়ির দরজা খুলে দিল। একটা মাঝ বয়েসি লোক,পাঞ্জাবি পড়া আর মহিলা বের হলো। একটু কাছে আসতেই খুব চিনলাম লোকটা কে... গ্রিলে ছেড়ে হাটা দিলাম তার দিকে, সামনে গিয়ে পাঞ্জাবির কলার চিপে ধরে দুটো থাপ্পর দিব, যেটা আমাকে আরো ২৮ বছর আগে দেওয়া উচিত ছিল। আর প্রশ্ন করবো "" আজ কেমন লাগছে রে রিহান ?"""। আমি জানি ও আমার থাপ্পর খেয়ে কান্না করবে না, ও কাঁদবে আমার প্রশ্ন শুনে। কিন্তু আমি ওকে ক্ষমা করবো না........
-সংগৃহীত -

(ভালে লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না)

প্রেমে পড়লে শরীরে যে ছয়টি মজার পরিবর্তন ঘটে?

জীবনে একবার হলেও প্রেমে পড়েনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। একবারের জন্য হলেও প্রেমে পড়ার অসাধারণ অনুভূতিটা নিশ্চয়ই কখনও না কখনও সবাই পেয়েছেন৷ প্রেমে পড়লে জীবনে আসে নানান রকমের পরিবর্তন। সেই সঙ্গে দেহেও আসে নানান পরিবর্তন। প্রেমে পড়লে শরীরে ঠিক কি কি পরিবর্তন ঘটে?

মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিবর্তিত হয়ে যায় প্রেমে পড়ার বিষয়টি মস্তিষ্কের ১২ টি স্থানে গিয়ে আঘাত করে। ফলে প্রেমে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। মস্তিষ্ক সব সময়ে যেভাবে চিন্তা করেছে, সেভাবে চিন্তা করতে পারবে না। অনেক বিষয়ই আবেগ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবে তখন।

হৃৎপিণ্ডের গতি পরিবর্তিত হয়ে যায় প্রেমে পড়লে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। আর হরমোনের এই পরিবর্তনের ফলে রক্তচাপ কমে যায়। সেই সঙ্গে কমে যায় হৃৎপিন্ডের গতিও। বিশেষ করে ভালোবাসার মানুষটির আশেপাশে থাকলে এই পরিবর্তনটা বেশি ঘটে থাকে।

ঘুম কম হয় প্রেমে পড়লে কমপক্ষে একঘণ্টা কমে যায় রাতের ঘুম। একটি সমীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে এই তথ্য। জার্নাল অফ অ্যাডোলেসেন্ট হেলথে প্রকাশিত হয়েছিল গবেষণাটি। আর তার কারণ হল, রাতে ঘুমাতে গেলেই প্রিয় মানুষটির কথা সবচাইতে বেশি মনে পড়তে থাকে এবং শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। ফলে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হতে পারে না শরীর এবং ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়।

শরীরের নানান ব্যথা কমে যায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অফ মেডিসিনের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, প্রেমে পড়লে মানুষের শরীরের নানান ধরনের ব্যাথা সেরে যায়। ভালোবাসা মস্তিষ্কের নিউরাল রিসেপটরের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ব্যাথার অনুভূতি কমিয়ে দেয়। তাই ভালোবাসাকে বিজ্ঞানীরা ব্যথার ওষুধ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ভুলোমন প্রেমে পড়লে সব কিছু ভুলে যাওয়া শুরু হয়৷ আর তার জন্য দায়ী হল অক্সিটসিন হরমোন। প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে অক্সিটসিন হরমোন উৎপন্ন হয়, যা স্মৃতিশক্তি কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। আর তাই মানুষ কিছুটা অন্যমনষ্ক এবং ভুলোমনা হয়ে যায় প্রেমে পড়লে।

স্বাদ বেশি লাগে প্রেমে পড়লে নাকি খাবারের স্বাদও বেশি লাগে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় দেওয়া হয়েছে এমন তথ্য। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, যারা নতুন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে তাদের কাছে সব খাবারের স্বাদই অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই লাগছে।

Valobasar Golpo মেয়েটা খুব লাজুক

Valobasar Golpo বিয়ের এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো মত কথাই বলেনি নুসরাত। এত লাজুক মেয়েটা ! এক সপ্তাহ পর কি এক কারনে বলেছিল, আজ অফিস থেকে একটু তারাতারি আসবেন। সেদিন অফিসে এতটুকু কাজ করতে পারিনি।

নুসরাত খুব নরম মনের একটা মেয়ে ছিল। খুব কম কথা বলতো। ‘চা খাবেন? বা কিছু লাগবে? টাইপ কথা খুব কম বলে। অনেকটা হুট করে আসে , আশেপাশে দেখে , তারপর বলে চা দিচ্ছি। উত্তরের অপেক্ষা করে না, হন হন করে হেঁটে চলে যায়। একটু কথা বলা হয় না। মেয়েটা খুব লাজুক।

রাতে ঘুমানোর সময় তার সে কি যুদ্ধ! এতটুকু ছোয়া সে লাগতে দিবে না নিজের গায়ে । কোন এক রাতে ঘুমের ঘোরে ওর পিঠে হাত রেখেছিলাম। মাঝ্রাতে ওর কান্নায় ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো। আমি চোখ কচলাতে কচলাতে বলেছিলাম, কি হলো? ও বলে, আপনি আমার পিঠে সারারাত হাত রেখেছেন। বলে আমার দিকে তাকিয়ে আবার কান্না। সেই রাতে খুব খারাপ লেগেছিলো, রাগের চোটে ঘরের বাইরে গিয়ে সোফায় ঘুমিয়েছিলাম। অথচ সকালে উঠে উল্টা আমিই বললাম, সরি। এমন আর হবে না। কত বড় ডাহা মিথ্যা কথাটা বলেছিলাম সেদিন!

বিয়ের দুই বছর হল, মেয়ের লজ্জা কমে না। এর মধ্যে ভুলিয়ে ভালিয়ে ওকে যে ছুই নি তা নয়। কিন্তু পরক্ষনেই কান্নাকাটি। আপনি কি করলেন এটা? তখন আর বলতাম না, সরি । উল্টা হাসতাম। আমার হাসি দেখে ও আরও কান্না করতো। পরে পাশে এসে গুটি মেরে ঘুমাতো। আমি ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে রাখতাম। লাজুক মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে ঘুমাতো। সারা রাতে সেই লাল আভা যেত না। কি মায়াবী একটা দৃশ্য ছিল!

এক রাতে দেখি কান্নাকাটি করে বালিশ বিছানা ভিজিয়ে একাকার। আমি সরল মনে লাইট জ্বালিয়ে বললাম, কি হল? ভেবেছিলাম বলবে, আমার পেটে পা তুলে দিয়ে ঘুমুচ্ছিলেন !

না।

তা না বলে বললো, মাথাটা খুব ব্যাথা করছে!’

মাথা চেপে ধরে বিছানায় এদিক ওদিক করছে আমার নুসরাত। আমার ভেতরটা মুচড়ে গেল। রাতে ও আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে রইলো। আমি মাথা টিপে দিয়েছিলাম। ও ঘুমালো। চেহারায় লালচে আভা সেদিন আর পেলাম না। আর কোনদিন পাইনি।

ডাক্তারের এতগুলো মেডিসিন খেয়ে খেয়ে মুটিয়ে গেল নুসরাত। চলতে ফিরতে পারতো না খুব একটা। তারপর ন্যাড়া মাথায় ঘরের এক কোণে বসে থাকতো। আগের মত কাঁদে না ও। এখন ওর কান্নার রোগ আমাকে ধরেছে। আমি মাঝে মাঝে কাঁদি

ও ঘুমালে হাত টা মেলে রাখে, আমি ওর হাতে আমার হাত গুজে দেই। ও মাঝে মাঝে তন্দ্রা ভাব নিয়ে আমার দিকে একবার তাকায়, তারপর হাসে। তারপর আবার ঘুমায়। আমি তখন কাঁদি। বালিশ ভিজিয়ে ফেলি।

একদিন কি মনে করে ও আমাকে বললো, আমি তো মরে যাবো। আমি মরে গেলে তুমি কি আবার বিয়ে করবে?

হ্যা।

কি?

আরে মজা করলাম!

না, ঠিক আছে। মরে গেলে পরে বিয়ে করে নিও। কিন্তু মুখের উপর এভাবে হ্যা বলে দিবে .. ভাবতে পারিনি।

মেয়েটা ভয়ানক আবেগে মাঝে মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরে। সেই নুসরাত, যে কিনা রাতে পিঠে হাত রাখার জন্য কান্না করতো। ও এখন আমাকে জড়িয়ে ধরে। চোখ বুজে থাকে। আমি কান্না করা শুরু করি। জানি, সময় নেই আর খুব একটা। লজ্জাবতী আমায় ছেড়ে চলে গেল বলে!

ওর মৃত্যুর পর যেই মেয়েটা কে আমি বিয়ে করি, ওর নাম মাহিয়া

খুব লাজুক না হলেও মাঝে মাঝে লজ্জা কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি তা দেখিয়ে দেয়। খুব মজা করতে জানে, আমার খুব খেয়াল নেয়।

ওর একটা ওভ্যাস আছে নুসরাতের মত। হাত মেলে ঘুমানো। মাঝে মাঝে ওই মেলে রাখা হাত আমি গুটিয়ে রাখি। মেলে রাখা হাত দেখলে আমার নুসরাতের কথা মনে পড়ে।

মাঝে মাঝে মাহিয়া কে কানে কানে ফিসফিস করে বলি, মাথা ব্যাথা করছে? মাথাটা টিপে দেই?

লাইলী আর মজনু

লাইলী আর মজনু ছিলো ক্লাসমেট। একই পাঠশালায় তারা পড়তো। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তাদের প্রেম। বেশ সঙ্গোপন প্রেম। কিন্তু প্রেম কি লুকিয়ে রাখা যায়?
প্রেম, বেনসন সিগারেটের গন্ধ আর সার্ফ এক্সেলে ধোয়া সাদা শার্টে লিপস্টিকের দাগ; কোনটাই লুকিয়ে রাখা যায় না। লাইলী মজনুর প্রেমও এক সময় তাদের বাবা মায়ের কাছে ধরা পড়ে গেল।
সব জেনে লাইলীর মা খুবই আতংকিত হয়ে পড়লেন। তিনি মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। বাড়ির চারিদিকে কড়া পাহাড়া বসালেন, যাতে মজনু কোনোভাবেই লাইলীর ত্রিসীমানায় আসতে না পারে। এভিটেক কোম্পানির সিসি ক্যামেরা বসালেন বাড়ির দেয়ালে। যাতে মজনু আসলেই কট খায়।
ওইদিকে, লাইলীর বিরহে মজনুর প্রায় অটিস্টিক হয়ে যাবার দশা। মনের দুঃখে সে মেন্টস খাওয়া শুরু করলো। অতিরিক্ত মেন্টস খাবার ফলে তার বুদ্ধির বাত্তি জ্বলে উঠলো। একটা উপায় বের করে ফেললো। দাঁড়ি গোফ লাগিয়ে অন্ধ ভিখারী সেজে লাইলীর বাড়িতে ভিক্ষা করতে গেলো। লাইলীকে এক পলক দেখে তার হৃদয় জুড়ালো। ঠিক যেভাবে স্যামসংয়ের এসিতে শরীর জুড়ায়।
কয়েকদিন পর মজনু আবারো অন্ধ ভিক্ষুক সাজলো। লাইলীর বাড়িতে গেলো। কিন্তু দিন তো সবসময় এক রকম যায় না। এবার সে ধরা পড়ে গেলো। লাইলী থাকে ডমইনো এপার্টমেন্টে। এখানকার সিকিউরিটি খুবই কড়া। দারোয়ান ইচ্ছেমতো মজুনকে পিটিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিলো।
আহত সিংহের মতো মজনু ফিরে এলো নিজ ডেরায়। শরীরের যন্ত্রণার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট দিচ্ছে মনের বেদনা। সে লাইলীকে ভুলে যাবার চেষ্টা করলো। কিন্তু প্রেম যে ফেভিকলের আঠা। চাইলেই কি ছোটানো যায়?
অন্তহীন বিরহে এক সময় মজনু পুরো পাগল হয়ে গেলো। সে বাড়ি ছেড়ে পালালো। অনেক দূরে। অচেনা শহরে, নাম না জানা বন্দরে ভ্যাগাবন্ডের মতো ঘুরে বেড়াতে লাগলো। বেশ কয়েক মাস পর, মজনুর বাবা ছেলেকে বরিশালের এক নির্জন চরে খুঁজে পেলেন। নির্জন চর হলেও এখানে গ্রামীন ফোনের নেটওয়ার্ক আছে। পুরো পাঁচ দাগ। যাই হোক, দীর্ঘদিন পর একমাত্র সন্তানকে দেখে মজনুর পিতা আবেগে অধীর হলেন। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, বাবা বাড়ি চল।
মজনু কিছুতেই বাড়ি ফিরবে না। যে বাড়িতে লাইলী নেই, সেখানে গিয়ে কি লাভ?
শেষমেষ মজনুর বাবা ছলনার আশ্রয় নিলেন। বললেন, বাড়িতে লাইলী এসেছে। তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
তখন মজনু উতলা হয়ে উঠলো। বাবা, এখনই আমি ঢাকা যাবো। চলো , ইউ বাংলা এয়ারলাইন্সের টিকেট কাটো।
বাবা বলল, ওরে পাগল। এত টাকা তো আমার নেই। তার চেয়ে গ্রীন লাইনের লঞ্চে ঢাকা ফিরি। এসি লঞ্চ। মাত্র ৫ ঘন্টায় বরিশাল থেকে ঢাকায় যাওয়া যায়।
বাড়িতে ঢোকার পর মজনু দেখলো, পুরোটাই ফাঁকি। লাইলী নেই। মজনু হাউমাউ করে কাঁদা শুরু করলো।
দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মজনু কাঁদছে তো কাঁদছেই। তার কান্না আর থামে না। অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখানো হলো। কান্না কিছুতেই থামে না। এপোলো হাসপাতালের ডাক্তাররা পর্যন্ত হার মানলেন। বললেন , সমস্যাটা মানসিক। কিছুই করার নেই।
মজনুর বাবা নিরুপায় হয়ে সেন্টারফ্রেশ খেলেন। আর তখনই তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।
তিনি তার ছেলেকে গিয়ে বললেন, বাবা, লাইলী তোর জন্য পায়ের ধুলা পাঠিয়েছে। হাত খুলে দেখালেন। সেখানে একমুঠো ধুলো। সেই ধুলো তিনি মাখিয়ে দিলেন মজনুর মুখে।
এরপর মজনু কান্না বন্ধ করে দিলো। কারণ কাঁদলে ধুলো মুছে যাবে। এই ধুলোটুকুই যে লাইলীর শেষ স্মৃতি। এ ধুলো কি মোছা যায়?

মা আমার শাশুড়ি

বিয়ের দিন আমার শাশুড়ি আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলেছিল -- "আমি কিন্তু তোকে তুই করে ডাকবো।"
কথাটি শুনে আমার মেজাজ তিড়িক করে জ্বলে উঠেছিল। তু করে ডাকবো মানে? আমি কি কোহিনূর? আমাদের বাসায় যে মেয়ে কাজ করে তাকে আমরা তুই করে ডাকি। এই বুড়ী কি আমাকে পুত্রবধূর আড়ালে কামের ছেড়ি মনে করছে!! ইচ্ছে করছিল বলি -- তাহলে আমিও আপনাকে খালাম্মা বলে ডাকবো। কোহিনূর বাসায় মা'কে খালাম্মা ডাকে।
খুব বিরক্ত লাগছিল। ভালোমতো মহিলার দিকে তাকিয়েছি দেখলাম রংচঙে কাতান পড়েছে। ঠোঁটে গাড় লাল লিপস্টিক। ম্যাকের লিপস্টিক নাকি? যতদুর জানি শ্বশুর মশাই বিয়ের বছর দুয়েক আগেই রিটায়ারমেন্টে গিয়েছে, তাহলে ম্যাক লিপস্টিক কে কিনে দিল? নিশ্চয়ই ছেলে। ছেলের টাকায় পোদ্দারি!! এ তো ডেঞ্জেরাস মহিলা!!
.
আমার অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। আমার সম্মতি ছিল। বিয়ের আগে এই মহিলা আসেননি। উনার নাকি শরীর খারাপ ছিল। আগে যদি বিন্দুমাত্র টের পেতাম এমন মালিকা হামিরা টাইপ মহিলা আমার শাশুড়ি হতে যাচ্ছে , আমি রাজি হতাম না।
.
মনে মনে একটু সান্ত্বনা পাচ্ছিলাম আমার জামাইয়ের জন্য। বিয়ের আগে ক্যাফেতে একদিন আমাদের দেখা হয়েছে। দেখেই বুঝেছিলাম এই ছেলে আমার উপর দিওয়ানা। কালো ছেলেরা রূপবতী বউদের নেওটা হয়। কবুলের সাথে সাথে আমি আমার ভবিষ্যৎ কর্তব্য ঠিক করে ফেলেছিলাম। যেভাবেই হোক, আমাদের আলাদা হতে হবে। এই মহিলার সাথে এক ছাদের নিচে কোহিনূর হয়ে আমার থাকা সম্ভব না।
.
(২)
.
আমার বাসর ঘর খুব সুন্দর ছিল। সম্পূর্ণ ঘর বেলী ফুলে সাজানো । কিন্তু আমার মন বিক্ষিপ্ত। তুই তোকারি ইস্যুটা ভুলতে পারছিলাম না। আমি সোফায় বসে ছিলাম , এমন সময় মহিলার প্রবেশ।
.
--কিরে, বাসর ঘর সাজানো ঠিক আছে? আমি নিজ হাসতে সাজিয়েছি রে।
.
আহা , কি আহ্লাদ। সাজিয়েছি রে। কি টান। কামের ছেড়ির প্রতি এতো দরদ কেন বুড়ী?
(৩)
.
অনেক রাতে আমার কালো জামাই আমার সামনে এসে বসে। সে কাচুমুচু করছিল। মা এতো অশ্লীল ছেলে এতো লজ্জা পাচ্ছে কেন? অভিনয় নাকি ? মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। ভণিতা আমার সহ্য হয় না।
-- লুনা , তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।
- হুম
-- আমার মাকে তোমার কেমন লাগলো।
.
আমি অদৃশ্য হাতে কপাল চাপড়েছিলাম। বাসর রাতে যে ছেলে প্রথম কথা তার মা'কে নিয়ে বলতে পারে - তাকে মায়ের আঁচল থেকে খসিয়ে আনা আমার পক্ষে সম্ভব না, আমি বুঝে গিয়েছিলাম।
.
--লুনা, আমার মায়ের ক্যান্সার। ডাক্তার বলে দিয়েছে খুব বেশী হলে আর দেড় মাস। বিয়েটা তাই এতো জলদি। তোমাকে মায়ের খুব পছন্দ জানো। যেদিন প্রথম তোমার ছবি দেখলো আমাকে বলেছিল - নান্টু, আমার কিন্তু এই পরীর মত মেয়েকেই চাই রে।
.
কথাগুলো বলছিল , আর নান্টু নামের মায়ের আঁচলের সেই ছেলেটি অঝোরে কাঁদছিল। আমি স্তব্দ হয়ে বসে ছিলাম।
.
(৪)
.
ষোল বছর। অনেকটা সময়। মায়ের কবরের শিমুল গাছে এখন অনেক ফুল। কি টকটকে লাল রঙ ৷
.
- মা, তোমার পরীর মত মেয়ে তোমাকে খুব মিস করে। ওপাড়ে আমাকে এখনো তুই বলেই ডাকো তো?

বৃষ্টি কল দিলো বিজয়কে

টানা ২০ টা মিসকল দেওয়ার পর
বৃষ্টি :- কল দিলো বিজয়কে...!!!!
.
বিজয় :- হ্যালো...!!!!
বৃষ্টি :- এই তুমি এতো কিপটে কেনো,, কত গুলা মিসকল দিলাম,, ব্যাক করলে না কেনো বলতো...???
বিজয় :- মোবাইলে ব্যালেন্স নাই...!!!!
বৃষ্টি :- তো ইমারজেন্সি ব্যালেন্স এনে কল করতা....!!!
বিজয় :- সেটাও শেষ...!!!!
বৃষ্টি :- ওহহ,, সকাল থেকে কল করছি,, আর এই ভরদুপুর বেলা কল রিসিভ করলা...!!!!
বিজয় :- ঘুমিয়ে ছিলাম...!!!!
বৃষ্টি :- এতক্ষণ কেউ ঘুমায়...???? ওরে বিলাসিতা রে...!!!!
বিজয় :- এটা বিলাসিতা না,, এটা মানিব্যাগ খালি থাকার প্রতিক্রিয়া...
!!!!
বৃষ্টি :- মানে...????
বিজয় :- মানে ঘুমিয়ে থাকলে ক্ষুধা লাগে না....!!!!
বৃষ্টি :- তার মানে তোমার কাছে দুপুরে খাওয়ার টাকাও নাই...????
বিজয় :- না,, তবে ম্যানেজ করে ফেলছি,,২০ টাকা....!!!!
বৃষ্টি :- বিশ টাকা দিয়ে কি খাবে শুনি...????
বিজয় :- বিশ টাকা দিয়ে এক কাপ চা,,দুইটা কেক আর একটা চকলেট খাবো দোকানদার একটা ভাংতি দিতে পারবে না তাই...!!!!
বৃষ্টি :- এগুলা খাবা তুমি...????
বিজয় :- খাইতেছি...!!!!
বৃষ্টি :- কোথায়...!!!!
বিজয় :- টঙে বসে,, সাথে মুভি ফ্রি...!!!!
বৃষ্টি :- কি মুভি...????
বিজয় :- হঠাৎ বৃষ্টি..!!!!
বৃষ্টি :- কার...??? ভিন ডিজেল নাকি স্ট্যাটহামের...???
বিজয় :- ফেরদৌস !!!
বৃষ্টি :- হা হা হা হা হা....!!!!
বিজয় :- হাসো কেনো....????
বৃষ্টি :- এমনি,, আচ্ছা একটা হেল্প করবা...????
বিজয় :- কি বলো...????
বৃষ্টি :- তোমার ডাস বাংলা এ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাচ্ছি,, একটা লোক কে দিয়ে দিবা...????
বিজয় :- ঠিক আছে দিয়ে দিবো...!!!!
বৃষ্টি :- ওকে,, এখন বাই...!!!
বিজয় :- ঠিক আছে,, বাই...!!!!
.
ব্যাংকে ৩০০০ টাকা আসার পর বিজয় বৃষ্টিকে কল দিলো....!!!!
.
বিজয় :- হ্যালো,, টাকা আসছে,, কাকে দিবো...????
বৃষ্টি :- একটা রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে এক প্যাকেট বিরিয়ানি কিনবা, কোক কিনবা আর বাকিটা পকেটে রাখবা....!!!!
বিজয় :- তারপর...????
বৃষ্টি :- ওগুলা খাবা...!!!!
বিজয় :- তারপর...!!!!
বৃষ্টি :- তারপর হঠাৎ বৃষ্টি মুভিটা দেখবা....!!!!
বিজয় :- তারপর...???
বৃষ্টি :- পুরো মুভি টা শেষ হলে,, মোবাইলে রিচার্জ করে আমাকে কল দিয়ে মুভির কাহিনি টুকু আমাকে শুনাবা.

প্রেমের টানে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাংলায়, ঠিকানা এখন ফুটপাত

ভালোবাসার টানে মার্কিন মুল্লুক ছেড়ে বাংলায়। সাত সাগর তেরো নদী পার হয়ে তিনি এসেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। সংসারও পেতেছিলেন। কিন্তু নিয়তি তাকে আজ পথে বসিয়েছে। তবে কমেনি ভালোবাসা।
মাইকেল গ্রেগরি, বসবাস করতেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেখানে বেশ ভালোই ছিলেন তিনি। কিন্তু প্রেম বলে কথা। সেখানকার ঘর-বাড়ি ছেড়ে সোজা চলে এলেন কলকাতায়। এখন বাস করছেন সেখানকার এসএসকেএম হাসপাতালের সামনের ফুটপাতে।
এবার আশা যাক পেছনের ঘটনায়, গ্রেগরির সাথে ই-মেইলে পরিচয় হয় কলকাতার খিদিরপুরের মেয়ে রানীর। তার সাথে দেখা করতেই আট বছর আগে প্রথম কলকাতায় আসেন গ্রেগরি। তারপর প্রেম। গ্রেগরি থাকতেন একটি গেস্ট হাউসে। অনলাইন ডেটা এন্ট্রির কাজই তার মূল রোজগার ছিল। কিছুদিন পরই চার হাত এক হয় মাইকেল গ্রেগরি ও রানী ন্যান্সির। সুখের সংসার বাঁধেন রানীর খিদিরপুরের বাড়িতেই।
সেই সুখের সমাপ্তি ঘটল কদিন পরই। মারা যান রানীর বাবা-মা। রোজগারও কমে যায় গ্রেগির। হিপ্পিদের মতো পথে ঘুরেই জীবন কাটাচ্ছিল তারা। অভাব ছিল কিন্তু ভালোবাসা অচ্ছেদ্য।
রানী ন্যান্সি জানান, ৫১ বছরের মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে ই-মেলের মাধ্যমে আলাপ হয় তার। পত্রালাপের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতাও বাড়তে থাকে। ভারতে এসে রানীর সঙ্গে দেখা করতে চান মাইকেল। চলেও আসেন। আর প্রথম দেখাতেই প্রেম। শুরুতে মাইকেল থাকতে শুরু করেন সদর স্ট্রিটের একটি গেস্ট হাউসে। অনলাইন ডেটা এন্ট্রি করে চালিয়ে নিচ্ছিলেন খরচ। এর মাঝেই বিয়ে করে ফেলেন দু’জনে। বিয়ের পর রানীর খিদিরপুরের ভাড়া বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন দু’জনে। পরিকল্পনা ছিল, আগামী দিনে কলকাতারই অন্য কোথাও বাড়ি নিয়ে পাকাপোক্ত ভাবে ভালোবাসার বাসা বাঁধবেন তারা।
কিন্তু বছর দেড়েক আগে রানীর মা-বাবা মারা যাওয়ার পর বাড়িওয়ালা তাদের উচ্ছেদ করতে চায়। কিছুটা বাধ্য হয়েই মালিকের দাবি মেনে ভাড়া বাড়ি ছাড়েন তারা। বিনিময়ে অবশ্য বাড়িওয়ালা ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু টাকা দেন তাদের। এরপর আবার স্ত্রীকে নিয়ে মাইকেল সদর স্ট্রিটের একটি গেস্ট হাউসে থাকা শুরু করেন।
কিন্তু সামান্য ডেটা এন্ট্রির আয়ে আর সংসার চলছিল না। এরপরই তারা সিদ্ধান্ত নেন, ষাটের দশকের হিপ্পিদের মতো তাদেরও ঠিকানা হবে ফুটপাতে। গত পাঁচ মাস ধরে এ ভাবেই ওদের রাত কেটেছে। কখনো হাওড়া স্টেশন, কখনো বিবাদী বাগ, কখনো ময়দান চত্বরে ফ্লাইওভারের নীচে। তা সত্ত্বেও তারা কখনো একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেননি।
আগস্টের শুরুতে হঠাত্‍ অসুস্থ হয়ে পড়েন মাইকেল। তাই তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিত্‍সকরা মেডিসিন বিভাগে ভর্তির পরামর্শ দেন। ১৮ তারিখ ম্যাকেঞ্জি ওয়ার্ডে ভর্তি হন মাইকেল। কিন্তু আচমকাই ৫ সেপ্টেম্বর মাইকেলকে ছুটি দিয়ে দেন চিকিত্‍সকরা। দীর্ঘদিন একটা বেড আটকে রাখা তো সম্ভব নয়! এছাড়া বাড়িতে থেকেই এখন চিকিত্‍সা সম্ভব।
বাড়ি তো নেই। নিরাশ্রয় দম্পতির ঠিকানা তাই আবার সেই ফুটপাত। হাসপাতালের সামনের সিমেন্টের একটি বেঞ্চ। তবে আশার আলোর সন্ধানে ন্যান্সি ঘুরে বেরিয়েছেন চার্চে, মিশনারিজ অফ চ্যারিটি, এমনকি মার্কিন কনসাল জেনারেলের অফিসেও। কিন্তু সাহায্য পাননি কারও।
কঠিন জন্ডিসে আক্রান্ত মাইকেল তার ভালোবাসার কোলে মাথা রেখে ফুটপাতে মৃত্যুর অপেক্ষায়। এ প্রেম কাহিনী হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যস্ত শহরের ভীড়ে। সূত্র: ইন্টারনেট

ভাই বোনের ভালোবাসা

আপু পঞ্চাশটা টাকা দেতো।
- কি!! টাকা কি গাছে ধরে নাকি,যে চাইলেই পাবি,
- তুইনা কাল টিউশনির টাকা পেলি, ঐখান থেকে
দেনা আপু।
- কানের কাছে ঘেনর ঘেনর করিস নাতো, ভাগ
এখান থেকে
- আমাকে টাকা দিলেই তো চলে যাই।আচ্ছা
পঞ্চাশ টাকা না চল্লিশ টাকা দে।
- ইস্ তোর জ্বালায় আর পারা গেল না।এই নে
বিশ টাকা ভাগ এখন থেকে।
- মাত্র বিশ টাকা দিলি।ok সমস্যা নাই চটপটি
এনে তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাব।তখন কিন্তু
আবার নজর দিস না।
- কি!!চটপটি খাবি তুই।এইনে আরো বিশ টাকা
আমার জন্যে ও আনিস।
.
মোট চল্লিশ টাকা নিয়ে রাফি দরজার সামনে
গিয়ে বলতে লাগলো।আমি কি তোর মত মেয়ে
মানুষ নাকি যে চটপটি খাব।আমার ক্রিকেট ম্যাচ আছে,তাই
টাকাটা দরকার ছিল তাই তোকে বোকা বানিয়ে নিয়ে
গেলাম।
.
-তবেরে পাজি তোর একদিন কি আমার একদিন।
খবরদার আমার টাকা দিয়ে যা,না হয় বাসায়
ডুকতে দিব না।
.
কে পায় আর রাফির নাগাল। ততখনে এলাকা ছেরে
খেলার মাঠে,,,,পউছে গেছে
.
রাফির বড় বোন শাওন্তি।রাফি যাওয়ার
কিছুক্ষণ পরেই চটপটি রান্না করেছে কিন্তু
খায়নি।মনস্থির করেছে রাছি আসলে তাকে
দিখিয়ে দেখিয়ে খাবে।একফোঁটাও দিবে না
তাকে।
.
রাত আটটায় বাড়ি ফিরেছে রাফি। রাফি
ভেবে রেখেছে আপু অবশ্যই তাকে বকা দিবে
কিন্তু না কোন টু শব্দ পর্যন্ত করলো না।
.
রাফি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে।কিছুক্ষণ
পর শাওন্তি একটি প্লেটে করে কি যেন এনে
খেতে শুরু করলো।
.
- কি খাস আপু
- মধু খাই মধু।এই মধুর নাম চটপটি, খাবি.....
- দেনা আপু একটু খাই।
- ভাগ এখান থেকে।বিকালে আমার থেকে
চটপটির কথা বলে টাকা নিয়েছিস মনে আছে।
এখন আমি খাই তুই চেয়ে চেয়ে দেখ।
.
রাফি গুমরা মুখে বসে আছে আর শাওন্তি চটপটি
খাচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে।
.
- রাফি ...
-কোন উত্তর নেই,,,,
- ফ্রিজে, প্লেটে চটপটিপ রাখা আছে নিয়ে খা।
আবার না দিলে তো আমার পেট খারাপ হবে।
.
মূহুর্তেই রাফির চেহারা উজ্জ্বল হয়ে গেল।
.
- লক্ষ্মী আপু আমার,এই কথা বলে শাওন্তির গাল
টিপে দিয়ে চটপটি আনতে ফ্রিজের দিকে অগ্রসর
হয় রাফি।
*****
আজ রাফিদের বাড়ি আলোক উজ্জ্বল।নিয়ন
বাতি গুলো জ্বলছে আর নিভছে।শাওন্তির আজ
বিয়ে।বারির আরর সঅবাই আনন্দ করলেও,,একজন ঘরে একাকি
বসে খুব কাদছে,,,,আর কেউ নয়,, , ,,,,, সে রাফি
আপু চলে গেলে কার সাথে সে খুনসুটি করবে।কে
তাকে চটপটি বানিয়ে খাওয়াবে।
.
বিয়ে পরানো শেষ এখন বর যাত্রী শাওন্তি কে নিয়ে চলে যাবে কিন্তু রাফি কিছুতেই মানতে পারছে না তার আপু আর এই বাড়িতে থাকবে না।
.
দুই ভাই বোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না
করছে।
- রাফি কথা দে ভাই একবার করে হলেও আমার
সাথে ঐ বাড়িতে গিয়ে দেখা করবি।কথা দিলাম প্রতিদিন তোকে আমি চটপটি বানিয়ে
খাওয়াবো
.
রাফির মুখ দিয়ে কথা বের হয় না, শুধুই নির্বাক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার আপুর দিকে।
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
তার চোখের কোন বেয়ে অশ্রু ধারা নামে।
.
বোন উপস্হিত থাকায় সে বুঝতে পারেনি বোনের
ভালোবাসাটা।আজ বোনের ভালোবাসাটা শুধুই
স্মৃতি।সেই স্মৃতিতে হাতরিয়ে বোনের ভালোবাসাটা উপলব্ধি করে রাফি।

বিয়ে কি আসলেই বন্ধুর জন্য ক্ষতিকর?

শিহাবের সঙ্গে রুনার বিয়ে হয়ে গেল।
শিহাব আমাদের বন্ধু। আমরা ছিলাম চৌমাথা। না না রাস্তার নয়, বন্ধুত্বের। শিহাব, হিমেল, বাবু আর আমি। আমরা রাস্তায়, ক্লাসে, টং দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হো হো হা হা করে কাটিয়ে দিতাম। আমরা শেষের দিকে এমনকি ফেসবুকিংও একসঙ্গে করতাম। নিয়মটা ছিল এ রকম—অফিস থেকে বের হয়ে নির্দিষ্ট একটা চায়ের দোকানে বসতাম চারজনে। তারপর নিজেদের মুঠোফোন বের করে ঢুকতাম ফেসবুকে। নিজেদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে আমরা পরস্পরের ছবি ও স্ট্যাটাসে লাইক দিতাম। বিচিত্র কোনো খবর পেলে নিজেদের ইনবক্স করতাম। এ রকমভাবে কয়েক ঘণ্টা জম্পেশ আড্ডা দিয়ে তবেই আমরা ঘরে ফিরতাম।
ছুটির দিনগুলোয় আমরা শিহাব আর হিমেলের মোটরসাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়তাম। সারাটা ছুটির দিন আমরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্
জ-গাজীপুর ঘুরে একযোগে চেকইন দিতাম। সেলফি তুলতাম।
সেলফি তুললাম শিহাবের বিয়েতেও। হইহল্লা কম করলাম না। বাসরঘরে শিহাবকে ঢুকিয়ে দেওয়ার সময় সবাই মিলে বললাম, ‘দেখিস, বউ পেয়ে বন্ধুদের আবার ভুলে যাস না!’
শিহাব বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই সে তাড়াতাড়ি ঢুকে গেল ঘরে। আর বেরোল না। মানে পরের সারাটা জীবনে তাকে আমরা আর আমাদের মধ্যে পেলাম না। অফিস থেকে বের হয়ে সে সোজা বাসায় চলে যায়। আমাদের সঙ্গে বড়জোর এক কাপ চা খায়। খেতে খেতেই রুনার ফোন আসে। ওদিক থেকে কী বলে কে জানে! দেখি যে শিহাবের মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বলে, ‘আসতেছি তো, এই তো...আরে না না ওদের সাথে না...কোনো আড্ডাবাজি না...জ্যামে জ্যামে!’
ফোন রেখে আমাদের দিকে আলগা সপ্রতিভ হওয়ার চেষ্টা করতে করতে সে বলে, ‘একটা দাওয়াত আছে জন্মদিনের। তাড়াতাড়ি যেতে হবে বন্ধু!’
শিহাব চলে যায়। বাবু খুবই রাগ করে। বলে, ‘শিহাব একটা...!’ আমরা উদাস মনে আড্ডা দিই। নিজেদের মুঠোফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকে ততোধিক উদাস উদাস স্ট্যাটাস দিই। শিহাব দূর থেকে লাইক দেয় সেসব স্ট্যাটাসে।
ছুটির দিনগুলোয়ও শিহাব আর আমাদের সঙ্গে যেতে পারে না। তারা শপিংয়ে যায়। সিনেমায় যায়। বিপদে পড়ি আমরা। শিহাব না এলে তো তার মোটরসাইকেলও আসে না। আমরা তিন প্রাণী, একটা মোটরসাইকেল। আমরা চাপাচাপি করে বসি তাতে। ট্রাফিক সার্জেন্ট রক্তচোখে তাকায়। একদিন কানে পর্যন্ত ধরাল। হিমেল বলে, ‘শিহাব নাই তাতে কী! দেখ, আমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। আমরা এখন একটা বাইকে এ রকম ঠেলাঠেলি করে বসি, এক ব্রেকে একসঙ্গে ঝাঁকি খাই।’
আমরা বলি, ‘হু।’ কিন্তু আমাদের মন পড়ে থাকে শিহাবে।
এভাবে একটা বছর কাটতে না কাটতেই বাবুর বিয়ে হয়ে গেল। সেদিনও আমরা খুব হইচই করলাম। সেলফি তুললাম। শিহাবও এল। শিহাবের সামনেই বাবুকে বললাম, ‘বাবু দেখিস, শিহাবের মতো হয়ে যাস না!’
বাবু বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই বাবু তাড়াতাড়ি বাসরঘরে ঢুকে গেল। এবং, সে-ও আর বেরোল না! অফিস থেকে বেরিয়ে সে-ও আর আড্ডা দেয় না আমাদের সঙ্গে। এক কাপ চা খাওয়ারও সময় পায় না। শিহাব আর বাবু একসঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগেই অবশ্য তাদের ফোন আসে। তারা প্রায় কোনো উত্তর না করে শুধু ‘হু হু’ আর ‘জ্যাম জ্যাম’ বলতে থাকে। হিমেল অত্যন্ত মেজাজ খারাপ করে। তারপর বলে, ‘এটাই ভালো হইছে, বন্ধু। এখন শুধু তুই আর আমি। আমার বাইক নিয়া সারা ছুটি ঘুইরা বেড়াব। সার্জেন্টও আর কান ধরাইতে পারবে না! শুধু তুই আর আমি!’
আমি বলি, ‘হু।’ কিন্তু আমি জানি আমার মতোই হিমেলেরও মন পড়ে থাকে শিহাব আর বাবুতে।
ছুটির দিনগুলোয় শিহাব আর বাবু তাদের স্ত্রীসহ শপিংয়ে যায়, সিনেমায় যায়। হিমেল আর আমি বিছনাকান্দি গিয়ে চেকইন দিই, সেলফি তুলি। সেই সেলফিতে আগের মতো জোশ থাকে না। হিমেল জোশ আনার চেষ্টা করে। বলে, ‘ব্যাচেলর লাইফ হলো শ্রেষ্ঠ লাইফ। এর ওপর কোনো লাইফ নাই!’
আমি শুকনা মুখে বলি, ‘হু...!’
হিমেল বলে, ‘আমি চিরদিন ব্যাচেলর থাইকা যাব!’
আজ হিমেলের বিয়ে। খুব ধুমধাম হচ্ছে। আমরাও খুব হইচই করছি। শিহাব আর বাবু তাদের বউ নিয়ে এসেছে। সবাই মিলে দেদার সেলফি তুলছি। বাসরঘরে হিমেলকে ঢুকিয়ে দেওয়ার সময় বললাম, ‘দেখিস বন্ধু, শিহাব আর বাবুর মতো আমাদের ভুলে যাস না!’
হিমেল বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই সে খুব তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে গেল।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। বললাম, ‘যে যাই বলুক, ব্যাচেলর লাইফই হলো শ্রেষ্ঠ লাইফ।’
তবে আমার কথায় ‘হু’ বলার মতো কেউ তখন আশপাশে ছিল না!

মরুর ফুল ৪৫

যেরানায় গনীমতের মাল বন্টন
তায়েফ থেকে অবরোধ তুলে আসার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জেরানায় সঞ্চিত গনীমতের মাল ভাগ বাটোয়ারা করা থেকে বিরত থাকলেন। এ দেরীর কারণ ছিলো এই যে, তিনি চাচ্ছিলেন, হাওয়াযেন গোত্রের লোকেরা ফিরে এসে তওবা করলে তিনি তাদের সবকিছু ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু অপেক্ষা করার পরও কেউ আসল না। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গনীমতের মাল বন্টন করতে শুরু করলেন। বিভিন্ন গোত্রের সর্দার এবং মক্কার নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিগণ গনীমতের মাল পাওয়ার আশায় উন্মুখ ছিলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সকল নবদীক্ষিত মুসলমানদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে গনীমতের মাল প্রদান করলেন। যাতে তারা ইসলামের ওপর দৃঢ় থাকে।
আবু সুফিয়ান ইবনে হারবকে ৪০ উকিয়া অর্থাৎ প্রায় ৬ কিলো রূপা অর্থাৎ চাঁদি এবং একশত উট দেয়া হলো। আবু সুফিয়ান বললেন, “আমার পুত্র ইয়াযিদ?” রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াযিদকেও অনুরূপ প্রদান করলেন। আবু সুফিয়ান বললেন, “আমার পুত্র মুয়াবিয়া?” রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকেও অনুরূপ প্রদান করলেন। মোট কথা একমাত্র আবু সুফিয়ান এবং তার দুই পুত্রকে প্রদান করা হলো ১৮ কিলো চাঁদি এবং তিনশত উট।
হারেছ ইবনে কালদাকে একশত উট দেয়া হল। কোরাইশ এবং কোরাইশ নয় এমন সকর গোত্রীয় নেতাকে কাউকে একশত, কাউকে পঞ্চাশ এবং কাউকে চল্লিশটি করে উট দেয়া হলো। লোকদের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়লো যে, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতো এতো দান করেন যে, তিনি দারিদ্রের আশঙ্কা করেন না। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বেদুইনরা এসে আল্লাহর রসূলকে ঘিরে ধরলো এবং তাঁকে একটি গাছের কাছে নিয়ে গেলো। তাদের ভীড়ের চোটে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাদর গাছের মধ্যে থেকে গেলো। তিনি বললেন, হে লোক সকল আমার চাদর দিয়ে দাও।
সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রান রয়েছে, যদি তোহামার বৃক্ষরাজির সংখ্যার সমান চতুষ্পদ জন্তুও আমার কাছে থাকে, তবুও আমি সব বন্টন করে দেবো। এরপর তোমরা দেখবে, আমি কৃপণ নই, ভীত নই, মিথ্যাবাদী নই।
এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিজের উটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং তার কয়েকটি লোম তুলে নিয়ে দেখিয়ে বললেন, হে লোক সকল, তোমাদের ‘ফাঈ’ মালামালের মধ্যে থেকে আমার জন্যে কিছু নেই। এমনকি এই যে উটের পশম দেখছো, এই পরিমাণও নেই শুধুমাত্র খুমুস রয়েছে, অর্থাৎ যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাথাপিছু বন্টনে এক পঞ্চামাংশের অংশ বিশেষ সেই খুমুস ও তোমাদের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
নব দীক্ষিত মুসলমানদের দেয়া হলো, যাদেরকে কোরআনে ‘মোয়াল্লেফাতুল কুলুব’ বলা হয়েছে। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেতকে বললেন, তিনি যেন গনীমতের মাল এবং সৈন্যদের এক জায়গায় করে বন্টনের হিসাব করেন। তিনি তাই করলেন। এতে প্রত্যেক সৈন্যের ভাগে চারটি উট এবং ৪০টি বকরি পড়লো। বিশিষ্ট যোদ্ধারা পেলেন ১২টি করে উট এবং ১২টি করে বকরি।
এ বন্টনে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেন। কেননা, পৃথিবীতে বহু লোক এমন রয়েছে যারা নিজের বিবেকের পথে নয় বরং পেটের পথে চলে। পশুর সামনে একমুঠো তাজা ঘাস ঝুলিয়ে পিছনে সরে গিয়ে তাকে যেমন নিরাপদ ঠিকানায় নিয়ে যাওয়া যায় তেমনি উল্লিখিত সম্পদ বন্টনের দ্বারা নবদীক্ষিত মুসলমানদের মন জয়ের চেষ্ট করা হয়েছে, যাতে তারা ঈমান শেখার সুযোগ পায় এবং ইসলামের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত হয়।
আনসারদের মানসিক অবস্থা
যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বিতরণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাজনৈতিক কৌশল প্রথমে বোঝা যায়নি। এ কারণে কিছু লোক সমালোচনা করছিলেন। বিশেষত আনসারদের মন খারাপ হয়েছিলো। কেননা তাদেরকে কিছুই দেয়া হয়নি। অথচ সঙ্কটকালে তাদের ডাকা হয়েছিলো এবং তারা দ্রুত হাযির হয়েছিলেন। তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে দাঁড়িয়ে এমনভাবে যুদ্ধ করেছিলেন যে, দৃশ্যমান পরাজয় বিজয়ে পরিণত হয়েছিলো। কিন্তু গনীমতের মাল বন্টনের ক্ষেত্রে তারা লক্ষ্য করলেন যে, সঙ্কটের সময় পলায়নাকরীদের হাত পরিপূর্ণ, অথচ তাদের হাত খালি।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোরাইশ এবং আরবের গোত্রীয় নেতাদের অধিক দান করলেন অথচ আনসারদের কিছুই দিলেন না, তখন তাদের মন খারাপ হয়ে গেলো। তারা নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা করলেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যেই বলে ফেললেন, আল্লাহর কসম, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কওমের সাথে মিশে গেছেন। হযরত সা’দ ইবনে ওবাদা (রা.)রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে বললেন, হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ব্যাপারে আপনি যা করেছেন, এতে আনসাররা খুশি হয়নি। তারা সমালোচনা করছে। তারা বলছে, আপনি শুধু নিজের কওমের মধ্যেই সম্পদ বন্টন করেছেন। আবর গোত্রদের বিশেষভাবে দান করেছেন। অথচ আনাসরদের কিছুই দেননি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, হো সা’দ, এ সম্পর্কে তোমার অভিমত কি? তিনি বললেন, হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমিও তো আমার কওমেরই একজন। প্রিয় নবী বললেন, যাও তোমার কওমের লোকদের এক জায়গায় একত্রিত করো। সা’দ তাই করলেন। কয়েকজন মোহজের এলেন, তাদেরও বসতে দেয়া হলো। অন্য কিছু লোক এলো, তাদের ফিরিয়ে দেয়া হলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এরপর জানানো হলো যে, ওরা হাযির হয়েছেন। তিনি তখন তাদের কাছে গেলেন।
আল্লাহ যথোচিত প্রশংসা করার পর প্রিয়নবী বললেন, ‘হে আনসাররা, তোমাদের অসন্তোষ তোমাদের সমালোচনার কারণ কি? আমি কি তোমাদের কাছে এমন অবস্থায় যাইনি যখন তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে? আল্লাহ তায়ালা এরপর তোমাদের হেদায়াত দিলেন। তোমরা ছিলে পরমুখাপেক্ষি, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের অর্থ-সম্পদ দিয়েছেন। তোমাদের পরস্পর অন্তর জোড়া লাগিয়ে দিয়েছেন। এসব কি ঠিক নয়? তারা বললেন, হাঁ, হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি ঠিক বলেছেন। আমাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক দয়া। তিনি বললেন, আনসাররা জবাব দিচ্ছ না কেন? তারা বললেন আমরা কি জবাব দেবো? আল্লাহ তায়াল এবং তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক বড় দয়া আমাদের ওপর। তিনি বললেন, যদি তোমরা ইচ্ছা করো তবে একথা বলতে পারো যে, আপনি আমাদের কাছে এমন সময়ে এসেছিলেন যখন আপনাকে অবিশ্বাস করা হয়েছিল, সে সময় আমরা আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আপনাকে বন্ধুহীন নিঃসঙ্গ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়েছিল, সে সময় আমরা আপনাকে সাহায্য করেছি। আপনাকে উপেক্ষা করা হয়েছিল, আমরা আপনাকে ঠিকানা দিয়েছি। আপনি মোহতাজ ছিলেন, আমরা আপনার দুঃখ লাঘব করেছি।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আনসাররা, তোমরা দুনিয়ায় তুচ্ছ একটা জিনিসের জন্যে মনে মনে নাখোশ হয়েছো। সেই জিনিসের মাধ্যমে আমি কিছু লোকের মনে প্রবোধ দিয়েছি, যেন তারা মুসলমান হয়ে যায়। তোমাদেরকে তোমাদের গৃহীত ইসলামের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। হে আনসাররা, তোমরা কি এতে খুশি নও যে, অন্যরা উট বকরি নিয়ে ঘরে ফিরবে আর তোমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে ফিরবে? সেই যাতে-পাকের শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, যদি হিজরতের ঘটনা ঘটতো, তবে আমিও একজন আনসার হতাম। যদি সব লোক এক পথে চলে, আর অন্য পথে চলে, তবে আমি আনসারদের পথেই চলবো। হে আল্লাহ তায়ালা, আনসারদের ওপর, তাদের সন্তানদের ওপর এবং তাদের পৌত্র-পোত্রীদের প্রতি রহমত করুন।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষণ শুনে লোকেরা এত বেশী কান্নাকাটি করলেন যে, তাদের দাড়ি ভিজে গেলো। তারা বলতে লাগলেন, আমাদের অংশে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থাকবেন, এতে আমরা সন্তুষ্ট। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফিরে গেলেন এবং সাহবারা নিজ নিজ জায়গায় চলে গেলেন।
হাওয়াযেন প্রতিনিধি দলের আগমন
গনীমতের মালামাল বন্টনের পর হাওয়াযেন গোত্রের একদল প্রতিনিধি মুসলমান হয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলেন। তারা ছিলেন চৌদ্দজন। যোহায়ের ইবনে ছুরাদ ছিলেন তাদের নেতা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেজায়ী চাচা আবু বারকানও তাদের মধ্যে ছিলেন। তারা এসে যুদ্ধবন্ধী এবং মালামাল ফেরত চাইলেন। তারা এমনভাবে কথা বললেন যে, সকলের মন নরম হয়ে গেলো। প্রতিনিধিদলের গোত্রের ৯ জন নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। তারা ইসলাম গ্রহণ করেন, বাইয়াত করেন এবং আল্লাহ-রসূলের সাথে কথা বলেন। তারা বলেন, যে, হে আল্লাহর রসূল, আপনি যাদের বন্দী করেছেন, এদের মধ্যে আমাদের মা বোন রয়েছেন, ফুফু খালা রয়েছেন। এটা আমাদের কওমের জন্যে অবমননাকর। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মা বোন ইত্যাদির দ্বারা আল্লাহর রসূলের রেজায়ী মা-খালা-ফুফু-বোন বুঝানো হয়েছে। প্রতিনিধি দলের পক্ষে কথা বলছিলেন যোবায়ের ইবনে ছুরাদ। আবু বারকানের মধ্য মতভেদ হয়েছে। কেউ কেউ আবু মারওয়ান এবং আবু ছারওয়ান বলে উল্লেখ করেছেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমাদের সাথে যেসব লোক রয়েছে, তোমরা তাদের দেখতে পাচ্ছো। সত্য কথা আমি বেশী পছন্দ করি। সত্যি করে বলো, তোমরা নিজের সন্তান-সন্তনিকে বেশী ভালোবাসো নাকি ধন-সম্পদ?
তারা বললেন, পারিবারিক মর্যাদার মূ্ল্যই আমাদের কাছে বেশী। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ঠিক আছে, আমি যোহরের নামায আদায়ের পর তোমরা উঠে বলবে যে, আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মোমেনীনদের পক্ষে সুপারিশকারী এবং মোমেনীনদের রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে সুপারিশকারী বানাচ্ছি। কাজেই আমাদের কয়েদীদের ফিরিয়ে দিন।
যোহরের নামাযের পর তারা সেকথা বললেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার নিজের এবং বনু আবুদল মোত্তালেবের অংশ তোমাদের জন্যে । আমি এখনই অন্য লোকদের জিজ্ঞাসা করে নিচ্ছি। সাথে সথে আনসার এবং মোহাজেররা উঠে দাঁড়িয়ে বললো, আমাদের যা কিছু রয়েছে, সেইসবও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্যে। এরপর আকরা ইবনে হাবেস উঠে দাঁড়িয়ে বললো, যা কিছু আমার এবং বনু তামিমের রয়েছে সেসব আপনার জন্যে নয়। উত্তায়না বিন হিস্ন বললো, যা কিছু আমার এবং বনু ফাজরাদের রয়েছে সেসব আপনার জন্যে নয়। আব্বাস ইবনে মায়দাস বললো, যা কিছু আমার এবং বনু সালিমের সেসবও আপনাদের জন্যে নয়। বনু সালিম গোত্রের লোকের দাঁড়িয়ে বললো, জ্বী না; বরং যা কিছূ আমাদের রয়েছে, সেসবই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্যে। একথা শুনে আব্বাস ইবনে মারদাস বললো, তোমরা আমাকে অপমান করেছো।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দেখো ওরা মুসলমান হয়ে এসেছে। এ কারণে আমি তাদের বন্দীদের বন্টনে দেরী করেছি। কাজেই যাদের কাছে বন্দী রয়েছে তারা যেন ফিরিয়ে দেয়। এটা খুব ভালো হবে। যে ব্যক্তি নিজের প্রাপ্য অংশ রাখতে চায়, সেও যেন কয়েদীদের ফিরিযে দেয়। ভবিষ্যতে যখান ‘ফাঈ’- এর মাল পাওয়া যাবে, এর বিনিময়ে তাদের ছযগুন দেয়া হবে। লোকেরা বললো, আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্যে সব কিছু সানন্দে দিতে রাযি আছি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি জানতে পারিনি-কারা রাযি, কারা কারা নারায।
এরপর বললেন, আপনারা বরং ফিরে যান, আপনাদের নেতাকে পাঠিয়ে দিন। এরপর সাহাবারা বন্দী শিশু ও মহিলাদের ফেরত দিলেন। উয়াইনা ইবনে হাসানের ভাগে একজন বৃদ্ধা পড়েছিলেন, তিনি তাকে ফিরিয়ে দিতে রাযি হলেন না, পরে তিনিও ফেরত দিলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক বন্দীকে একখানি করে কিবতি চাদর উপহার দিয়ে বিদায় করলেন।
ওমরাহ এবং মদীনায় প্রত্যাবর্তন
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গনীমতের মাল বন্টন শেষে যেরানা থেকে ওমরাহর জন্যে এহরাম বাঁধেন এবং ওমরাহ আদায় করেন। এরপর আত্তাব ইবনে আছিদকে মক্কার গভর্নর করেন।।
এই বিজয়ের সময় যখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাথায় ফতহে আযিমের মুকুট পরালেন, এই সময়ে এবং আট বছর আগে এই শহরে আসার সময়ের মধ্যে কতো ব্যবধান।
তিনি এই শহরে এমনভাবে এসেছিলেন যে, তিনি ছিলেন নিরাপত্তার প্রত্যাশী। সেই সময় তিনি ছিলেন অচেনা, অপরিচিত, সংশয় ছিলো তাঁর মনে। সে সময় স্থানীয় অধিবাসীরা তাঁকে মর্যাদা দিয়েছিলো আশ্রয় দিয়েছিলো, সাহায্য করেছিলো, তিনি যে নূর সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তারা সেই নূরের আনুগত্য করেছিলো। শুধু তাই নয় তার জন্যেই তারা অন্যদের সব রকমের শত্রুতা তুচ্ছ মনে করেছিলো। আট বছর আগে এই মদীনায় হিজরত করার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছিলো তারাই আজ পুনরায় সম্বর্ধনা দিচ্ছে। আজ মক্কা তাঁর করতলগত, তাঁর নিয়ন্ত্রণে। মক্কার জনগণ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মূর্খতা দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পদতলে বিসর্জন দিয়েছে। তিনি তাদের অতীত দিনের সকল অন্যায় ক্ষমা করে দিয়ে তাদেরকে ইসলামের মাধ্যমে গৌরব ও সাফল্য দান করেছেন।
মক্কা বিজয়ের পরবর্তী অভিযান সমূহ
এই দীর্ঘ এবং সফল সফরের পর মদীনায় ফিরে এসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় বেশ কিছুকাল অবস্থান করেন। এ সময়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিনিধিদলকে অভ্যর্থনা জানান, প্রশাসন পরিচালনার জন্যে কর্মকর্তা প্রেরণ করেন এবং দ্বীনের প্রচারের জন্যে দাঈ প্রেরণ করেন।
এছাড়া, যারা ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হওয়ার পরও তা মেনে নিতে পারেননি, বরং নানাভাবে ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতার পরিচয় দিচ্ছিলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের মোকাবেলা করেন। নিচে সেসব বিবরণ উল্লেখ করা যাচ্ছে।
যাকাতের জন্যে তহশিলদার প্রেরণ
মক্কা বিজয়ের পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ম হিজরীর শেষদিকে মদীনায় ফিরে আসেন। নবম হিজরীতে মহররমের চাঁদ ওঠার পর পরই নবী মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন গোত্র থেকে যাকাত আদায়ের জন্যে তহশীলদার প্রেরণ করেন। নিচে তাদের তালিকা দেয়া হলো।
তহশীলদারের নামগোত্রের কাছে পাঠানো হয়
১-উয়ইনা ইবনে হাসানবনু তামিম
২-ইয়াযিদ ইবনে হোসাইনআসলাম ও গেফার
৩-ওব্বাদ ইবনে বশীর আশহালিসোলাইম ও মুযাইনা
৪-রাফে ইবনে মাকিছযুহাইনা
৫-আমর ইবনুল আসবনু ফাযারাহ
৬-যাহহাক ইবনে সুফিয়ানবনু কেলাব
৭-বশীর ইবনে সুফিয়ানবনু কা’ব
৮-ইবনুল লুতবিয়াহ আযদিবনু যাবিয়ান
৯-মোহজের ইবনে আবু উমাইয়াসনআ শহর
১০-যিয়াদ ইবনে লবিদহাদরামাউত
১১-আদী ইবনে হাতেম তাঈ এবং বনু আছাদ
১২-মালেক ইবনে নোয়ইরাহ বনু হানযালা
১৩-যবরকান ইবনে বদরবনু সা’দ এর একটি অংশ
১৪-কাইস ইবনে আসেমবনু সা’দ এর অন্য অংশ
১৫-আলা ইবনে হাদরামিবাহরাইন
১৬-আলী ইবনে আবু তালেবনাযরান
এসকল সাহাবাকে তহশীলদারের দায়িত্ব দিয়ে নবম হিজরীর মহররম মাসে প্রেরণ করা হয়। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার গোত্রের লোকের ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। মহররম মাসের প্রথম দিকে অনেকে এবং পরে অনেকে রওয়ানা হয়ে যান। এর দ্বারা হোদায়বিয়ার সন্ধির পরে ইসলামের দাওয়াতের সাফল্যের ব্যাপকতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। মক্কা বিজয়ের পর দলে দলে লোক ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে শুরু করেন।
এ সময়কার কয়েকটি অভিযান
বিভিন্ন গোত্রের কাছে যাকাত আদায়ের জন্যে তহশীলদার প্রেরণ করা হয়। কিন্তু জাযিরাতুল আরবের বিভিন্ন এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা সত্তেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সেসব দমনে সৈন্য প্রেরণ করা হয়। নীচে এমন কিছু অভিযানের বিবরণ উল্লেখ করা যাচ্ছে।
(১) ছারিয়্যা উয়াইনা ইবনে হাসান ফাজারি
নবম হিজরীর মহররম মাস
উয়াইনাকে ৫০ জন সওয়ারের নেতৃত্ব দিয়ে বনু তামিম গোত্রের কাছে প্রেরণ করা হয়। কারণ হচ্ছে যে, বনু তামিম বিভিন্ন গোত্রকে উস্কানি দিয়ে জিযিয়া আদায় থেকে বিরত রেখিছিলো। এ অভিযানে কোন মোহাজের বা আনসার ছিল না।
উয়াইনাকে ইবনে হানান রাত্রিকালে পথ চলতেন এবং দিনের বেলায় আত্মগোপন করে থাকতেন। এভাবে চলার পর নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে বনু তামিম গোত্রের লোকদের ধাওয়া করলেন। তারা ঊর্ধশ্বাসে ছুটে পালালো। তবে, ১১জন পুরুষ ২১জন নারী এবং ৩০টি শিশুকে মুসলমানরা গ্রেফতার করলেন। এদের মদীনায় নিয়ে এনে রামলা বিনতে হারেসের ঘরে আটক রাখা হলো।
পরে বন্দীদের মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করতে বনু তামিম গোত্রের ১০ জন সর্দার এলেন। তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরের দরজায় গিয়ে এভাবে হাক দিলেন হে মোহাম্মদ, আমাদের কাছে আসুন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাইরে এলেন। তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জড়িয়ে ধরে কথা বলতে লাগলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সঙ্গে কাটালেন। ইতিমধ্যে যোহরের নামাযের সময় হলো। তিনি নামায পড়ালেন। নামায শেষে মসজিদের আঙ্গিনায় বসলেন। বনু তামিমের সর্দাররা নিজেদের গর্ব অহংকার প্রকাশক বিতর্কের ইচ্ছা প্রকাশ করে তাদের বক্তা আতা ইবনে হাজেবকে সামনে এগিয়ে দিলেন। তিনি বক্তৃতা করলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মোকাবেলার জন্যে খতীব ইসলাম হযরত ছাবেত ইবনে কায়েস শাম্মাসকে আদেশ দিলেন। তিনি জবাবী বক্তৃতা দিলেন। বনু তামিম সর্দাররা এরপর তাদের গোত্রের কবি জায়কাল ইবনে বদরকে সামনে এগিয়ে দিলেন। তিনি অহংকার প্রকাশক কিছু কবিতা আবৃতি করলেন। শায়েরে ইসলাম হযরত হাস্সান ইবনে ছাবেত তার জবাব দিলেন।
উভয় বক্তা ও কবি বক্তৃতা ও কবিতা আবৃতি শেষ করলে আকরা ইবনে হাবেছ বললেন, ওদের বক্তা আমাদের বক্তার চেয়ে জোরালো বক্তৃতা এবং ওদের কবি আমাদের কবির চেয়ে ভালো কবিতা আবৃত্তি করেছেন। ওদের বক্তা এবং কবির আওয়ায আমদের বক্তা ও কবির আওয়াযের চেয়ে বুলন্দ। এরপর আগন্তুক বনু তামিম সর্দাররা ইসলাম গ্রহণ করেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে দাসী উপহার প্রদান করেন এবং বন্দি নারী ও শিশুদের ফিরিয়ে দেন। নবম হিজরীর মহররম মাসে এ ঘটনা ঘটে।
২. ছারিয়্যা কুতবাহ ইবনে আমের
নবম হিজরীর সফর মাস
এই ছারিয়্যা তোরবার কাছে তাবালা এলাকায় খাশআম গোত্রের একটি শাখার দিকে রওয়ান হয়েছিলো। কোতবা ২০ জন লোকের সমন্বয়ে যাত্রা করেন। ১০টি ছিলো উট। পর্যায়ক্রমে সেসব উটে এরা সওয়ার হন। মুসরমানরা আকস্মিক হামলা করেন। এতে প্রচন্ড সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় পক্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। কোতবা অন্য কয়েকজন সঙ্গীসহ নিহত হন। তবুও মুসলমানর ভেড়া, বকরি এবং শিশুদের মদীনায় নিয়ে আসেন।
৩. ছারিয়্যা যাহহাক ইবনে সুফিয়ান কেলাবী
নবম হিজরীর রবিউল আউয়াল মাস
এই ছারিয়্যা বনু কেলাব গোত্রকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্যে রওয়ানা করা হয়েছিলো। কিন্তু তারা ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে যুদ্ধ শুরু হয়। মুসলামনরা তাদের পরাজিত করে তদের একজন লোককে হত্যা করেন।
৪. ছারিয়্যা আলকামা ইবনে মজবের মাদলাযি
নবম হিজরীর রবিউল আউয়াল মাস
আলকামাকে তিনশত সৈন্যের সেনাপতির দায়িত্ব দিয়ে জেদ্দা উপকূলের দিকে প্রেরণ করা হয়। কারণ ছিলো এই যে, কিছু সংখ্যক হাবশী জেদ্দা উপকূলের কাছে সমবেত হয়েছিলো। তারা মক্কার জনগণের ওপর ডাকাতি রাহাজানি করতে চাচ্ছিলো। আলকামা সমুদ্রে অভিযান চালিয়ে একটি দ্বীপ পর্যন্ত অগ্রসর হন। হাবশীরা মুসলমানদের আগমন সংবাদ পেয়ে পলায়ন করে।
৫. ছারিয়্যা আলী ইবনে আবু তালেব
নবম হিজরীর রবিউল আউয়াল মাস
হযরত আলী (রা.)-কে তাঈ গোত্রের কালাস বা কলিসা নামের একটি মূর্তি ভাঙ্গার জন্যে প্রেরণ করা হয়েছিলো। হযরত আলীর নেতৃত্বে একশত উট এবং পঞ্চাশটি ঘোড়াসহ দেড়শত সৈন্য রওয়ান হন। তারা সাদা কালো পতাকা বহন করেন। ফজরের সময় মুসলমানরা হাতেম তাঈয়ের মহল্লায় হামলা চালিয়ে কালাস মূর্তি ভেঙ্গে ফেলে। এরপর বহু লোক, চতুষ্পদ জন্তু এবং ভেড়া,বকরি আটক করা হয়। এসব বন্দীর মধ্যে হাতেম তাঈয়ের কন্যাও ছিলেন। হাতেমের পুত্র আদী ইবনে হাতেম সিরিয়ার পথে পালিয়ে যায়। মুসলমানরা কালাস মূর্তির ঘরে তিনটি তলোয়ার এবং তিনটি বর্ম পান। ফেরার পথে গনীমতের মাল বন্টন করা হয়। হাতেম তাঈয়ের কন্যাকে কারো ভাগে দেয়া হয়নি।
মদীনায় পৌঁছার পর হাতেম তাঈয়ের কন্যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দয়ার আবেদন জানিয়ে বললেন, হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, এখানে যে আসতে পারতো, সে আজ নিখোঁজ। পিতা মারা গেছেন। আমি বৃদ্ধা। খেদমত করার শক্তি নাই। আপনি আমার প্রতি দয়া করুন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দয়া করবেন। নবী মোস্তাফা জিজ্ঞেস করলেন, তোমার জন্যে কে আসতে পারতো? বললেন, আমার ভাই আদী ইবনে হাতেম। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে লোক-যে আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে পালিয়ে গেছে। একথা বলে নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলে গেলেন। তিনদিন একই প্রশ্নোত্তর হলো। তৃতীয় দিন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দয়া করে হাতেমের মেয়েকে আযাদ করে দিলেন। সে সময় সেখানে একজন সাহাবী ছিলেন, সম্ভবত হযরত আলী, তিনি মহিলাকে বললেন, দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সওয়ারীর জন্যেও আবেদন জানাও। মহিলা তাই করলেন। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতেমের কন্যার জন্যে সওয়ারীর ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দিলেন।
হাতেমের কন্যা মদীনা থেকে ছাড়া পেয়ে সোজা সিরিয়ায় চলে যান। ভাইদের সথে দেখা করে তিনি বলেন, দয়াল নবী এমন দয়া দেখিয়েছেন, যে দয়া তোমার বাবাও দেখাতে পারতেন না। তাঁর কাছে তুমি ভয় এবং আশার সাথে যাও। এরপর আদী ইবনে হাতেম মদীনায় গিয়ে সরাসরি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে দেখা করলেন। নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সামনে বসিয়ে বললেন, তুমি কোথায় পালাচ্ছ? আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূল থেকে পালাচ্ছ? যদি তাই হয়ে থাকে তবে বলো আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কোন উপাস্যের কথা তুমি কি জানো? তিনি বললেন, জানি না। নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, শোনো ইহুদীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ রয়েছে, খৃষ্টানরা হচ্ছে পথভ্রষ্ট। আদী বললেন, তবে আমি একজন একরোখা মুসলমান। একথা শুনে নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা খুশীতে চিকচিক করে উঠলো। তিনি হাতেমের পুত্রকে একজন আনসারীর বাড়ীতে রাখলেন। এরপর আদী ইবনে হাতেম সকাল বিকাল নবী মোস্তফার কাছে হাযির হতেন।
নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ঘরে তাঁর সামনে আদী ইবনে হাতেমকে বসিয়ে সেই দিন জিজ্ঞেস করলেন, আদী ইবনে হাতেম, তুমি কি পুরোহিত ছিলে না?
আদী বলেন, জ্বী তাই।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি তোমার কওমের গনীমতের মাল এক চতুর্থাংশ গ্রহণ করতে না?
আদি বলেন, জ্বী হাঁ তাই।
রাসূল (সাঃ) বললেন, অথচ এটা তোমাদের দ্বীনে হালাল নয়।
আদি বলেন, হাঁ তাই। সেই সময়েই আদি বুঝেছিলেন যে, তিনি হাদী বরহক, তিনি আল্লাহর প্রেরিত রসূল। কারণ, তিনি এমন বিষয় আদিকে বলেছেন, যা তার পক্ষে জানা স্বাভাবিক ছিলো না।

মরুর ফুল ৪৪

জায়েদ যে ধনী ব্যাক্তির ব্যক্তিগত দেহ রক্ষীর চাকরি নিয়েছে তার নাম সোলায়মান। জন্ম সূত্রে সে মূলত সিরিয়ার বিখ্যাত গাসসানী বংশের। মূলত সিরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী বংশ হওয়ার কারণে গাসসানী বংশ থেকেই সাধারণত সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গভর্ণর, সেনা অফিসার, সরকারী অফিসার। জমিদার নির্ধারিত হয়। ইরানী কিংবা রোমান যারা যখনই এই এলাকা দখল করেছে তারাই গাসসানীদের হাতে রেখেছে। গাসসানীরা মুলত আরব। তবে এরা মরুচারী না। গাসসানীদের নিজস্ব সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল এক লক্ষের উপরে। এই গাসসানী বংশের নেতা হলেন মূতার গভর্ণর শুরাহবিল যার সাথে তিন হাজাস মুসলিম বাহিনী প্রবল বিক্রমে যুদ্ধ করেছিল। সেটা প্রায় ছয় মাস আগের ঘটনা। তখনো মুসলমানরা আরবের পৌত্তলিকদের কেন্দ্র স্থল মক্কা বিজয় করেনি।
সোয়ালায়মানের বাণিজ্য বহর মক্কা মদীনা সহ বিভিন্ন এলাকায় আসা যাওয়া করত। সোলায়মান সাহেব ছিলেন বৃদ্ধ। তিনি বেশি দূরে চলাফেরা করতে পারেন না বলে এখন বাণিজ্য কাফেলায় আসা যাওয়া করেন না। কিন্তু ধনী হওয়ার কারণে তার শত্রুর অভাব নেই। দুই বার তার উপরে আক্রমণ হয়েছিল তার ধন সম্পদ ডাকাতির উদ্দেশ্যে। ডাকাতদের আক্রমনে তার এক ছেলে নিহত হয়, দুই ছেলে আহত হয়। সেই থেকে তিনি ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে চলেন। মাঝে মাঝে রক্ষীরা চাকরি ছেড়ে চলে যেত কারণ গাসসানীরা তাদের সেনা বাহিনীকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন মনে করছে। তাই তারা নিত্য নতুন সৈন্য সংখ্যা বাড়াচ্ছে। জায়েদ খেয়াল করে দেখল গাসানীরা মূত রাজনৈতিক কারণে রাসূল (সাঃ) এর বিরোধীতা করছে। গাসসানীদের এই মুহুর্তে রোমানরা পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে। তাদের পাশে মুসলমানরা যদি শক্তিশালী প্রতিবেশি হয় তাহলে তাদের বিপদ আছে এতদিন জমিদাররা প্রজাদের শোষন করত। অসহায় দুর্বল প্রজারা দলে দলে মদীনার পথ ধরছিল। ছোট খাট গোত্র, বংশ যারা ছিল মূলত নিচু শ্রেণীর তারাও দলে দলে ইসলামের পতাকা তলে জড়ো হচ্ছে। গাসসানীরা যেহেতু সিরিয়ার শাসনকর্তা ছিল তাই এই ব্যাপারটাতে তারা শংকিত হয়ে গেল। এছাড়া ছয় মাসে আগে সংঘটিতে যুদ্ধে তারা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তিন হাজার সৈন্যের বীরত্ব যদি এমন হয় তাহলে তিরিশ হাজার সৈন্য আসলে কী হবে? ইয়েমেন থেকে কোন বাণিজ্য কাফেলা মক্কা মদীনা হয়ে সিরিয়ায় আসলে জায়েদ সেই কাফেলার লোকদের মক্কা মদীনার কথা জিজ্ঞেস করতেন। কাফেলার লোকদের মুখ থেকে জায়েদ শুনত মুসলমানদের অবিশ্বাস্য বিজয় গাঁথা। কল্পনায় জায়েদ নিজেকেও সেইসব মুজাহিদ বাহিনীর মধ্যে কল্পনা করত যারা দুনিয়ার কোন শক্তিকে ভয় পায় না। মক্কা বিজয়ের পর পরই সংঘটিত হল হোনায়নের যুদ্ধ। জায়েদ এই যুদ্ধের খবর একটু দেরিতেই পায়।
---
এটা ছিলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তী জীবনের শেষ পর্যায়। প্রায় তেইশ বছরের শ্রম সাধনায় তিনি যে কষ্ট করেছিলেন তাঁর জীবনের এই পর্যায় ছিলো সেই স্বীকৃতি।
এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে মক্কা বিজয় ছিলো নবী (সাঃ) এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। এ বিজয়ের ফলে পরিস্থিতির যুগান্তকারী পরিবর্তন হয় এবং আরবের পরিবেশ পরিস্থিতিতে পরিবর্তন দেখা দেয়। এ বিজয় ছিলো পূর্বাপর সময়ের মধ্যে সেতুবন্ধন। আরব জনগণের দৃষ্টিতে কোরাইশ ছিলো দ্বীনের (মূর্তি পূজার) হেফাজতকারী ও সাহায্যকারী। সমগ্র আরব ছিলো এ ক্ষেত্রে তাদের অধীনস্থ। কোরায়শদের পরাজয়ের অর্থ হচ্ছে এই যে, সমগ্র আরব ভূখন্ড থেকে মূর্তিপূজা সমূলে উৎপাটিত হয়েছে চিরদিনের জন্যে।
উল্লিখিত শেষ পর্যায়টি দুই ভাগে বিভক্ত।
এক. মোজাহাদ ও যুদ্ধ।
দুই. ইসলাম গ্রহণের জন্যে বিভিন্ন কওম ও গোত্রের ছুটে আসা। এ উভয় অবস্থা পরস্পরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
হোনায়েনের যুদ্ধ
আকস্মিক অভিযানে মক্কা ‍বিজয় সংঘটিত হয়েছিলো। এতে আরবের জনগণ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলো। প্রতিবেশী গোত্রসমূহের মধ্যে এ অপ্রতাশিত অভিযানের মোকবেলা করার শক্তি ছিলো না। এ কারণে শক্তিশালী অহংকারী উচ্ছৃঙ্খল কিছু গোত্রসমূহ এবং বনু বেলালের কিছু লোক শামিল হয়েছিলো। এসব গোত্রের সম্পর্ক ছিলো কাইসে আইলানের সাথে। মুসলমানদের কাছে আত্মসমর্পণ করা তারা আত্মমর্যাদার পরিপন্থী মনে করছিলো। তাই তারা মালেক ইবনে আওফ নসরীর কাছে গিয়ে মুসলমানদের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত নিলো।
শত্রুদের রওয়ানা এবং আওতাস-এ উপস্থিতি
সিদ্ধান্তের পর মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করতে মালেক ইবনে আওফের নেতৃত্বে সকল সমবেত সকল অমুসলিম রওয়ানা হলো। তারা তাদের পরিবার-পরিজন এবং পশুপাল নিজেদের সঙ্গে নিয়ে চললো। আওতাস প্রান্তরে তারা উপস্থিত হলো। আওতাস হচ্ছে হোনায়েনের কাছে বনু হাওয়ানে এলাকার একটি প্রান্তর। কিন্তু এ প্রান্তর হোনায়েন থেকে পৃথক। হোনয়েন একটি পৃথক প্রান্তর। এটি যুল মাজাজ-এর সন্নিকটে অবস্থিত। সেখান থেকে আরাফাত হয়ে মক্কার দূরত্ব দশ মাইলের বেশী।
শত্রুদের সৈন্য সমাবেশ
আওতাস-এর অরতরণের পর লোকেরা কমান্ডার মালেক ইবনে আওফের সামনে হাযির হলো। এদের মধ্যে প্রবীণ সমর বিশারদ দুরাইদ ইবনে ছোম্মাও ছিলো। এই লোকটি বয়সের ভারে ছিলো ন্যুজ। বহু যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিলো তার। এক সময় সে ছিলো বীর যোদ্ধা। এখন অভিজ্ঞতা বর্ণনা এবং সে আলোকে পরামর্শ দেয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। সে মালেককে জিজ্ঞাসা করলো “তোমরা কোন প্রান্তরে রয়েছো?”
তাকে বলা হলো “আওতাস প্রান্তরে।”
সে বললো “এটা সৈন্য সমাবেশের উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু গাধা, উট, ঘোড়ার ডাকাডাকি, শিশু সন্তানের কান্না মেয়েদের গলার আওয়ায পাচ্ছি।”
তাকে জানানো হলো “কমান্ডার মালেক ইবনে আওফ সৈন্যদের সাথে তাদের পরিবার-পরিজন এবং পশুপালও নিয়ে এসেছে।”
দুরাইদ এর কারণ জানতে চাইলে তাকে বলা হলো যে, প্রত্যেক যোদ্ধা তার কাছে মজুদ স্ত্রী-পুত্র-কন্যা এবং পশুপালের আকর্ষণে বীরত্বের সাথে লড়াই করবে!
মালেক ইবনে আওফের এ জবাব শুনে দুরাইদ বললো “আল্লাহর কসম, তুমি ভেড়ার রাখাল। পরাজিত ব্যক্তিকে কোন কিছু কি ধরে রাখতে পারে? দেখো, যুদ্ধে যদি তুমি জয়ী হও, তবে তলোয়ার এবং বর্শা দ্বারাই উপকৃত হবে। আর যদি পরাজিত হও তবে অপমানিত হবে। কারণ পরাজিত যোদ্ধার স্ত্রী, পুত্র, পরিবার এবং পশুপাল কিছুই নিরাপদ থকবে না।”
দুরইদ বিভিন্ন গোত্রের সর্দারদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। সব কথা শোনার পর কমান্ডারকে বললো, “হে মালেক, তুমি বনু হাওয়াযেন গোত্রের পরিবার-পরিজন ও পশুদল নিয়ে এসে ভাল কাজ করোনি। তাদেরকে নিজ জিন এলাকর নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দাও। পরে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে তোমরা বে-দ্বীনের সাথে লড়াই করো। যদি তুমি জয়লাভ করো তবে পেছনের যারা থাকবে তারা এসে তোমাদের সথে মিলিত হব্। যদি পরাজিত হও, তবে ওরা নিরাপদ থাকবে।”
কমান্ডার মালেক ইবনে আওফ এ পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করে বললো, “খোদার কসম, আমি তা করতে পারি না। তুমি বুড়ো হয়েছো তোমার বুদ্ধিও বুড়ো হয়ে গেছে। হয়তো হাওয়াযেন গোত্র আমার আনুগত্য করবে আমি তলোয়ারের ওপর হেলান দিয়ে আত্মহত্যা করবো।” মোটকথা, দুরাইদের নাম বা তার পরামর্শ এ যুদ্ধে শামিল হোক, এটা মালেক পছন্দ করলো না।
হাওয়াজেন গোত্রের লোকেরা বললো, “আমরা তোমার আনুগত্যে অটল রয়েছি।”
দুরাইদ বললো, “আমি এ যুদ্ধের সাথে নাই। এ যুদ্ধের কোন দায়দায়িত্ব আমার নাই। হায়, আজ যদি আমি জওয়ান হতাম, যদি আমার ছুটোছুটি করার মতো বয়স থাকতো, তাবে আমি লম্বা পশমের মাঝারি সাইজের বকরির মতো ঘোড়ার নেতৃত্ব করতাম।”
শত্রুদের গুপ্তচর
মুসলমানদের খবর সংগ্রহে মালেক ইবনে আওফ দু’জন গুপ্তচর পাঠালো। তারা গন্তব্যে পৌঁছার আগেই ফিরে এলো। তারা ছিলো চলৎশক্তিহীন। কমান্ডারের কাছে তাদের হাযির করার পর কমান্ডার বললো, “তোমাদের সর্বনাশ হোক, এ অবস্থা হলো কেন?”
তারা বললো, “আমরা কয়েকটি চিত্রল ঘোড়া এবং মানুষ দেখেছি, এরপরই আমাদের এ অবস্থা হয়েছে।”
এক দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শত্রুদের নান রকম খবর পাচ্ছিলেন। তিনি আবু হাদরাদ আসলামিকে বললেন, “তুমি যাও, শত্রুদের মাঝে গিয়ে অবস্থান করে তাদের খবরাখবর এনে দাও। তিনি তাই করলেন।”
মক্কা থেকে হোনায়েনের পথ যাত্রা
অষ্টম হিজরীর ৬ই শাওয়াল রোববার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে হোনায়েনের উদ্দেশ্যে রওয়ান হলেন। এটা ছিলো তাঁর মক্কায় আগমনের উনিশতম দিন। তাঁর সঙ্গে ছিল ১২ হাজার সৈন্য। এদের মধ্যে ১০ হাজার মদীনা থেকে মক্কায় এসেছিলেন, বাকি ২ হাজার মক্কা থেকে রওয়ানা হন। মক্কার ২ হাজারের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন নও মুসলিম। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফওয়ান ইবনে উমাইয়ার কাছ থেকে অস্ত্রসহ একশত বর্ম ধার নিলেন। আত্তাব ইবনে আছিদকে মক্কার গভর্ণর নিযুক্ত করলেন।
দুপুরের পরে একজন সাহাবী এসে বললেন, “আমি অমুক পাহাড়ে উঠে দেখেছি বনু হাওয়াযেন সপরিবারে ‍যুদ্ধ করতে এসেছে। তারা নিজেদের পশুপালও সঙ্গে এনেছে।”
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে বললেন, “ইনশা আল্লাহ আগামীকাল এগুলো মুসলমানদের গনীমতের মাল হবে।” রাতের বেলা হযরত আনাস ইবনে মারছাদ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করলেন।
পথে সাহাবারা যাতে আনওয়াত নামে একটি কূল গাছ দেখলেন। মক্কার মোশরেকরা এ গাছের সাথে নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র ঝুলিয়ে রাখতো। এর পাশে পশু যবাই করতো এবং এর নীচে মেলা বসাতো। কয়েকজন সহযোদ্ধা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, “ওদের যেমন যাতে-আনওয়াত নামে গাছ রয়েছে আপনি আমাদের জন্যেও ওরকম একটি গাছ তৈরী করে দিন।”
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আল্লাহু আকবর, সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তোমরাতো সেই রকম কথা বলেছো, যে রকম কথা হযরত মুসার কওম তাঁকে বলেছিলো। তারা বলেছিলো, ‘এজআল লানা এলাহান কামা লাহুম আলেহাতুন।’ অর্থাৎ আমাদের জন্যে একজন মাবুদ বানিয়ে দিন, যেমন ওদের জন্যে মাবুদ রয়েছে। তোমরা তো দেখছি পূর্ববর্তীদের তরিকার ওপরই উঠে পড়েছো।”
কিছু লোক সৈন্য সংখ্যার আধিক্য দেখে বললেন, আমরা আজ কিছুতেই পরাজিত হব না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথাটিও পছন্দ করলেন না।
মুসলমানদের আকস্মিক হামলাঃ
১০ই শাওয়াল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ইসলামী বাহিনী হোনায়েনে পৌঁছুলো। মালেক ইবনে আওফ আগেই এ জায়গায় পৌঁছে রাতের অন্ধকারে তার সৈন্যদের বিভিন্ন স্থানে গোপনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছিলো। তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যে, মুসলমানরা আসা মাত্র তাদের ওপর তীর নিক্ষেপ করবে এবং কিছুক্ষণ পর একজোটে হামলা করবে।
এদিকে খুব প্রত্যুষে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৈন্যদের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করলেন। খুব ভোরে মুসলিম সৈন্যরা হোনায়েনের প্রান্তরে পদার্পন করলেন। শত্রু সৈন্য সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না। শত্রুরা যে ওঁৎ পেতে রয়েছে এ সম্পর্কে অনবহিত মুসলমান সৈন্যরা নিশ্চিন্তে অবস্থান নেয়ার সময় হঠাৎ করে তাদের ওপর তীর বৃষ্টি শুরু হলো। কিছুক্ষণ পরই শত্রুরা একযোগে মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। মুসলমানরা ভ্যাবা চেকা খেয়ে ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করলেন। এটা ছিলো সুস্পষ্ট পরাজয়। নও মুসলিম আবু সুফিয়ান বললেন, ওরা সমুদ্র পারে না গিয়ে থামবে না। জাবালা অথবা কালদা ইবনে জোনায়েদ বললো, দেখো আজ যাদু বাতিল হয়ে গেছে। বনু হাওয়াযেন ছিলো তীরন্দাজ, মুসলমানরা হামলা করলে তারা পালিয়ে গেলো। এরপর মুসলমানরা গনীমতের মাল সংগ্রহ করতে লাগল। ইতিমধ্যে শত্রুরা তীর বৃষ্টি দিয়ে মুসলমানদের অভ্যর্থনা জানালো।
সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, হযরত আনাস বলেন, আমরা মক্কা জয় করেছি। পরে হোনায়েনে অভিযান চালিয়েছি। মোশরেকরা চমৎকার সারিবদ্ধভাবে এসেছিলো। অমন সুশৃঙ্খল অবস্থা আমি কখনো দেখিনি। প্রথম সওয়ারদের সারি, এরপর পদব্রজীদের সারি, তাদের পেছনে মহিলারা এর পেছনে পেছনে ভেড়া বকরি, তারপর পশুপাল। আমরা সংখ্যায় ছিলাম অনেক। আমাদের সৈন্যদের ডানদিকে ছিলেন হযরত খালেদ (রা.)। কিন্তু আমাদের সওয়ার আমাদের পেছনে আত্মগোপন করতে লাগলেন, কিছুক্ষণ পর তারা পলায়ন করলেন। আরবরাও পলায়ন করলো। ওরাও পলায়ন করলো, যাদের সম্পর্কে তোমরা জানো।
সাহবারা ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডানদিকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, হে লোক সকল, তোমরা আমার দিকে এসো, আমি আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ। সেই সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কয়েকজন মোহজেরে এবং তাঁর বংশের সাহাবারা ছাড়া অন্য কেউ ছিলো না। আল্লাহর রসূলের সাথে বারোজন দৃঢ়পদ ছিলেন। সাহাবার নিরাপদে আশ্রয়ের জন্য চলে গিয়েছিলেন। আল্লাহর রসূলের কাছাকাছি আশিজন দৃঢ়ভাবে অবস্থান করেন। ওনারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেননি।
সেই নাযুক সময়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নযিরবিহীন বীরত্ব ও সাহসিকাতার পরিচয় দিলেন। তিনি শত্রুদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং উচ্চস্বরে বলছিলেন, আনান্নবিউল লা কাযেব আনা ইবনু আবদুল মোত্তালেব অর্থাৎ আমি নবী, আমি মিথ্যাবাদী নই, আমি আবদুল মোত্তালেবের পুত্র।
সেই সময় আবু সুফিয়ান এবং হযরত আব্বাস রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খচ্চর ধরে রেখেছিলেন যাতে করে খচ্চর সামনের দিকে ছুটে যেতে না পারে। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচা হযরত আব্বাসকে বললেন, লোকদের যেন তিনি উচ্চস্বরে ডাকতে শুর করেন। হযরত আব্বাসের ছিলো দরাজ গলা। হযরত আব্বাস বলেন, আমি উচ্চ কন্ঠে ডাকলাম, কোথায় তোমরা বৃক্ষওয়ালা, বাইয়াতে রেদওয়ানওয়ালা। সাহাবার ওনার কন্ঠ শুনে এমনভাবে ছুটে আসতে শুরু করলেন যেমন গাভীর আওয়ায শুনে বাছুর ছুটে আসে। সাহাবারা বললেন, আমরা আসছি।
সাহাবারা ছুটে আসতে শুরু করলে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারিদিকে একশত সাহাবী সমবেত হলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শত্রুর মোকাবেলা করলেন। যুদ্ধ শুরু হলো।
এরপর আনসারদের ডাকা হলো। ক্রমে বনু হারেস ইবনে খাযরাজের মধ্যে এই ডাক সীমিত হয়ে পড়লো। এদিকে সাহাবারা রণাঙ্গণ থেকে যেভাবে দ্রুত চলে গিয়েছিলেন, তেমনি দ্রুত ফিরে আসতে লাগলেন। দেখতে দেখতে প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রণাঙ্গনের দিকে তাকিয়ে বললেন, এবার চুলো গরম হয়েছে। এরপর একমুঠো ধুলো তুলো ‘শাহাতুল উজুহ’ বলে শত্রুদের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করলেন। এর অর্থ হচ্ছে চেহারা বিগড়ে যাক। নিক্ষিপ্ত ধুলোর ফলে প্রত্যেক শত্রুর চোখ ধুলি ‍ধুসরিত হলো। তারা পৃষ্ট প্রদর্শন করে প্রাণ নিয়ে পালাতে শুরু করলো।
শত্রুদের পরাজয়
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ধুলো নিক্ষেপের পরই যুদ্ধের চেহারা পাল্টে গেলো, শত্রুরা পরাজিত হলো। ছাকিফা গোত্রের ৭০ জন কাফের নিহত হলো। তাদের নিয়ে আসা অস্ত্র ধন-সম্পদ, রসদ, সামগ্রী, নারী, শিশু, পশুপাল সবকিছু মুসলমানদের হস্তগত হলো।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন এ সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে হোনায়নের যুদ্ধের দিনে, যখন তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিলো তোমাদের সংখ্যাধিক্যে এবং তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং বিস্তৃত হওয়া সত্তেও পৃথিবী তোমাদের জন্যে সঙ্কুচিত হয়েছিলো এবং পরে তোমরা পৃষ্ট প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে, অতপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর কাছ থেকে তাঁর রসূল এবং মোমেনদের ওপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং এমন এক সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করেন যা তোমরা দেখতে পাওনি এবং তিনি কাফেরদের শাস্তি প্রদান করেন। এটা কাফেরদের কর্মফল।‘(সূরা তাওবা, আয়াত ২৫-২৬)
শত্রুদের গমন পথে ধাওয়াঃ
উভয় পক্ষে কিছুক্ষণ মোকাবেলার পরই মোশরেকরা পলায়নের পথ ধরলো। পরাজয়ের পর একদল শত্রু তায়েফের পথে অগ্রসর হলো। একদল নাখলার দিকে এবং একদল আওতাসের পথে অগ্রসর হলো। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে সাহাবাদের মধ্যে হযরত আবু আমের আশআরী (র.)শাহদাত বরণ করেন। তিনি একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন।
একদল সহাবী নাখলার পথে গমনকারী অমুসলিমদের ধাওয়া করলেন। দুরাইন ইবনে ছোম্মাকে পাকড়াও করা হলো। হযরত রাবিয়া ইবনে রফি তাকে হত্যা করলেন।
পরাজিত শত্রুদের সবচেয়ে বড় দল তায়েফের দিকে অগ্রসর হলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গনীমতের মাল জমা করার পর তায়েফের পথে রওয়ানা হলেন।
গনীমত
গনীমতের মালের বিবরণ নিম্মরূপ। যুদ্ধবন্দী ৬ হাজার, উট ২৪ হাজার। বকরি ৪০ হাজারের বেশী। চাঁদি ৪ হাজার উকিয়া। অর্থাৎ ১ লাখ ৬০ হাজার দিরহাম। এর ওজন ৬ কুইন্টালের চেয়ে কয়েক কিলো কম। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমুদয় মালামাল জমা করার নির্দেশে দিলেন। যেরানা নামক জায়গায় সমুদয় সম্পদ একত্রিত করে হযরত মাসউ ইবনে আমর গেফারী (রাঃ)-এর নিয়ন্ত্রণে রাখলেন। তায়েফ যুদ্ধ থেকে অবসর না পাওয়া পর্যন্ত এগুলো বন্টন করা হয়নি।
বন্দীদের মধ্যে শায়মা বিনতে হারেস সাদিয়াও ছিলেন। ইনি ছিলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দূধবোন। তাঁকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে এসে তাঁর পরিচয় দেয়ার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি চিহ্নের দ্বারা তাকে চিনতে পারেন। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে যথেষ্ট সম্মান করেন। নিজের চাদর বিছিয়ে তাকে বসতে দেন। সাদিয়ার মতামত অনুসারে তার প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়ে তিনি তাকে নিজের গোত্রের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেন।
তায়েফের যুদ্ধ
এ যুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে হোনায়েনের যুদ্ধেরই অংশ। হাওয়াযেন ও ছাকিফ গোত্র পরাজিত লোকদের অধিকাংশই তাদের কমান্ডার মালেক ইবনে আওফ নসরীর সাথে তায়েফে চলে গিয়ে আত্মগোপন করেছিলো তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তায়েফের পথে রওয়ান হলেন।
প্রথমে খালিদ ইবনে ওলীদের নেতৃত্বে এক হাজার সৈন্য পাঠানো হয়, এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রওয়ান হন। পথে নাখলা, ইমানিয়া এবং মনযিল অতিক্রম করেন। লিয়াহ নামক জায়গায় মালেক ইবনে আওফের একটি দুর্গ ছিলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে সেই দুর্গ ধ্বংস করে দেয়া হয়। এরপর সফর অব্যাহত রেখে তয়েফ পৌঁছার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তায়েফ দুর্গ অবরোধ করেন।
অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হয়। সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আনাসের (রা.) বর্ণনা অনুযায়ী এই অবরোধ ৪০ দিন স্থায়ী হয়। কোন কোন সীরাত রচয়িতা ২০ দিন বলেও উল্লেখ করেছেন। কেউ ১০, কেউ ১৫ আবার কেউ ১৮ দিন উল্লেখ করেছেন।
অবরোধকালে উভয় পক্ষের মধ্যে তীর ও পাথর নিক্ষেপ করা হয়। মুসলমানদের প্রথম অবরোধকালে তাদের ওপর লাগাতার তীর নিক্ষেপ করা হয়। প্রথম অবস্থায় মুসলমানরা অবরোধ শুরু করলে দূর্গের ভেতর থেকে তাদের ওপর এতো বেশী তীর নিক্ষেপ করা হয়েছিলো যে মনে হয়েছিলো পঙ্গপাল ছায়া বিস্তার করেছে। এতে কয়েকজন মুসলমান আহত এবং ১২ জন শহীদ হন। ফলে মুসলমানরা তাঁবু সরিয়ে কিছুটা দূরে নিয়ে যান।
এর পরিস্থিতি মোকাবেলায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ যন্ত্র স্থাপন করেন এবং দূর্গ লক্ষ্যে করে কয়েকটি গোলা নিক্ষেপ করেন। এতে দেয়ালে ফাটল ধরে ছিদ্র হয়ে যায়। সাহাবারা সেই ছিদ্র দিয়ে তাদের প্র্রতি পাথর নিক্ষেপ করেন। কিন্তু শত্রুদের পক্ষ থেকে বৃষ্টির মতো তীর নিক্ষেপ করা হয়, এতে কয়েকজন মুসলমান শহীদ হন।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শত্রুদের কাবু করতে কৌশল হিসাবে আঙ্গুর গাছ কেটে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এতে বিচলিত ছকিফ গোত্র আল্লাহ তায়ালা এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের দোহাই দিয়ে এ কাজ থেকে বিরত থাকার আবেদন জানালো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা মঞ্জুর করলেন।
অবরোধের সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা করলো যে, যেসব ক্রীতদাস দূর্গ থেকে নেমে আমাদের কাছে আসবে, সে মুক্ত। এতে ত্রিশজন লোক দূর্গ থেকে এসে মুসলমানদের সাথে শামিল হয়।
আগত ক্রীতদাসদের মধ্যে হযরত আবু বকরাহও ছিলেন। দুর্গের দেয়ালে উঠে ঘূর্ণায়মান চরকার মাধ্যমে তিনি নীচের দিকে ঝুলে পড়েন এবং মুসলমানদের কাছে এস আত্মসমর্পণ করেন। আবরবী ভাষায় ঘারাবিকে বকরাহ বলা হয়। এ কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগন্তুক এ ক্রীতদাসের উপাধি দিলেন আবু বকরাহ। মুসলমানের কাছে এসে আত্মসমর্পণকারী ক্রীতদাসদের রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুক্ত করে দিলেন এবং তাদেরকে ত্রিশজন সহাবীর দায়িত্বে দিয়ে বললেন, তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে দাও। এ ঘটনা দুর্গের শত্রুদের জন্যে বড়োই মারাত্মক হয়ে দাঁড়ালো।
অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়লো এবং শত্রদের আত্মসমর্পণের কোন লক্ষণ দেখা গেলো না। তারা সারা বছরের খাদ্য দুর্গের ভেতরে মজুদ করে রেখেছিলো। এ সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নওফেল বিনে মাবিয়া দয়লির সাথে পরামর্শ করেন। নওফেল বলেন, শৃগাল তার গর্তে গিয়ে ঢুকেছে। যদি আপনি অবরোধ দীর্ঘায়িত করেন, তবে তাদের পাকড়াও করতে পারবেন। আর যদি ফিরে যান, তবে তারা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। একথা শুনে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবরোধ অবসানের সিদ্ধান্ত নিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) সাহাবাদের মধ্যে ঘোষণা প্রচার করলেন যে, ইনশা আল্লাহ আগামীকাল আমরা ফিরে যাব । সহাবারা এ ঘোষণার সমালোচনা করলেন। তারা বললেন, এটা কেমন কথা? তায়েফ জয় না করে আমরা ফিলে যাব? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহবাদের ভিন্নমত শুনে বললেন, আচ্ছা কাল সকালে যুদ্ধে চলো। পরদিন সাহাবারা যুদ্ধে গেলেন, কিন্তু আঘাত খেয়ে ফিরে আসা ছাড়া অন্য কোন লাভ হলো না। এ অবস্থা দেখে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইনশা আল্লাহ আগামী আমরা ফিরে যাবো। সর্বস্তরের সাহাবারা এ সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করলেন। তারা চুপচাপ জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে শুরু করলেন। এ অবস্থা দেখে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃদু হাসতে লাগলেন।
সাহবায়ে কেরাম ফিরে যাওয়ার পথে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আয়েবুনা তায়েবুন আবেদুনা লেরাব্বেনা হামেদুন।’ অর্থাৎ তোমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, এবাদাতগুজার এবং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রশংসা করতে থাকো।
সাহাবারা বললেন, হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাকিফের লোকদের জন্যে বদদোয়া করুন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ তায়ালা ছাকিফকে হেদায়াত করুন এবং তাদের নিয়ে আসুন।

মরুর ফুল ৪৩

সেনাদল এবং প্রতিনিধি দল প্রেরণঃ
১. মক্কা বিজয়ের পর পরই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৮ম হিজরীর রমযানের ২৫ তারিখে খালেদ ইবনে ওলীদ (রা.)-এর নেতৃত্বে একটি অভিযান প্রেরণ করেন। ওজ্জা নির্মূল করতে এ অভিযান প্রেরণ করা হয়। ওযযা ছিলো নাখালায়। কোরায়শ এবং সমগ্র বনু কেনানা গোত্র এ মূর্তির পূজা করত। এটি ছিলো তাদের সবচেয়ে বড় মূর্তি। বনু শায়বান গোত্র এ মূর্তির তত্ত্বাবধান করতো। হযরত খালেদ তিরিশ জন সওয়ারী সৈন্যসহ নাখলায় গিয়ে এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেন। ফিরে আসার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত খালেদকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কিছু দেখেছ? তিনি বলেন, কই না তো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তো তুমি মূর্তিই ভাঙ্গতে পারোনি?
হযরতে খালেদ পুনরায় নাঙ্গা তলোয়ার উঁচিয়ে গেলেন। এবার তিনি দেখলেন তাঁর দিকে এক কালো নগ্ন মাথা ন্যাড়া মহিলা এগিয়ে আসছে। হযরত খালেদ এরপর তরবারি দিয়ে আঘাত করলেন। এতে সেই মহিলা দুই টুকরো হয়ে গেলো। হযরত খালেদে এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এসে খবর দিলেন। তিনি বলেলেন, হাঁ সেই ছিলো ওযযা। এবার সে তোমাদের দেশে পূজার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে।
২. এরপর সেই মাসেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোয়া নামক অন্য একটি মূর্ত ধ্বংস করতে আমর ইবনু আসকে পাঠালেন। এটা ছিলো মক্কা থেকে তিন মাইল দূরে। রেহাত এলাকায় বনু হোযাইল গোত্র এর পূজা করতো। হযরত আমর সেখানে যাওয়ার পর পুরোহিত বললো “তুমি কি চাও?”
তিনি বলেলেন “রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে এ মূর্তি ধ্বংস করতে এসেছি।”
পুরোহিত বললো “তুমি সেটা পারবে না।”
তিনি বললেন “কেন?”
পুরোহিত বললো “অদৃশ্য থেকে তোমাকে বাধা দেয়া হবে।”
তিনি বললেন “তোমার জন্যে আফসোস। এই মূর্তি কি দেখতে পায়? শুনতে পায়? তুমি এখনো মিথ্যার ওপর রয়েছো?”
এরপর তিনি মূর্তি ভেঙ্গে সঙ্গীদের মূর্তিঘরে অনুসন্ধান চালাতে বললেন। কিন্তু কোন জিনিস পাওয়া গেলো না। হযরত আমরের নির্দেশে মূর্তি ঘরও ধ্বংস করে দেয়া হলো। এরপর তিনি পুরোহিতকে জিজ্ঞাসা করলেন “কি? কেমন বুঝলে?”
পুরোহিত বললো “আমি লা শারিক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম।”
৩. সেই মাসেই হযরত সা’দ ইবনে যায়েদ আশহালির নেতৃত্বে বিশজন সৈন্য প্রেরণ করা হলো। এরা মানাত মূর্তি ধ্বংস করতে গেলেন। কোদায়েদের কাছে মাশাল নামক এলাকায় এ মূর্তি ছিলো। গাসসান, আওস এবং খাযরাজ গোত্র এর পূজা করতো। হযরত সা’দ সেখানে পৌছার পর পুরোহিত বললো, “কি চাও?”
তিনি বললেন “মানাতকে ধ্বংস করতে চাই।”
পুরোহিত বললো “তুমি জানো আর তোমার কাজ জানে।”।
হযরত সা’দ লক্ষ্য করলেন, বীভৎস চেহারার কালো ন্যাড়া মাথা এক মহিলা বেরিয়ে এসেছে। সে বুক চাপেড়াতে চাপড়াতে সে হায় হায় করছিলো।
পুরোহিত বললো “মানাত তোমার কিছু নাফরমানকে ধারো।” ইত্যবসরে হযরত সা’দ তলোয়ার দিয়ে মানাতকে দ্বিখন্ডিত করে ফেললেন। এরপর মূর্তিঘর ধ্বংস করা হলো। কিন্তু সেখানে কোন কিছু পাওয়া গেলো না।
৪. ওজ্জা ধ্বংস করে ফিরে আসার পর সেই মাসেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত খালেদ (রাঃ) কে বনু জাজিমার কাছে পাঠালেন। ইসলামের দাওয়াত নিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল। হযরত খালেদ (রাঃ) মোহাজের, আনসার এবং বনু সালিম গোত্রের সাড়ে তিন শত লোক নিয়ে রওয়ান হলেন। বনু জাজিমা গোত্রের কাছে পৌঁছে তারা ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তার ‘আসলামনা ’ অর্থাৎ আমরা ইসলাম গ্রহণ করলাম বলার পরিবর্তে বললো, ছাব্বানা ছাব্বানা অর্থাৎ আমরা নিজেদের দ্বীন ত্যাগ করলাম। এতে হযরত খালেদ তাদের হত্যা এবং গ্রেফতার শুরু করলেন। তারপর একজন করে বন্দীকে নিজের প্রত্যেক সঙ্গীর কাছে দিয়ে তাদের হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর এবং তাঁর সঙ্গীরা সেনাপতির আদেশ পালনে অস্বীকৃতি জানালেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে এ ঘটনা উল্লেখ করা হলো । তিনি দুই হাত আকাশের দিকে তুলে দুই বার বললেন, ‘হে আল্লাহ তায়ালা খালেদ যা ‍কিছু করেছে, আমি তা থোকে তোমার কাছে পানাহ চাই।’
হযরত খালেদের নির্দেশে বনু সালিম গোত্রের লোকেরা নিজেদের বন্দীদের হত্যা করেন। আনসার এবং মোহাজেররা তাদের বন্দীদের হত্যা করেননি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ঘটনার পর হযরত আলী (রাঃ)-কে পাঠিয়ে নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং তাদের অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করেন। এই ঘটনায় হযরত খালেদ এবং হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ)-এর মধ্যে তীব্র কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। এ খবর শোনার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খালেদ, থামো, আমার সাথীদের কিছু বলা থেকে বিরত হও। আল্লাহর শপথ, যদি ওহুদ পাহাড় সোনা হয়ে যায় এবং তার সবটুকু ‍তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করো তবু আমার সাথীদের মধ্যে কারো এক সকাল বা এক বিকেলের এবাদাতের সম মর্যাদাতেও তুমি পৌঁছুতে পারবে না।
মক্কা বিজয়ের যুদ্ধই ছিলো প্রকৃত মীমাংসা কারী যুদ্ধ এবং মক্কা বিজয়ই ছিলো প্রকৃত বিজয়, যা মোশরেকদের শক্তিমত্তা ও অহংকারকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছিলো। আরব উপদ্বীপে শেরক বা মূর্তিপূজার আর কোন অবকাশই থাকলো না। কেননা মুসলমান ও মোশরেক ছাড়া সাধারণ শ্রেণীর মানুষরা অত্যন্ত কৌতুহলের সঙ্গে ব্যাপারটি দেখতে চাচ্ছিল যে, এই সংঘাতের পরিণতিটা কি রূপ নেয়। সাধারণ মানুষ এটা ভালভাবেই জানতো যে, যে শক্তি সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, কেবলমাত্র সেই শক্তিই কাবার ওপর স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। তাদের বিশ্বাসকে অধিক বলীয়ান করেছিলো অর্ধশতাব্দী পূর্বে সংঘটিত আবরাহা ও তার হস্তী বাহিনীর ঘটনা। আল্লাহর ঘরের ওপর আক্রমণ চালানোর উদ্দেশ্যে অগ্রসরমান হস্তীবাহিনী কিভাবে ধ্বংস নিচিহ্ন হয়েছিলো তা তৎকালীন আরববাসীরা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছিলো।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, হোদায়বিয়ার সন্ধি ছিলো মক্কা বিজয়ের সূচনা বা ভূমিকা স্বরূপ। এ সন্ধির ফলে শান্তি ও নিরাপত্তার ঝর্ণা চারিদেকে প্রবাহিত হচ্ছিলো। মানুষ একে অন্যের সাথে খোলাখোলি আলাপ করার সুযোগ পাচ্ছিলো। ইসলাম সম্পর্কে তারা মতবিনিময় ও তর্ক বিতর্ক করছিলো। মক্কায় যেসব লোক গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলো তারাও দ্বীন সম্পর্কে মত বিনিময়ের সুযোগ পেলো। ফলে বহু লোক ইসলামে দীক্ষিত হলো। ইতিপূর্বে বিভিন্ন যু্দ্ধে মুসলমানদের সংখ্যা তিন হাজারের বেশী ছিলো না। অথচ মক্কা বিজয়ের সময় তাদের সংখ্যা ছিলো ১০ হাজার।
এ সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধে লোকদের দৃষ্টি খুলে গেলো। তাদের চোখের ওপর পড়ে থাক সর্বশেষ পর্দাও অপসারিত হলো। দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পথে আর কোন বাধাই রইল না। মক্কা বিজয়ের পর মক্কার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আকাশে মুসলমানদের সূর্য চমকাতে লাগলো। দ্বীনী কর্তৃত্ব দুনিয়াবী অধিপত্য উভয়েই পুরোপুরি মুসলমানদের হাতে এসে গেলো।
হোদয়বিয়ার সন্ধির ফলে মুসলমানদের যে অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো মক্কা বিজয়ের পর তা পূর্ণতা লাভ করলো। পরবর্তী অধ্যায় ছিলো শুধু মুসলমানদের জন্যে এবং পরিস্থিতি ছিলো মুসলমানদের একক নিয়ন্ত্রণে। এরপর আরবদের বিভিন্ন গোত্রের সামনে একটা পথই খোলা ছিলো তারা প্রতিনিধিদলসহ গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করবে এবং দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে।
মোট কথা মক্কা বিজয়ের পরে আরবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার আর কোন শক্তি থাকল না। ব্যপারটা আরবদের জন্য ভাল হলেও দুনিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি ইরানের সম্রাট ও রোমান সম্রাটদের দুশ্চিন্তার কারণ হল। তাদের সীমানায় শক্তিশালী রাষ্ট্রের জন্মকে কেউ ভাল চোখে দেখল না।
তাবুকের পথে আসতে আসতে জায়েদ এসব কথাই ভাবছিল। আরবদের না হত ম্যানেজ করা গেল কিন্তু পরাশক্তি ইরান ও রোমানরা এখন মুসলমানদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেয় তা নিয়ে সে চিন্তায় পড়ে গেল।
জায়েদ-মেহরিনের বিয়ের বয়স পাঁচ মাস হয়ে গেছে। তারা যেহেতু ঘর বাড়ীর বাইরে রয়েছে তাই তাদের কোথাও যাবার তাড়াহুড়া নেই। একেকটা এলাকায় তারা যখন প্রবেশ করে তখন সেই এলাকায় কিছুদিন থাকে। সেই সব এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্য জায়েদের কাছে নতুন কিছুই নয় কিন্তু এসব দৃশ্য মেহরিন খুব পছন্দ করে। ধনীর মেয়ে হবার কারণে এতদিন সে শুধু নির্দিষ্ট এলাকায় ঘুরতে পারত। জায়েদের সাথে পালিয়ে যাবার পরে নতুন জীবনটা তার কাছে উপভোগ্য মনে হচ্ছে। জায়েদ খেয়াল করেছে ইদানিং মেহরিনের শরীর আগের মত চলছে না। সে মেহরিনকে নিয়ে পেরেশান হয়ে পড়ল। মুসাফির অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে বিপদ আছে। মেহরিন জায়েদকে সুখবর দিল- সে সন্তান সম্ভাবা!
এই খবরে জায়েদ যেমন খুশী হল তেমনি পেরেশানিতে পড়ে গেল। তদুম্মাতুল জন্দল থেকে তারা এখনো অনেক দূরে। মেহরিনের যে অবস্থা তাতে এই শরীর নিয়ে যাত্রা করা ঠিক হবে না। জায়েদ সিদ্ধান্ত নিল বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত এই এলাকায় থেকে যাবে। কয়েক দিন সন্ধ্যান করে এক আরব ধনীর ব্যক্তিগত দেহ রক্ষীর চাকরি পেয়ে গেল। এই এলাকাটা অনেকটা শহরের মত। ধনী লোকটি বিরাট ব্যবসায়ী। আরবের সব এলাকায় তার ব্যবসা রয়েছে। জায়েদ শহরের পাশে একটা ঘর তুলে থাকা শুরু করল। কুটিরের মধ্য থেকেও যে মানুষ অনেক সুখে থাকে তা মেহরিন এই প্রথম বুঝল। জায়েদ জানে মেহরিন অনেক ধনীর মেয়ে, তাই সে যাতে কোন কষ্ট না পায় সেদিকে সে খেয়াল রাখল।